ঢাকা, শনিবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৪ জুন ২০২৫, ১৭ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভারতের ইতিহাসে ভয়াবহ ১১ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:০৩, জুন ১২, ২০২৫
ভারতের ইতিহাসে ভয়াবহ ১১ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা ২০২০ সালে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়

এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজ আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের বিমানটিতে ২৪২ জন যাত্রী ছিলেন।

ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাইলট মে-ডে সংকেত দেন, তারপর উড়োজাহাজটি একটি আবাসিক এলাকায় পড়ে বিস্ফোরিত হয় এবং এতে আগুন ধরে যায়।

উড়োজাহাজটি মাত্র ৮৫০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু ততক্ষণে আরোহীদের সবাই প্রাণ হারান।

ভারত বেশ কয়েকটি ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১১টি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হলো।

১. কোজিকোড় দুর্ঘটনা – ৭ আগস্ট ২০২০

এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি উড়োজাহাজ কোভিড-১৯ মহামারির সময় বন্দে ভারত মিশনের অংশ হিসেবে দুবাই থেকে যাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে আনছিল। কালিকট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভারী বৃষ্টির মধ্যে অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে পিছলে পড়ে প্রায় ