বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে দেশের উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে দেশের সকল স্থানের পাশাপাশি ঢাকায় অঝোরে ঝরছে বৃষ্টি।
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির গতিও বাড়তে থাকে। সকালেই অলিগলিতে পানি জমে যায়। স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বৃষ্টির কারণে যানবাহনের সংখ্যাও কম দেখা গেছে আজ। যে কারণে সকাল থেকেই অফিসগামী মানুষজনও পড়েন চরম বিপাকে ও ভোগান্তিতে। অবশ্য বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রতিদিনের মতো অফিসগামীর সংখ্যা আজ তেমন দেখা যায়নি।
এদিকে দৈনিক আয় করা মানুষদের কষ্টের সীমা ছিল না আজ। ভ্যানে সবজিবিক্রেতা, ঝালমুড়ি, ফুচকাওয়ালাসহ ফেরিওয়ালাদের অনেকে তাদের ব্যবসাই খুলে বসতে পারেননি।
আশার কথা হলো ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুম বলছে, সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়ায় বিকেল পর্যন্ত ঢাকার কোথাও থেকে কোনো দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, সেটা এখনো চলমান। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে রাজধানীতে তেমন কোনো দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায় নাই। শুধু উত্তরায় ট্রান্সফরমারে আগুনের সংবাদ ছিল সেটাও তেমন কিছু না। পাশাপাশি মিরপুর এলাকায় একটি লিফটে গোলযোগের সংবাদ পাওয়া গেছে।
এদিকে সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে রাজধানীর অনেক জায়গায় অলিতে-গলিতে পানি জমে যায়। এই সময় সড়কে চলাচলকারীদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রামপুরা, পূর্ব রামপুরা, খিলগাঁও, সিপাহীবাগ বাজার, গোড়ান নববী মোর, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া ও পুরান ঢাকা এলাকার অনেক গলিতে পানি জমতে দেখা গেছে। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমার সংবাদ পাওয়া গেছে। ম্যারাথন বৃষ্টির কারণে পানি নেমে যাওয়ার সুযোগই মিলছে না।
টানা বর্ষণে রাজধানীর অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মিরপুর ১০ নম্বর ও এর আশপাশের এলাকার বেশিরভাগ সড়কে এখন পানি থই থই করছে।
নাসির আহমেদ নিলন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ভোর থেকে বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছি। সকালে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমতে দেখা যায়। সেটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বিকেলে পানি না কমে উল্টো তা হাঁটু পর্যন্ত হয়ে যায়। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে ছেলেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া ফয়জুর রহমান স্কুল থেকে বাসায় নেওয়ার পথে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে। স্কুলের গলিতে হাঁটুপানি,তাও ড্রেনের সঙ্গে মিশে একাকার। এমন দুর্গন্ধযুক্ত দূষিত পানি মাড়িয়েই বাচ্চাকে স্কুল থেকে বের করে পরে রিকশা নিতে হয়েছে। ছাতা থাকার পরও অবিরাম বর্ষণে ভিজে গেছি।
সৈয়দ মো. ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি বলেন, বনশ্রী থেকে পূর্বাচলে গিয়েছিল ব্যক্তিগত কাজে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কয়েকটি জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। বেশ ভোগান্তি সহ্য করে বাসায় পৌঁছাই।
তিনি বলেন, অবশ্য এই বৃষ্টিতে কি আর সাধারণ দিন কি ঢাকা শহরে চলাযই এখন মুশকিল। যখনই বের হই তখনই যানজটে পড়ি। আজ অবশ্য সামান্য যানজট ছিল তবে উল্লেখযোগ্য না।
এদিকে ধানমন্ডি থেকে মো. মাসুম জানান, বৈরী আবহাওয়ার হওয়ার কারণে দুপুরের পর বাসা থেকে বেরিয়ে ছিলাম ছাতা নিয়ে। কিন্তু যেভাবে বৃষ্টি পড়ছিল ছাতায় কোনো কাজ হয়নি; সম্পূর্ণ ভিজে গেছি। এই মুষলধারের বৃষ্টি ছাতা দিয়ে রেহাই মেলে না।
এদিকে সন্ধ্যার পর মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় দেখা যায়, এখানকার মূল সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও তারও বেশি জলাবদ্ধতা দেখা যায়। এ কারণে ছোট গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যানবাহনও ধীরগতিতে চলে, ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার দিকে মেট্রোরেল থেকে যে যাত্রীরা নামছিলেন, তাদের পানিতে পা ডুবিয়েই গন্তব্যের দিকে হাঁটতে দেখা যায়।
মতিঝিল থেকে অফিস করে মিরপুরের বাসায় ফিরছিলেন মোহাম্মদ ইসহাক আলী (৫০)। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সকালে ভিজতে ভিজতে অফিসে গিয়েছিলাম। আর এখন বন্যায় ভাসতে ভাসতে বাসায় ফিরছি।
মিরপুর ১৩ নম্বর এলাকার এ বাসিন্দা বলেন, একটু বৃষ্টি হলে এই এলাকা এভাবেই ভাসতে থাকে। এর কোনো সমাধান আছে কি না কর্তৃপক্ষ ভালো জানে। এ ব্যাপারে আমাদের আর কথা বলতে ইচ্ছা হয় না। কপালে দুর্ভোগ আছে, সেটাই সারা বছর পোহাতে হচ্ছে।
মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ওবায়দুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমি বিগত ১২ বছর যাবত মিরপুর এই এলাকায় বসবাস করি। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটু দেখলাম না যে বৃষ্টির পরে আমরা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি। একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের আর বাসা থেকে বের হওয়া যায় না, কর্মস্থলেও যেতে পারি না। এ সমস্যার সমাধান কবে কে করবে? আর কতদিন আমাদের এই জলাবদ্ধতায় ভুগতে হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি স্থলভাগে উঠে এসেছে। ফলে রাতভর ৪৫ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে সারা দেশে। এরপর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাবে। ঝড়ের আশঙ্কায় দেশের সব নদীবন্দরে তোলা হয়েছে সতর্কতা সংকেত। এছাড়া সমুদ্রবন্দরগুলোতেও বহাল রাখা হয়েছে তিন নম্বর সংকেত।
সন্ধ্যার সময় গভীর নিম্নচাপটি বর্তমানে সাতক্ষীরা অঞ্চলে অবস্থান করছিল বলে জানা গিয়েছিল। এটি আরও উত্তর অথবা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যাবে। তবে নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ও চরাঞ্চলে তিন ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এজেডএস/জিএমএম/এসএএইচ