ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

লক্ষণ সেনের মতো দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা: ডা. শফিকুর রহমান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪
লক্ষণ সেনের মতো দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা: ডা. শফিকুর রহমান

টাঙ্গাইল: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমীর ডা.শফিকুর রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ, তিনি যেটা কালিমা হিসেবে জাতির কপালে লিখে দিতে চেয়েছিলেন। জাতি এটা তার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

এমন রাজনীতি করলেন, বললেন উন্নয়নের রাজপথে দেশকে উঠিয়ে দিয়েছেন। বললেন বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এমন বানালেন, আর এমন রাজপথ তৈরি করলেন, গাড়িটা রাজপথ দিয়ে চালিয়ে আপনি যেতে পারলেন না। এমন রাজনীতি করলেন আপনাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হলো। সাড়ে ৮০০ বছর আগে লক্ষণ সেন গিয়েছিল, আর আপনি গেলেন তার পরে।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের মাগফেরাত ও আহত এবং শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের চরিত্রে কালিমা লেপন করা হয়েছে। আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদির মতো মানুষকে বলা হয়েছে তিনি ধর্ষক। তিনি খুনি, তিনি লুটেরাজ, তিনি অগ্নিসংযোগকারী। সময় বদলায়, পরিবেশ বদলায়। সত্যকে চাপা দিয়ে রাখা যায় না। সত্য মাটির নিচ থেকে উঠে আসে। এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর, নির্যাতন করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের ওপর, নির্যাতন করা হয়েছে গণঅধিকার পরিষদের ওপর, নির্যাতন করা হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। হত্যা করা হয়েছে সাংবাদিক বন্ধুদের। কালো আইনে টেনে হিঁচড়ে নেওয়া হয়েছে তাদের জেলে। তারা কাউকে বাদ দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে হাজার খানেকের মতো আমাদের কলিজার টুকরারা জীবন দিয়েছেন। এখানে কোনো দলমত নাই। এখানে কোনো ধর্ম নাই। এখানে সব ধর্মের মানুষ অংশ গ্রহণ করেছেন, সব ধর্মের মানুষই মারা গিয়েছেন। নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে। শহীদদের আমরা কোনো দলের সম্পত্তি বানাতে চাই না। এ শহীদরা জাতির সম্পদ, এ শহীদরা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। এ শহীদরা আজীবন জাতীয় বীর। আমরা তাদের সেই মর্যাদায় দেখতে চাই। যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের নিয়ে কোনো দল যেন ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা না করি। এটা আমাদের সবার ত্যাগের ফসল। তাহলে সবার প্রতি সম্মান দেখানো হবে।

জামায়াতে ইসলামী আমীর শফিকুর রহমান বলেন, আহতদের পাশে যাবেন। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আমরা চেষ্টা করছি, যাদের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, তাদের একটু উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। দুই একটা দেশের সঙ্গে আমরা আলাপ আলোচনা করেছি। তারা আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা যদি একটু এগিয়ে আসে, এসব দুঃখী মানুষের বিরাট উপকার হবে। যারা এগিয়ে আসবেন, তাদের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে আমরা কবুল করবো।

তিনি বলেন, ১৭ বছর ছয় মাস এ জাতি বন্ধিত্বের কাছে বাঁধা ছিল। মুখে ছিল তালা, হাতে ছিল হ্যান্ডকাফ, পায়ে ছিল বেরি। এ দেশের ১৫ কোটি মানুষ ছিল মজলুম। রাস্তায় যে ভাই বা বোন ভিক্ষা করতেন তিনিও ছিলেন মজলুম। বিগত সরকারের সময় ভিক্ষুকদেরও চাঁদা দিতে হতো। প্রত্যেকটি মানুষই ছিল জুলুমের শিকার।

শফিকুর রহমান বলেন, শহীদ নিজামী বলেছিলেন, আমার রক্ত বাংলাদেশে কথা বলবে। আমার রক্ত বাংলাদেশের পরিবর্তনের সূচনা করবে। সাড়ে ১৫ বছর এরা জাতির ওপর স্টিমরোলার চালিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আঘাত দিয়েছেন জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের ওপর। আমাদের মতো মজলুম সংগঠন আর কেউ না। আর কারো এতোগুলো নেতাকে হত্যা করা হয়নি। আর কারো বাড়ি ঘর বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয়নি। আর কারো বাড়ি ঘরে আগুন ও লুটপাট করা হয়নি। আমাদের পর্দাশীল মা বোনদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের নির্যাতন নিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, যে সাংবাদিক ভাই বিদেশে বসে অন্যায়, জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন দেশে তার পরিবারের কোনো বোনকে টেনে নিয়ে টানা হেঁচড়া করা হয়েছে। কোনো ভাই ফেসবুকে কিছু লিখলে, আজরাইল রূপি ডিবি তার ঘরে গিয়েছে। তাদের হেনস্তা করা হয়েছে।

জেলা জামায়াতে ইসলামের আমীর আহসান হাবিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ মো. ইজ্জত উল্লাহ ও ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী।

এতে বক্তব্য রাখেন ধনবাড়ীর নিহত একরামুল হক সাজিদের বাবা জিয়াউল হক, সৈয়দা আক্তার, জেলা বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনকারী মনিরুল ইসলাম, জেলা শিবিরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মতিউল্লাহ, শহর শিবির সভাপতি মামুন আব্দুল্লাহ প্রমুখ।

এ সময় বিভিন্ন উপজেলা জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। শেষে শহীদ আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. মো. শফিকুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।