ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৬
বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা

কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে দেশটির জনগণ। রোববার (৪ ডিসেম্বর) দেশটির সান্টিয়াগো শহরে লাখো মানুষ তাদের প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

ঢাকা: কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে দেশটির জনগণ। রোববার (৪ ডিসেম্বর) দেশটির সান্টিয়াগো শহরে লাখো মানুষ তাদের প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

প্রয়াত ফিদেল কাস্ত্রের ভাই প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রের নেতৃত্বে সর্বস্তরের মানুষ আমৃত্যু সংগ্রামী নেতাকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিবেদন করে।

এ সময় রাউল কাস্ত্রো প্রয়াত ফিদেলের ইচ্ছে অনুযায়ী, কিউবায় ফিদেলের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ বা সড়ক নামকরণও নিষিদ্ধ করেন।

বিপ্লবী নেতা ফিদেল কঠোরভাবে ব্যক্তির আরাধণাকে বিরোধিতা করতেন জানিয়ে রাউল বলেন, কেউবায় ফেদেলের নামে কোনো দুর্গ বা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে না। আর এটা তারই ইচ্ছা।

গত ২৫ নভেম্বর রাতে (বাংলাদেশ সময় ২৬ নভেম্বর সকালে) বিপল্পী ফিদেল কাস্ত্রোর জীবনাবাসন ঘটে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯০ বছর।

মাত্র দু’মাস আগে কিউবাবাসী কাস্ত্রোর ৯০ তম জন্মদিন উদযাপন করে। সেখানে এক অনুষ্ঠানে কাস্ত্রো তাঁর মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেন।   তিনি বলেন, ‘আমি যে ৯০ বছরে পা দিতে পারবো তা স্বপ্নেও ভাবিনি। ’

৯০ বছর পর্যন্ত আয়ুলাভকে সে সময় তিনি  ‘স্রেফ প্রকৃতির খেয়াল’ বলে অভিহিত করেন।

স্বাস্থ্যগত কারণে ২০০৮ সালে ফিদেল কাস্ত্রো স্বেচ্ছায় কিউবার রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়ে দেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন তাঁরই সহোদর রাউল কাস্ত্রো।

এর আগে প্রায় অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে তিনি ক্ষমতাসীন ছিলেন। কিউবান বিপ্লবের প্রধান নেতা কাস্ত্রো ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৭৬  সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেবার আগ পর্যন্ত কিউবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তবে ১৯৬১ সালে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পার্টিপ্রধান ছিলেন।

হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়ার সময় ফিদেল কাস্ত্রোর রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয় মার্কিন মদদপুষ্ট স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ফালহেন্সিও বাতিস্তা সরকারের বিরোধিতার মধ্য দিয়ে। কাস্ত্রো তাঁর অনুসারীদের নিয়ে ১৯৫৩ সালে মানকাদা ব্যারাকে ব্যর্থ হামলা চালিয়ে বন্দি ও কারারুদ্ধ হন। ছাড়া পেয়ে বাতিস্তা সরকারকে উৎখাতের জন্য সংগঠিত হওয়ার জন্য মেক্সিকো যান এবং সেখানে তাঁর ভাই রাউল কাস্ত্রো ও চে গে ভারাকে সঙ্গে নিয়ে ‘the 26th of July Movement’ নামের একটি বিপ্লবী দল গঠন করেন। এরপর কিউবায় ফিরে এসে সিয়েরা মায়েস্ত্রা থেকে শুরু করেন বাতিস্তা বাহিনির বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ। অবশেষে ১৯৫৯ সালে বাতিস্তা সরকারকে উখাত করতে সক্ষম হন এবং এক জননন্দিত বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। কমিউনিস্ট আদর্শের কারণে যুক্তরাষ্ট্র কাস্ত্রো সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চেষ্টা চালায়। তবে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবার পাশে দাঁড়ায় এবং এর প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নেয়।

এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের চিরবৈরী এক রাষ্ট্রে পরিণত হয় কিউবা। মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক দশক ধরে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলা করে আসছে দেশটি।

একজন বিপ্লবী নেতা হিসেবে ফিদেল কাস্ত্রো শুধু স্বদেশেই নন, গোটা বিশ্বজুড়েই বিপুল জনপ্রিয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে যেসব বিশ্বনেতা সবার আগে সমর্থন জানিয়েছিলেন কাস্ত্রো ছিলেন তাদেরই একজন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন পরস্পরের বন্ধু ও অনুরাগী।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৬
টিআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।