ঢাকা, রবিবার, ৫ আশ্বিন ১৪৩২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

তামাকমুক্ত প্রজন্ম গড়তে আইন শক্তিশালীকরণের তাগিদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৩২, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫
তামাকমুক্ত প্রজন্ম গড়তে আইন শক্তিশালীকরণের তাগিদ

ঢাকা: তামাকমুক্ত প্রজন্ম গড়তে আইন শক্তিশালীকরণের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।  

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ‘তামাকমুক্ত প্রজন্ম: আইন শক্তিশালীকরণে নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে থেকে বিশেষজ্ঞরা এ তাগিদ দেন।

বৈঠকে বলা হয়, তামাক বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে একটি বাধা হিসেবে কাজ করছে। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবচেয়ে বড় বাধা তামাক। দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশই ঘটে হৃদরোগ, ক্যানসারসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে, যার অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ মারা যায় তামাকের কারণে। এ ব্যাপক মৃত্যু হ্রাস, এসডিজি অর্জন এবং তামাকমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়তে আইন শক্তিশালীকরণের কোনো বিকল্প নেই।  

গোলটেবিল বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশে ১৫ বছর থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে তামাকের ছোবল থেকে সুরক্ষার জন্য তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত একটি শক্তিশালী আইন এবং এর কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি।

বৈঠকে বক্তারা আরও বলেন, সুস্বাস্থ্য, দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি, মানসম্মত শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, পরিবেশ ও জলবায়ু সংরক্ষণসহ এসডিজির প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনে তামাক বাধা হিসেবে কাজ করছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে অন্তরায়। তামাকের সার্বিক ক্ষতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০২১ সালে এফসিটিসি-এর আলোকে আইন শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন উপদেষ্টা কমিটি খসড়া সংশোধনীতে প্রয়োজনীয় পরিমার্জনের কাজ করছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো অব্যাহতভাবে আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে।

তামাক কোম্পানির কোনো অপতৎপরতায় বিভ্রান্ত না হয়ে খসড়া সংশোধনীটি দ্রুত পাস করার দাবি জানান বক্তারা।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, তামাকের ক্ষতি বহুমাত্রিক। বর্তমান সরকার অনেক রিফর্ম করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কার করলে এটা হবে সরকারের জন্য একটি সিগনেচার রিফর্ম।

তামাক ব্যবহারের ফলে ক্যানসারে আক্রান্ত ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা বিনিময় পর্বটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক।

তিনি বলেন, আমরা ভুক্তভোগীদের আর্তনাদ শুনলাম। এ ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আমরা আর শুনতে চাই না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুরক্ষায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে খসড়া সংশোধনীটি পাস করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, অসংক্রামক রোগের প্রকোপ মোকাবিলায় শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কোনো বিকল্প নেই, খসড়া সংশোধনীটি দ্রুত পাসের দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের বলেন, আইন সংশোধনে গণমাধ্যম শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে, এটা অব্যাহত রাখতে হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, আইন সংশোধনের সঙ্গে রাজস্ব কমার কোনো সর্ম্পক নেই। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে আইনটি দ্রুত পাস করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. অনুপম হোসেন বলেন, ই-সিগারেট বা ভেপিং পণ্য তামাকের মতোই ক্ষতিকর। এসব পণ্য সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আত্মার কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন ও প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনীতে সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার বিধান বিলুপ্তকরণ, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধকরণ, খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ, ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এ ধরনের সব পণ্য উৎপাদন, আমদানি ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করাসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।  

আরকেআর/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।