ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শর্তসাপেক্ষে ধর্মঘট স্থগিত করলেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
শর্তসাপেক্ষে ধর্মঘট স্থগিত করলেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা

সিলেট: শর্তসাপেক্ষে ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ৩টি তেল কোম্পানির কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ পেট্রল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।

বৈঠক শেষে ২২ জানুয়ারির ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ পেট্রল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক।

তিনি বলেন, সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কেবল আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অথচ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয় না। ফলে ২২ জানুয়ারি থেকে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলাম। তবে মঙ্গলবারের বৈঠকে জেলা প্রশাসক সিলেটের পাম্পগুলোর জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।

এক্ষেত্রে সরকার ভাড়া বহন করার শর্তে ভৈরব থেকে চাহিদামতো তেল আনার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন। যে কারণে ২২ তারিখ পর্যন্ত আশ্বাসের বিষয়টি বাস্তবায়ন হয় কি না দেখবেন তারা। যদি সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়, তবে তারা ধর্মঘটে যাবেন না। আর বাস্তবায়ন না হলে ২২ জানুয়ারি থেকেই ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এবং সিলেটে জ্বালানি তেল বিপণনকারী কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ডিপো কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মজিবর রহমান পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, দৈনিক চাহিদার তুলনায় জ্বালানি তেলের সরবরাহ কিছুটা কম হলেও তা নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। আর সিলেটের ডিপোতে পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল মজুদ না থাকলেও নিকটবর্তী ডিপো থেকে সরবরাহ ঠিক রাখা হবে। এর পরিবহন ব্যয়ের বিষয়টি আইন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।

উল্লেখ্য, সিলেটে জ্বালানি তেলের সঙ্কট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। সেচ মৌসুমে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকও দিতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে রেলের ইঞ্জিন ও ওয়াগন সংকটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্বালানি তেল না আসায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।

গত কয়েক মাস সিলেটের ব্যবসায়ীরা ভৈরব থেকে জ্বালানি এনে পাম্পগুলো সচল রেখেছিলেন। কিন্তু পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা সংকট নিরসনে উপায়ন্ত না দেখে তারা ধর্মঘট আহ্বান করেন।

এ অবস্থায় গত ১৪ জানুয়ারি জরুরি সভা আহ্বান করে আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে সিলেটের পাম্পগুলোতে তেল বিক্রি বন্ধ করে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন পেট্রল পাম্প মালিকরা। তবে শর্তাসাপেক্ষে মঙ্গলবার তারা সে ধর্মঘট স্থগিত করেন।

জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা বলেন, সিলেট বিভাগে ১১৪টি পাম্প রয়েছে। বিভাগে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার ডিজেল এবং ৩ লাখ লিটার পেট্রোল ও অকটেনের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ওয়াগন সঙ্কটের কারণে গড়ে প্রতিদিন ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোল মিলিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে ৫/৬ লাখ লিটার। সপ্তাহে যেখানে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে তেলবাহী একটি লরি আসার কথা সেখানে আসছে মাত্র ২/৩ দিন। যে কারণে সিলেটে দিন দিন জ্বালানি তেলের সংকট বেড়েই চলছে।

এ অবস্থায় সিলেটের ব্যবসায়ীরা এতদিন ক্রেতাদের স্বার্থে নিজ খরচে ভৈরব থেকে জ্বালানি তেল এনে বিক্রি করছিলেন। কিন্তু পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাম্প মালিকদের অব্যাহতভাবে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

এছাড়া, সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে এক সময় পাওয়া কনডেনসেড শোধন করে সিলেটেই উৎপাদন হতো জ্বালানি তেল। কিন্তু সিলেটের শোধনাগারগুলোতে উৎপাদিত তেলের ‘মান ভাল নয়’অজুহাতে ২০২১ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় সব শোধনাগার।

পরে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে কেবলমাত্র রশিদপুরের শোধনাগারটি চালু হলেও বাকিগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে। এটিই সিলেটে জ্বালানি তেল সংকটের একমাত্র কারণ বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
এনইউ/এসএ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।