ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ২৯ আগস্ট ২০২৫, ০৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

মুনিয়ার মৃত্যুতে তৌহিদ আফ্রিদির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলছে

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:১৬, আগস্ট ২৮, ২০২৫
মুনিয়ার মৃত্যুতে তৌহিদ আফ্রিদির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলছে তৌহিদ আফ্রিদি

বিতর্কিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির কল রেকর্ডে মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তৌহিদ আফ্রিদির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলছে। কীভাবে বসুন্ধরা গ্রুপ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে, তাও বেরিয়ে আসছে ওই কল রেকর্ড থেকে।

'ক্রাইম এডিশন' একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি ও তার বাবা নাসির উদ্দিন সাথীর দীর্ঘদিনের প্রতারণা, নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ রয়েছে। প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে—ইউটিউবার ও ব্লগারদের আওয়ামী লীগের পক্ষে জোরপূর্বক কনটেন্ট বানানোর নানা গল্প।  

আর সেই ভিডিওতেই বেরিয়ে এসেছে মুনিয়ার সঙ্গে তৌহিদ আফ্রিদির সম্পর্ক এবং তার মৃত্যুর পেছনে আফ্রিদির জড়িত থাকার ক্লু। এদিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে, বরিশাল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির কাছ থেকে কিছু ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে এবং সেগুলো ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে।

অথচ চার বছরের বেশি সময়ে বহু জল ঘোলা হয়েছে। দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে হয়েছে দুটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। দুটি মামলাতেই তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তদুপরি ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। নানা ষড়যন্ত্র, হয়রানি, বুলিংসহ হয়েছে মিডিয়া ট্রায়াল।  

তবে এবার বেরিয়ে আসছে আসল সত্যটা। মুনিয়ার পেছনে ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদিই যে মূল খলনায়ক, তার প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। অথচ ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশিদ ও তৌহিদ আফ্রিদি গংরা সেই মৃত্যুর দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের ওপর।

গোয়েন্দা বিভাগ ডিবির সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনকে অনেকেই মনে করতেন বাংলাদেশের তৃতীয় শক্তিধর ব্যক্তি। শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি তারপরে তিনি। এভাবেই দাপট নিয়ে চলতেন তিনি। মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে অনুমতি ছাড়া কারো ঢোকার নিয়ম নেই।  গণমাধ্যমও ঢুকতে হলে বারবার অনুমতি অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হয়। অথচ সেই আফ্রিদিকে দেখতাম, ডিবিতে হুরহুর করে ঢুকছে আবার বেরিয়ে যাচ্ছে। মোটামুটি সবাই তাকে চিনতো, জানতো সে ডিবি প্রধান হারুনের আত্মীয়।  

তিনি বলেন, ডিবির কাজ হলো বিশাল। এক মুহূর্ত বসে আড্ডা মারার সময় নেই। অনেক মামলা অনেক ক্রাইম অথচ এই হারুন তাকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টার আলাপ করতো। অনেক নারীও তার কাছে আসতেন। আমাদের সাহস ছিল না জিজ্ঞেস করার, কেন যাচ্ছেন, কিসের জন্য যাচ্ছেন। একে তো হারুন আমার স্যার ছিলেন। এ ছাড়া আমরা এটাও শুনতাম হারুন ছিলেন দেশের তৃতীয় শক্তিধারী ব্যক্তি। আমি নিজে দেখেছি অনেক সময় ওনার ঊর্ধ্বতন বহু কর্মকর্তা ফোন দিলেও ধরতেন না। মাঝে মাঝে পাত্তাও দিতেন না।

ছোটবেলা থেকেই উচ্চাভিলাসী জীবন-যাপন করতেন তৌহিদ আফ্রিদি। মাদক-নারী এগুলো ছিল তার নিত্যসঙ্গী। যে নারীরা তার শিকারে পরিণত হয়েছিলেন, তার মধ্যে মুনিয়াও একজন। মুনিয়ার সঙ্গে যে কথোপকথনের অডিও এসেছে, তাতে পরিষ্কার, তার হাতে অনেক নারী নিগৃহীত হয়েছেন। সেরকম এক তরুণীকে হুমকি দিয়ে আফ্রিদি বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর পরিণতিও হবে মুনিয়ার মতো।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওই নারীর অভিযোগের সূত্র ধরে কিছু ফোন রেকর্ড হাতে আসে। যেখানে মুনিয়ার বাসায় আফ্রিদির যাতায়াত এবং ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ মেলে। মুনিয়ার সঙ্গে আফ্রিদির সম্পর্ক এবং তরুণীর সাক্ষ্য মিলিয়ে দেখলে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে যায়। অর্থাৎ আফ্রিদিই যে মুনিয়ার মৃত্যুর পেছনে মূল হোতা, তা পরিষ্কার।

২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাতে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ২১ বছর বয়সী মোশারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন গুলশান থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত।  

মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করে গুলশান থানা পুলিশ। ওই বছরের ১৮ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী বসুন্ধরা এমডিকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

কিন্তু একই ঘটনায় ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে ফের ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ দিয়ে বসুন্ধরা এমডির বিরুদ্ধে আরও একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ডের আদেশ দিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।

১৩ মাস তদন্ত করে ‍পিবিআইও ঘটনার বিষয়ে কোনো সত্যতা না পাওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিসহ আটজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে। বাদী প্রতিবেদনের বিষয়ে নারাজি দেয়। তবে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক শওকত আলী নারাজি নামঞ্জুর করে ২০২৪ সালের ২০ মার্চ তাদের এই মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন।  

আদালতের এই আদেশের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো নির্দোষ প্রমাণিত হন বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর। তদুপরি একটি চক্র এই মামলাটি পুনঃতদন্তের মাধ্যমে দেশের শীর্ষ এই ব্যবসায়ীকে ফাঁসানোর হীন চেষ্টা করছে।

এর মধ্যেই চাঞ্চল্যকর মুনিয়া হত্যার ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। গত রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় বরিশাল থেকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির একটি টিম।

গ্রেপ্তারের পর তৌহিদ আফ্রিদিকে নিয়ে আসা হয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় ২৫ আগস্ট তৌহিদ আফ্রিদির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। বর্তমানে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।  

বুধবার পুলিশের অপরাধ বিভাগ (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার, জসীম উদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেপ্তার তৌহিদ আফ্রিদির কাছ থেকে কিছু ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ পাঠানো হয়েছে।

এজেডএস/কেআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।