রাশিয়ার যুদ্ধবিমান এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশের ঘটনায় সামরিক জোট ন্যাটোকে জরুরি বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টেন মিখাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) জানান, এই অনুপ্রবেশ সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হুমকি এবং তা নিয়ে দ্রুত ন্যাটোর আলোচনার প্রয়োজন।
ন্যাটো সদর দপ্তরের বরাত দিয়ে জার্মান গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে, আগামী সোমবার বা মঙ্গলবার সদস্য রাষ্ট্রগুলো এ বিষয়ে বৈঠকে বসবে।
ন্যাটো চুক্তির আর্টিকেল ৪ অনুযায়ী এস্তোনিয়া এ বৈঠকের আবেদন করেছে বলে জানা যাচ্ছে।
কী বলে আর্টিকেল ৪
ন্যাটো চুক্তির আর্টিকেল ৪ অনুযায়ী, কোনো সদস্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়লে দেশটি ন্যাটোর অন্য সদস্যদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার আহ্বান জানাতে পারে। এটি সরাসরি সামরিক প্রতিরক্ষা কার্যক্রম নয়, বরং যৌথ নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার প্রক্রিয়া।
ন্যাটো প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র আটবার এই ধারা ব্যবহার করে বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে পোল্যান্ড একই অনুরোধ করেছিল, তবে এই ধারায় বৈঠক হয়নি।
এর আগে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণের দিনে ন্যাটো এই ধারায় বৈঠক ডেকেছিল।
এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় রুশ যুদ্ধবিমান
এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাশিয়ার তিনটি মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান ফিনল্যান্ড উপসাগর হয়ে এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করে। এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় প্রায় ১২ মিনিট অবস্থান করে। রাশিয়া এস্তোনিয়ার আকাশ ব্যবহারের পূর্বে কোনো সংকেত পাঠায়নি।
ন্যাটো মুখপাত্র অ্যালিসন হার্ট বলেন, ন্যাটো এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে। আগামী সপ্তাহেই জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হবে।
ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী উহান ভাডেফুল বলেছেন, আকাশসীমার লঙ্ঘন সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই ঘটনাকে ইউরোপ ও ন্যাটোর বিরুদ্ধে রাশিয়ার সংগঠিত অভিযানের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের এখনই সংগঠিত না হলে রাশিয়ার কাছে কেউ নিরাপদ নয়।
পোল্যান্ডেরও আকাশসীমা লঙঘন
এস্তোনিয়ার ঘটনার পরপরই গতকাল শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) পোল্যান্ডের সীমান্তরক্ষী বাহিনী অভিযোগ করেছে, দুটি রুশ যুদ্ধবিমান বাল্টিক সাগরে অবস্থিত পোল্যান্ডের অরলেন পেট্রোবাল্টিক নামের তেল উত্তোলন প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা অঞ্চলে প্রবেশ করে। বিমান দুটি একদম নিচু দিয়ে প্ল্যাটফর্মের ওপর দিয়ে যায়।
উত্তেজনার নতুন মাত্রা
জার্মান গণমাধ্যমে বিশ্লেষকরা বলছেন, এস্তোনিয়া ও পোল্যান্ডের সাম্প্রতিক অভিযোগগুলো ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তে রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনার নতুন মাত্রা তৈরি করেছে।
এস্তোনিয়ার আর্টিকেল ৪ আবেদনকে ঘিরে আগামী সপ্তাহের বৈঠক ন্যাটো-রাশিয়া সম্পর্কের ভবিষ্যৎ উত্তাপের বড় ইঙ্গিত বহন করতে পারে।
জার্মানির সামরিক বিশ্লেষক কার্লো মাসালা বলেন, বর্তমান ঘটনায় মনে হচ্ছে রাশিয়াই ন্যাটোকে চালাচ্ছে। কেননা, রাশিয়া এতো কিছু করার পরও দেশটির বিরুদ্ধে ন্যাটো কোনো সরাসারি প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারছে না।
এইচএ/