ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

তীররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু, স্বস্তিতে মেঘনা পাড়ের বাসিন্দারা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২২
তীররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু, স্বস্তিতে মেঘনা পাড়ের বাসিন্দারা  বাঁধের কাজের উদ্বোধন। ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: মেঘনা নদীর তীর থেকে মো. ছিদ্দিক উল্যার বাড়ি প্রায় আধা কিলোমিটার দূরত্বে। প্রতিনিয়ত সর্বনাশী মেঘনা তাকে চোখ রাঙাচ্ছে বসতভিটা কেড়ে নিতে।

আস্তে আস্তে নদী ধেয়ে আসছে তাকে বাস্তুহারা করতে। তীররক্ষা বাঁধই পারে তার বসতভিটা রক্ষা করতে। তাই তিনি বাঁধের আশায় বুক বাঁধছেন। কারণ মেঘনা নদীর তীররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে।  

রোববার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে বাঁধের কাজের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপি।  

বাঁধের কাজ শুরু হওয়ায় নদীর তীরবর্তী বাসিন্দা ছিদ্দিক উল্যার মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে। সময় মতো বাঁধটি তৈরি হলে তার বসতভিটা রক্ষা পাবে। ছিদ্দিক উল্যার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরজগবন্ধু গ্রামে।  

একই এলাকার রুহুল আমিন, ছানা উল্যা ও সফিক উল্যার বাড়ি নদীর তীরবর্তী এলাকাতে। তীররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হওয়ায় তারাও বসতবাড়ি রক্ষায় আশায় বুক বেঁধেছেন। অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তারা।  

তারা বলেন, আগে ভাঙন রোধে অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। সঠিক পরিকল্পনা এবং সুষ্ঠুভাবে কাজ না হওয়ায় ভাঙন রোধ করা যায়নি।  

তাদের দাবি, মজবুত এবং ঠেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হলে আমাদের বসতবাড়ি, ফসলি জমি এবং সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা রক্ষা পাবে।  

তারা বলেন, সরকার আমাদের জন্য বাঁধ নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। বরাদ্দের অর্থ যেন সঠিকভাবে কাজে লাগে। এ ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি যেন না হয়। সরকারের পক্ষ থেকে নির্মাণ কাজ যেন তদারকি করা হয়। তাহলে টেকসই বাঁধ নির্মাণ হবে এবং আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নও পূরণ হবে।  

উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের লুধুয়া একালার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় দুই বছর আগে আমাদের বসতবাড়ি মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের বাড়ি থেকে নদী ভাঙতে ভাঙতে দুই কিলোমিটার পূর্বে চলে এসেছে। বসতবাড়ি হারিয়ে আমরা এখন ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছি। নদীর তীররক্ষা বাঁধ হবে। বাঁধটি যেন টেকসই হয়। তাহলে আমাদের মতো আর কাউকে বসতভিটা হারাতে হবে না।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ৩০ বছরে মেঘনা নদীর ধারাবাহিক ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রায় ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক বাসিন্দা।  

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ‘মেঘনা নদীর বড়খেরী, লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপন্ডিতেরহাট বাজার’ তীররক্ষা প্রকল্প নামের ৩৩.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি ২০২১ সালের ১ জুন পাস করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

গত বছরের ১৭ আগস্ট ই-জিপি টেন্ডার পোর্টাল এবং ১৮ আগস্ট পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। টেন্ডার অনুসারে প্রায় শতাধিক লটের মাধ্যমে মোট ৩ হাজার ৪০০ মিটার কাজ হবে। রোববার (৯ জানুয়ারি) দুটি লটের কাজ উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী।

তবে উপকূলীয় বাসিন্দাসহ লক্ষ্মীপুরবাসীর দাবি ছিল- ঠিকাদারের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ না করে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাঁধটি নির্মাণ করার। এজন্য বিভিন্ন সময়ে তারা আন্দোলন এবং মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।