ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ঈদ আলো ছড়ায় না ছিন্নমূল মানুষগুলোর জীবনে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২২
ঈদ আলো ছড়ায় না ছিন্নমূল মানুষগুলোর জীবনে ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: সবচেয়ে আনন্দময় ধর্মীয় উৎসব ‘ঈদুল ফিতর’ রাজধানীর অনেক মানুষের জীবনেই নতুন কোনো অর্থ বয়ে আনে না। এ রকম হাজার হাজার মানুষ এবারও ঈদের কোনো ছোঁয়া নিজের জীবনে পায়নি।

করোনা অতিমারিকালে যখন টিকে থাকাই জীবনের প্রধান লড়াই, তখন ঈদের বাড়তি কোনো আয়োজন নেই ছিন্নমূল বা ভাসমান মানুষের জীবনে। জীবনযাত্রায় বিধিনিষেধের কারণে দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকায় সংকটে রয়েছেন নিম্ন আয়ের এসব মানুষ। প্রতিদিনের খাবার জোগানোই যেখানে কষ্টের, সেখানে ঈদের দিনও তাদের কাটছে সাদামাটাভাবেই।

মঙ্গলবার (৩ মে) ঈদের দিনও গোটা রাজধানীতেই বিচ্ছিন্নভাবে এদের দেখা গেছে। এদিন নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজার, গাবতলী, খিলগাঁও, কমলাপুর, চকবাজার, হাইকোর্ট মাজার, পুরানা পল্টন, গুলিস্তান এলাকায় এ ধরনের মানুষকে দল বেঁধে থাকতে দেখা যায়। করোনার এ দুঃসময়ে এসব মানুষ তেমন একটা সাহায্য পাননি। ফলে উৎসবের দিনও হয়ে গেছে বর্ণহীন।

এ বিষয়ে রাজধানীর বিত্তবৈভবের আড়ালে থাকা এসব হতদরিদ্র মানুষরা জানান, প্রতিনিয়তই তাদের ব্যস্ত থাকতে হয় টিকে থাকার সংগ্রামে। আর বড় বড় স্যাররা টাকা দিলেই তা দিয়ে খাবার কিনে খাওয়া।

রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় বৃষ্টির মধ্যেও প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে সবার কাছে সাহায্য চাচ্ছিলেন আকলিমা হোসেন নামে মধ্যবয়সী এক নারী। কথা হলে তিনি বলেন, বড় মেয়েটা প্রতিবন্ধী। ছোট মেয়েটাও অসুস্থ। ওদের বাবা মারা গেছে দুই মাস আগে। তাই এখন সবার সাহায্য নিয়েই চলতে হয়। আমাদের ঈদ এমনই।

রাজধানীর পল্টন মোড়ে ময়লা আর ছেঁড়া কাপড় পরে বসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা আকিমন নেসা। ক্লান্ত, শান্ত, বিষণ্ন মুখ। আকিমন নেসা বলেন, ভিক্ষা করে নিজের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এভাবে কী আর চলে। ঈদের দিনে কিছু সেমাই পাই, ওইগুলাই খাই। এইটাই আমার ঈদ।

জামালপুরের আরজ আলীর (৫৫) সঙ্গে কথা হয় কারওয়ান বাজার রেলস্টেশনের পাশের ফুটপাতে। প্রায় ১০ বছর আগে গ্যাংগ্রিন রোগে আক্রান্ত হয়ে তার বাম পা হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। গ্রামের বাড়িতে পৈত্রিক কয়েক শতক জমি যা ছিল, তাই বেঁচে চিকিৎসা করালেন। কিন্তু পাও চলে গেল, জমিতো আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। চলে এলেন ঢাকা। সেই থেকে ফুটপাতের জীবন। ভিক্ষাবৃত্তি করেই চলছে জীবন। রমজান আর ঈদ মিলিয়ে ভিক্ষা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি পাওয়া যায় বলে জানালেন জামাল আলী। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে অন্য কোনো সহায়তা তিনি পাননি।

অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার সমাজের এ মানুষগুর জীবনেও ঈদ খুব একটা বয়ে আনতে পারে না নিরলস আনন্দ। তবুও অল্পতেই তুষ্ট থাকতে চাওয়া এ মানুষগুলো ঈদ এলে হন উচ্ছ্বসিত, করেন নিজেদের মতো করে আনন্দ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২২
এইচএমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।