ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বাঁশ-বেতের সামগ্রীর দেখা মেলে পোড়াদহ মেলায়

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২
বাঁশ-বেতের সামগ্রীর দেখা মেলে পোড়াদহ মেলায় মেলায় বাঁশের বাহারি পণ্য নিয়ে বসে আছেন এক বিক্রেতা। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী মেলা ‘পোড়াদহ’। প্রায় ৪০০ বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ইছামতির তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়।

বুধবার পোড়াদহ মেলাজুড়ে ছিল হাজারো মানুষের ভিড়। বড়-বড় মাছ, মিষ্টিসহ নানান সামগ্রী নিয়ে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন দোকান।

মেলা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। মেলা মানেই আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠা। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনদের নিমন্ত্রণ জানানো। নিমন্ত্রণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন-পুরনো বিবেচনা করা হয় না। কারণ, মেলা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। সেই ঐতিহ্য ধারণ করে এ এলাকায় সবাই মেতে ওঠেন বাধ ভাঙা উৎসব-উচ্ছ্বাসে। পোড়াদহ মেলা উপলক্ষে এ এলাকায় উৎসবের আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনরা মিলে এ উৎসব করেন। মেলায় বড় বড় মাছ, মিষ্টি, খেলনাসহ বিভিন্ন খাবার ও আসবাপপত্রের দোকান বসে। সরেজমিন দেখা যায়, মেলার পশ্চিম-দক্ষিণ কর্নারে চোখে পড়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যর বাঁশ ও বেতের তৈরি নানান সামগ্রীর পসরা। বাঁশ ও বেতের তৈরি ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের কুলা, চাক ডালা, চাল মাপার কাটা, খৈ চালনা, দাঁড়িপাল্লা, চালুন, মুড়ি চালনাসহ নানান সামগ্রী।

শেরপুর উপজেলার পল্লব আচার্য প্রতিবছর এ মেলায় আসেন। এবারও তিনি বাঁশ ও বেতের তৈরি নানান সামগ্রীর পসরা বসিয়েছেন মেলায়।  

আলাপচারিতায় পল্লব আচার্য বাংলানিউজকে জানান, প্রায় ২৭-২৮ কিলোমিটার পেরিয়ে প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় আসেন তিনি। বাঁশ ও বেতের তৈরি গ্রামীণ সামগ্রী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। আধুনিক যুগে অনেক পরিবর্তন এসছে তবুও বাপ-দাদার শিখিয়ে যাওয়া এ সামগ্রী বানানো ও বিক্রিই তার পেশা। রণঞ্জিত দাস ও মেঘনাতসহ একাধিক বিক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, বিভিন্ন মেলাতে তারা এই সামগ্রীগুলো বিক্রি করেন। অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে তারা এখানে আসেন বেশি বিকিকিনির আশায়। তবে, করোনার কারণে গেল দুই বছরের মতো এ বছরও বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসছে না। শুধু মাত্র মেলাতেই এসব সামগ্রীর মূল্য ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু নিরুপায় হয়ে এখন তারা হাটে-বাজারে এসব বাঁশ ও বেতের তৈরি নানান সামগ্রী বিক্রি করছেন। দূর হলেও এ মেলাতে তারা আসেন কেননা এখানে বিক্রি ভালোই হয়। মেলায় বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রীর কিনতে আসা ক্রেতা জামির উদ্দিন, আবু সালেক বাংলানিউজকে বলেন, মেলা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। মেলা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। বাঁশের কুলা, চাল মাপার কাটা, খৈ-চালনা ঐতিহ্য বহন করে। যেহেতু এগুলো সচরাচর চোখে পড়ে না। তাই পোড়াদহ মেলা থেকে তারা এগুলো সংগ্রহ করছেন।

মেলায় এসব বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রীর দামের কথা জনতে চাইলে বিক্রেতা ধনঞ্জয় বলেন, বাঁশের ও বেতের তৈরি এসব সামগ্রীর মধ্যে বড় কুলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা, চাক ডালা ১৬০ টাকা, দাঁড়িপাল্লা ৬০০-৭০০ টাকা, চাল মাপার কাটা ১০০-১৫০ টাকা, মাঝারি কুলা ৫০ টাকা, খৈ-চালনা ১৩০-১৭০ টাকা।

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ’ মেলায় বাঙালির হাজার বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যবহনকারী বাঁশ ও বেতের তৈরি এ সামগ্রীগুলোর দেখা মিলে প্রতি বছরই। এখানে বিক্রেতারা তাদের আশানুরুপ দামটাও পেয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন>>

**পোড়াদহ মেলায় চলছে মন মাতানো হোন্ডা খেলা

** পোড়াদহ মেলায় সকালেই ৮ কোটি টাকার মাছ বিক্রি

**পোড়াদহ মেলায় ২০ কেজির কাতলা-ব্ল্যাক কার্প সেরা!

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।