ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ক্ষমতায় গেলেও যেন গণমাধ্যমের সঙ্গে সখ্যতা থাকে: সোহরাব হাসান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
ক্ষমতায় গেলেও যেন গণমাধ্যমের সঙ্গে সখ্যতা থাকে: সোহরাব হাসান

ঢাকা: প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেছেন, আমরা চাইব যে, বিরোধী দলে থাকতে গণমাধ্যমের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের যে সখ্য তৈরি হয়, সেটি যাতে ক্ষমতায় যাওয়ার পরও অব্যাহত থাকে।

রোববার (২২মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র হত্যায় গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইন, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সোহরাব হাসান বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ যে ভাষায় কথা বলে, বিএনপির কোনো কোনো নেতা ক্ষমতায় থাকতে কিন্তু একইভাষায় কথা বলতেন। আবার আজকে বিএনপি যে ভাষায় কথা বলে আশা করি আওয়ামী লীগ কোনো না কোনো সময়ে বিরোধী দলে আসবে তখন হয়তো এইভাষায় সংবাদপত্রের বন্ধুত্ব চাইবে, সখ্য চাইবে। সার্বিক গণতান্ত্রিক পরিবেশ যদি আমরা আদায় করতে না পারি তাহলে বিচ্ছিন্নভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।

তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে একটা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে কিছু অঙ্গীকার করা হয়েছে। তাদের অঙ্গীকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে পারি, আশ্বস্ত হওয়ারও চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু আমাদের অতীত আশ্বস্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি নয়, বর্তমান তো নয়ই। স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকারই সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম বান্ধব ছিল না, এখনো নেই। স্বাধীনতার পরে যারাই সরকারে এসেছে- প্রথমে আওয়ামী লীগ সরকার, পরবর্তিকালে বিএনপি, এরপর হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ অথবা জাতীয় পার্টি, পরে আবার বিএনপি, আবার আওয়ামী লীগ, আবার বিএনপি এবং এখন আওয়ামী লীগ। আজকে যখন আমরা বর্তমান সরকারের নিবর্তনমূলক আইন, নিগৃহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অন্যায়-অবিচার এই নিয়ে কথা বলব, অবশ্যই বলব। কারণ আমাদের মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে যেসব বাধা সে বাধাগুলো দুর করতে হবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের যেমন দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব আছে।

বিএনপির আমলে জহুর হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া, একুশে টিভি বন্ধ করে দেওয়া, ভিন্ন মতের পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন কমিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন উদাহরণও তিনি টানেন।

সোহরাব হোসেন বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ যা করছে তার সমালোচনা করবো না, তার সমর্থন করছি সেটিও নয়। অবশ্যই মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে, মত প্রকাশের ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো আছে সেক্ষেত্রে বিরোধী দলের সমর্থন চাই, সহযোগিতা চাই। কিন্তু একসঙ্গে এই সতর্ক বাণী উচ্চারণ করতে চাই, তারা ক্ষমতায় গেলে যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে খুবই নিবর্তনমূলক আইন করেছে। এটি স্বৈরাচারী আইন। এর নিন্দা করি, প্রত্যাহারের দাবি জানাই। কিন্তু আইসিটি আইন যেটি সংশোধন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে, সেই আইনটি কিন্তু প্রথম চালু করা হয়েছিল বিএনপির আমলেই। শাস্তিটা আওয়ামী লীগ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের সরকারি কাঠামোয় আমি জানি না, এটি রাজনৈতিক নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেন নাকি আমাদের প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়। প্রশাসন নিজেকে রক্ষা করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বকে কীভাবে প্রভাবিত করে, কেন প্রভাবিত করে এবং সেটি এখনকার বাস্তব অবস্থায় নিশ্চয়ই আপনারা জানেন। আমরা যে কথাটি বলতে চাই, আমরা যেন সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে পারি, সবসময় বলতে পারি।

তিনি বলেন, আমরা চাই, আপনাদের যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, গণতন্ত্রের পক্ষে আপনাদের লড়াই সেই কথা আমরা তুলে ধরবো। আবার সরকার যদি অন্যায় সিদ্ধান্ত নেয়, স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত নেয়, কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করে বা করে থাকে অবশ্যই তারও প্রতিবাদ করবো।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে যুগান্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক মাহবুব কামাল বলেন, বাংলাদেশের প্রেসের অবস্থা খুবই মারাত্মক। এর কারণটা হচ্ছে উইপেন অব ‘ল অর্থাৎ আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। বাংলাদেশে অসংখ্য আইন আছে যা আমাদের দেশে স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থি.. , প্রত্যেকটি আইন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের জন্য পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে হুমকি স্বরূপ। প্রতিকূল একটা পরিবেশের মধ্যে আমরা এখন আছি। এই প্রতিকূল পরিবেশ থেকে উত্তরণের জন্য সবচাইতে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে- ডিজিটাল সিকিরিটি অ্যাক্টসহ প্রত্যেকটি আইনকে সংশোধন করতে হবে অথবা বাতিল করতে হবে। এদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় যারা ক্ষমতায় থাকবেন তারা যদি গণতান্ত্রিক না হন তাহলে আইন থাকুক বা না থাকুক সেদেশে ফ্রিডম অব প্রেস কখনো প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।

প্রথম আলোর সোহরাব হাসানের দেওয়া বক্তব্য খন্ডন করে বিএফইউজের একাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, সোহরাব ভাই সঠিক তথ্য দেননি। সাংবাদিক জহুর হোসেন কারাগারে যাননি। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর আদালতে আত্মসমপর্ণ করে জামিন নেন। একুশে টিভি বিএনপি সরকার বন্ধ করেনি। এটি টেরিস্টোরিয়াল সম্প্রচারের ইস্যুতে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে বন্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের আমলে সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা দায়েরসহ সারাদেশে সাংবাদিকদের নির্যাতনের চিত্রও তুলে ধরেন বিএফইউজের এই শীর্ষনেতা।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন  সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) জহির উদ্দিন স্বপন।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
এমএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।