ঢাকা: বাংলাদেশে রুফটপ সোলারের (ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ) বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এর বাস্তবায়ন মূলত অর্থায়নের অভাবেই থমকে আছে। সীমিত প্রণোদনা থাকলেও তা কার্যকর ফল দিচ্ছে না।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ‘সোলার রুফটপ ফাইন্যান্স উন্মোচন: একটি টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যতের পথে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য উঠে আসে। বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউএবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরইএ) এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিএসআরইএ-এর সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-গভর্নর নূরুন নাহার।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক (সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট) খোন্দকার মোরশেদ মিল্লাত।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগ, স্রেডা, ইডকল, বিভিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা, বাণিজ্যিক ব্যাংক, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই), উন্নয়ন অর্থায়ন সংস্থা (ডিএফআই), উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, ইডকল ইতোমধ্যে অফ-গ্রিড সৌরবিদ্যুৎ ও বড় প্রকল্পে সফলতা দেখিয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলো লিজিং, প্রজেক্ট ফাইন্যান্সিং, পে-অ্যাজ-ইউ-সেভ মডেল ও গ্রিন বন্ডের মতো নতুন আর্থিক পণ্য চালু করলে বিনিয়োগ ঝুঁকি কমবে এবং টেকসই মুনাফা নিশ্চিত হবে। তা না হলে ২০৪০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।
বক্তারা আরও বলেন, বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মাত্র ৫.৬ শতাংশ বিদ্যুৎ আসছে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। সরকারি প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানার ছাদগুলো সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশাল সম্ভাবনার ক্ষেত্র, যা এখনো কাজে লাগানো হয়নি। বড় বাধা অর্থায়ন এবং দীর্ঘসূত্রতা। বিশেষ করে নেট মিটারিংয়ের অনুমোদন প্রক্রিয়া অনেক সময়সাপেক্ষ।
বক্তৃতায় বিএসআরইএ-এর সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ এখন সবচেয়ে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য, টেকসই এবং কার্যকর সমাধান। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ও সাশ্রয়ী অর্থায়নের সুযোগ সীমিত। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে গ্রিন ফাইন্যান্সের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করেছে, কিন্তু এখন সময় এসেছে আরও এক ধাপ এগোনোর। পুনঃঅর্থায়ন তহবিল বিস্তৃত করা, ঝুঁকি গ্যারান্টি এবং ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স চালুর আহ্বান জানান তিনি।
সেমিনারে আরও বলা হয়, রুফটপ সোলার কর্মসূচি সফল করতে বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্রেডাকে নীতিমালাকে আরও স্বচ্ছ ও বেসরকারিখাতবান্ধব করতে হবে। ইউটিলিটি কোম্পানিগুলোকে গ্রিড সংযোগ ও নেট মিটারিং সহজ করতে হবে। উন্নয়ন সহযোগীদেরও ঝুঁকি গ্যারান্টি ও বৈশ্বিক মডেল নিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে। সব পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ হতে পারে দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির নতুন সীমান্ত।
আরকেআর/এসআইএস