ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিশাল আকৃতির ৩ কোরবানির পশু আলোড়ন তুলেছে পাবনার রাজুর খামারে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
বিশাল আকৃতির ৩ কোরবানির পশু আলোড়ন তুলেছে পাবনার রাজুর খামারে

পাবনা: পাবনা সদরের জালালপুর বাজার সংলগ্ন বাকচীপাড়া এলাকায় এম আর অ্যাগ্রো নামে তরুণ উদ্যোক্তা রাজুর গরুর খামারে বিশাল আকৃতির তিনটি কোরবানির পশু জেলাতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে সেই পশু দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারাও আসা শুরু করেছেন।

রাজু তার খামারের বড় তিনতি গরুর মধ্যে হলেস্টিন ফিজিয়াম জাতের কালো রঙেরটির নাম দিয়েছেন কালা পাহাড়, ব্রাহামা ক্রস লাল রঙের গরুর নাম দিয়েছেন লালা পাহাড়, আর ফিজিয়াম জাতের কালো-সাদা মিশ্রিত রঙের গরুর নাম দিয়েছেন পাবনার রাজা। এই তিনটি দৃষ্টিনন্দন বিশাল আকৃতি গরু ছাড়াও তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে আরও প্রায় ৩০টি কোরবানির পশু প্রস্তুত আছে।

শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরির পিছনে না ছুটে নিজ উদ্যোগে গ্রামের পৈত্রিক জায়গায় গরুর খামারের কার্যক্রম শুরু করেন রাজু। ২০১০ সালে ছোট পরিসরে করা এ খামারে ১০টি গরু দিয়ে শুরু করে এখন তার সংগ্রহে সবসময় ২০ থেকে ৩০টি পশু থাকে। রোজা ও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উন্নত জাতের ষাঁড় গরু সংগ্রহ করেন তিনি। আর পরে নিজের খামারে সেগুলো এনে যত্ন নিয়ে আরও হুষ্ঠপুষ্ট করে তোলেন।

কোনো প্রকার বাইরের খাবার না দিয়ে নিজেদের তৈরি মিশ্রিত খাবার আর কাঁচা ঘাস দেওয়া হয় রাজুর খামারে। বেশ কয়েক বছর ধরে পাবনা জেলাসহ দেশের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিশাল আকৃতির পশু পাওয়া যায় তার খামারে। বিগত দিনগুলিত যে কয়টি কোরবানির পশুর নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, তার মধ্যে রাজুর খামারের পশুর নাম অন্যতম। এর মধ্যে পাবনার বাদশা নামে একটি পশু আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এ বছরে ইতোমধ্যে প্রায় ৪০টি গরু অনলাইনে বিক্রি করেছেন তিনি। এখনও খামারে প্রায় ৩০টি ছোট-বড় কোরবানির পশু ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রেখেছেন।

চট্টগ্রাম থেকে রাজুর খামারে আসা এক ব্যবসায়ী জানান, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে রাজুর খামার থেকে আমরা কোরবানির জন্য পশু নিয়ে থাকি। তবে বিগত বছরগুলোতে বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে অনলাইনে ছবি ও ওজন দেখে দাম দর করে গরু কিনেছি। যেমনটা ছবিতে দেখেছি যা বলেছে ঠিক তেমনটাই ছিল। এ বছরে সরাসরি গরু দেখার জন্য পরিবারের সদ্যদের সঙ্গে নিয়ে এসেছি। পছন্দ করে ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচটি গরু কিনবো। আর পাবনা জেলাতে বেশ ভালো জাতের সুন্দর সুন্দর গরু পাওয়া যায়। ঈদের আগে খামারের পরিবহনে করেই সেগুলো আমাদের ঠিকানায় পৌঁছে দেবেন খামারিরা।

