ঢাকা, শুক্রবার, ২১ ভাদ্র ১৪৩২, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

ফাতেমা পারুলের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন লামার নারীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৫১, জানুয়ারি ১৫, ২০২০
ফাতেমা পারুলের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন লামার নারীরা

বান্দরবান: প্রশিক্ষণ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বান্দরবানের লামা উপজেলার বাসিন্দা মুক্তা বেগম, রুনা আক্তার, নুর জাহান আক্তার, ফাতেমা আক্তার, জাহেদা বেগম এবং কলেজছাত্রী কোহিনুর আক্তারসহ আরও কয়েকশ নারী।

তাদের এ স্বপ্ন যাত্রার পথ পরিক্রমায় সামনে রয়েছে ফাতেমা পারুল নামে এক সফল নারী। তিনি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও বান্দরবানের লামা উপজেলার ‘নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতি’র নির্বাহী পরিচালক।

 

লামা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সবুজ বেষ্টিত ছোট্ট টিলায় দ্বিতল একটি পাকা ভবনে লামা ‘নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতি’র অফিস তৈরি করে তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন নারীদের প্রশিক্ষিত করতে। এখানে প্রতিদিনই স্বপ্ন বুনে চলেছেন একঝাঁক নারী। গৃহকোণে আবদ্ধ থেকে নানান বঞ্চনার শিকার হতে চায় না তারা। এদের অনেকেই স্বপ্ন দেখেন, সমাজকেও স্বপ্ন দেখান। তাদের শ্রম আর নিখুঁত শিল্প বিন্যাসে তৈরি হয় নানান ধরনের সৌখিন ও নিত্যপণ্য।

নব জাগরণ সমিতির সদস্য ও শিক্ষার্থীদের উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে নকশীকাঁথা, বুটিক শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, পুতির তৈরি শো-পিস পুতুল, ফুলের টব, ঝাড়বাতি ইত্যাদি। হাতে তৈরি এসব পণ্যের টেকসই ও গুণগত মানও ভালো। উৎপাদিত এসব পণ্য বিপণনে পরিকল্পিত একটি সিদ্ধান্তের কথা জানান নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল।  ফাতেমা পারুলের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন লামার নারীরা

তিনি বলেন, মেয়েদের নিখুঁত আন্তরিকতায় সৃষ্ট এসব সৌখিন-নিত্যপণ্য বাজারজাতকরণের নিশ্চয়তা রয়েছে।
 
২০১৭ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা কন্যা সংগ্রামী এই নারী বলেন, বান্দরবান জেলার মেঘলায়ে নর্বনির্মিত জয়িতা ভবনের স্টলে এসব পণ্য বিক্রি হবে, এছাড়া এসব পণ্য বিপণনে লামা পৌর শহরে শো-রুম নেওয়ার আশাও রয়েছে।  

ফাতেমা পারুল আরও বলেন, সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকলে লামার নারীরা আর ঘরে বসে থাকবে না, তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।  

লামা নব জাগরণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল বাংলানিউজকে বলেন, স্বল্প শিক্ষিত নারীরা সংসার জীবনে স্বামীর আয়ের ওপর নির্ভর করে বসে থাকেন। কিছু নারী স্বামীদের উপার্জনের ওপর নির্ভর থাকায় সংসার জীবনে বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিক্ষার হন, তাই প্রতিটি নারীকে কর্মমুখী করে তুলতে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। লামা উপজেলায় এই নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতি সৃষ্টির পর এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে এ পর্যন্ত কয়েকশ নারী স্বাবলম্বী এবং তারা ব্যক্তি জীবনে স্বচ্ছল।

সাম্প্রতিককালে নারীদের তৈরি এসব শো-পিস পণ্য ক্রয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। ক্রেতাদের আগ্রহের ফলে সৌখিন এসব পণ্য ক্রয়ে লামা নব জাগরণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের নারীবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তব প্রয়োগের ফলে স্বনির্ভর হতে নারীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছেন তিনি। তার প্রচেষ্টা চোখে পড়ার মতো।  

কথা হয় লামা নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতির সদস্য নুর জাহান আক্তারে সঙ্গে।

তিনি জানান, লামা নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল এই কর্মযজ্ঞে এক অনুপ্রেরণা। উনার উদ্যোগে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কারিগরি দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা-দায়িত্ববোধ জাগ্রত হচ্ছে নারীদের।

সমিতির সদস্য জাহেদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামে বাল্যবিয়ে, যৌতুক রোধ, পারিবারিক কলহ বন্ধ-সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায়ও কাজ করছেন এই গর্বিত নারী ফাতেমা পারুল। বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপন, শো-পিস স্টল প্রদর্শন, র‌্যালি, সভা-সমাবেশে তিনি কাজ করেন অক্লান্তভাবে। আর তারই অনুপ্রেরণায় দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন লামা নব জাগরণ সমিতির সদস্যরা।

ফাতেমা পারুলের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন লামার নারীরা

এদিকে লামা নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতির কার্যালয়ে সম্প্রতি প্রশিক্ষণ শেষ করা প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের দুই মাসের ভাতা তুলে দেন বান্দরবান কুটির শিল্পের হিসাবরক্ষক মো. অজিউল্যাহ।  

এসময় সমন্বয় কর্মকর্তা মো. আবদুল কাদের ভূঁইয়া, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও লামার নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুলসহ সমিতির বিভিন্ন সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সেলাই ও পুতির কাজ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩৬ জনকে দুই মাসের প্রশিক্ষণ বাবদ জনপ্রতি দুই হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয় এবং জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রশিক্ষণের জন্য নতুন নারী সদস্য নির্বাচন করা হয়।

বিগত সময়ে এই সফল নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা পারুলের হাত ধরে লামা উপজেলার ৬শ নারী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পেয়েছে এবং তারা স্বাবলম্বী হয়ে সংসার জীবনে এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।