ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

আইন ও আদালত

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সারা বছর বাজার তদারকি করতে হবে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সারা বছর বাজার তদারকি করতে হবে ...

ঢাকা: দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের মেশিনারিজগুলো (আইন, বিধি, নীতিমালা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তদারক সংস্থা) ৩৬৫ দিনই সতর্ক-সোচ্চার থাকুক। এটা একদিনের কাজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে এক রিট আবেদনের শুনানিতে সোমবার (১৪ মার্চ) এমন মন্তব্য করেছেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান।

শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা বলেন, সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে আছে।

তখন আদালত বলেন, আপনারা দেখান প্রতিযোগিতা বিরোধী জোটকে কীভাবে নিরূপণ করছেন? ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন হয়েছে। এখন পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন নেই। প্রতিযোগিতা বিরোধী চুক্তি, কর্তৃত্ব বন্ধ করতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা বলেন, উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

আদালত বলেন, এ আইনে (প্রতিযোগিতা আইন) মনোপলি (একচেটিয়া) ব্যবসা বন্ধের কথা বলা আছে। সরকার বিধি-নীতিমালা করছে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আইনের প্রয়োগ নাই। এরকমটা সব সময় হয়ে আসছে। আপনারা যদি কঠোর হতেন তবে বাজার এমন লাগাম ছাড়া হত না। আগে থেকে সচেষ্ট থাকলে জনসাধারণের ভোগান্তি হত না। একচেটিয়া ব্যবসা একটা গ্রুপের কাছে চলে যাওয়ায় এমনটা হচ্ছে। অথচ এটি বন্ধ করতে রেগুলেটরি বডি (নিয়ন্ত্রক সংস্থা) গঠনের কথা আইনে বলা আছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকলে আমাদের কাছে (আদালতে) আসতে হত না। আমরা চাচ্ছি, এগুলো হোক। আমাদের সামনে তো আইন বাস্তবায়নের কোনো উদাহরণ নাই।  

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা তখন বলেন, সরকার সক্রিয় আছে। বাজার এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

আদালত বলেন, সরকারের মেশিনারিজগুলো (আইন, বিধি, নীতিমালা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তদারক সংস্থা) সক্রিয় থাকলে মজুদকাররা সাহস পেত না। আইন, সংগঠন সবকিছু আছে, কিন্তু প্রয়োগ নাই। মেশিনারিজগুলো সক্রিয় করলে এরা সাহস পাবে না। এর জন্য কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। সেটি নেই। আমরা চাই সরকারের মেশিনারিজগুলো ৩৬৫ দিনই সতর্ক-সোচ্চার থাকুক। এটা (বাজার তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ) একদিনের কাজ না। যতটুকু হয়েছে সেটি প্রশংসনীয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের কাজ চলছে। সরকার কাজ করছে। একচেটিয়াভাবে কেউ যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে তার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার টাস্কফোর্স গঠনে হাত দিয়েছে। বাজার দর এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। বাজারে বাজারে গিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ফলে এরকম পরিস্থিতিতে এই রিটে রুল দেওয়া ঠিক হবে না।

আদালত বলেন, সারা বছর বাজার তদারকি করতে হবে। রোজা আসলে তদারকি হবে, এমনটা হলে হবে না। এটা প্রতিদিনের কাজ, প্রতিদিন করতে হবে। আইন লঙ্ঘন করা চলবে না।

পরে রিটকারী আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, যেকোনো সময় যেকোনো খাদ্য পণ্যে দাম বাড়তে পারে। কিন্তু আপনাকে নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের বিষয়ে আসা উচিত। আপনার রিট আবেদনের আরজি যথাযথ হয়নি। এটি সংশোধন করে নিয়ে আসেন, কাল পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রাখছি।  

সম্প্রতি সয়াবিনের তেলের দাম  বৃদ্ধি নিয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত খবর নজরে এনে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ চান সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী। গত ৩ মার্চ তারা বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে আদালত তাদের যথাযথ আবেদন নিয়ে আসতে বলেন। পরে তারা হাইকোর্টে রিট করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবীর। অন্য দুই রিটকারী হলেন মনির হোসেন ও মোহাম্মদ উল্লাহ।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
ইএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।