তরুণ উদ্যোক্তা মো. রাজু আহম্মেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে এই গরুর খামার করি। সবাই যদি চাকরি করে তবে ব্যাবসা করবে কে! আমি সারা দেশে ঘুরে পছন্দ করে বিভিন্ন উন্নত জাতের ষাঁড় গরু সংগ্রহ করি। এর পরে সেই গরুগুলোকে লালন পালন করে যত্ন নিয়ে কোরবানি ঈদের জন্য প্রস্তুত করি। আমাদের গরুকে কখনও বাজে খাবার খাওয়ানো হয় না। পুষ্টিকর ভালো মানের খাদ্য দেওয়া হয়। তাই আমার খামারের গরু যারা নিয়েছেন, তারা আবার আমার কাছে অর্ডার দেন। আমি কখনও হাটে গরু নেই না। খামার আর অনলাইনে আমার গরু বিক্রি হয়ে যায়। এই বছরে প্রায় কোটি টাকার পশু বিক্রি করবো বলে আশা করছি।

জেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আল মামুন হোসেন বলেন, পাবনা জেলার যে কয়েকটি বিষয়ে আমরা নাম উল্লেখ করি তার মধ্যে দুধ, দুদ্ধজাতীয় পণ্য ও কোরবানির পশু অন্যতম। এই জেলাতে বহু আগে থেকেই পশু লালন পালন হয়ে আসছে। এখানে যত খামারি আছেন, সবার খামারেই দুগ্ধ গরুর পাশাপাশি ষাঁড় গরু থাকে। পুরুষ এবং নারী উদ্যোক্তা ও পুরস্কার প্রাপ্ত বেশ কিছু খামারিও আছেন এই জেলার।

তিনি আরও বলেন, জেলার খামারিদের মধ্যে বড় আকৃতির ঘাড় গরু পালনের জন্য রজু অন্যতম। রাজুর খামারে প্রতি বছরই বড় গরু দেখতে পাওয়া যায়। জেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের মাধ্যমে সব খামারিদের সঙ্গে আলোচনা করে পশু বিক্রির জন্য সরকারি সহযোগিতা করা হয়। আর প্রতি বছর এই জেলা থেকে পরিবহনসহ ক্যাটেল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পশু সরবরাহের জন্য। বিগত বছরের চাইতে এ বছরে জেলায় প্রায় ৫০ হাজার কোরবানির পশু বেশি আছে। আশা করছি আবহাওয়া ও পরিবেশ ভালো থাকলে খামারিরা ভালো দাম পাবেন।

রাজুর খামারের মধ্যে এবারের কোরবানি ঈদে আলোড়ন সৃষ্টি করা কালা পাহাড়ের ওজন প্রায় ১ হাজার ২০০ কেজি। গরুটি উচ্চতায় প্রায় ৫ ফিট ৮ ইঞ্চি ও প্রস্থে প্রায় ১০ ফিট। লাল পাহাড়ের ওজন প্রায় ৯০০ কেজি। এটি উচ্চতায় ৬ ফিট ও প্রস্থে ৮ ফিট। আর পাবনার বাদশার ওজন প্রায় ১ হাজার কেজি। এটি উচ্চতায় প্রায় ৬ ফিট ২ ইঞ্চি ও প্রস্থে ১১ ফিট। এই তিনটি পশুর বয়স তিন বছর পূর্ণ হয়েছে ওবং চার দাঁত বিশিষ্ট।

এছাড়া রাজুর খামারে ইন্ডিয়ান জাত মীর কাদেমের হাসা, লালা হাসা ও ভুটানের ভুট্রি জাতের কোরবানির পশু আছে। পাবনা জেলাতে তালিকাভুক্ত প্রায় ২৪ হাজার খামারি আছেন। ঈদের জন্য প্রায় সাড়ে ৬ লাখ পশু প্রস্তুত পাবনা জেলাতে। এর মধ্যে গরু আছে ২ লাখ, ছাগল ৪ লাখ ও ভেড়া-মহিষ মিলিয়ে আরও ৫০ হাজার গবাদি পশু প্রস্তুত আছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।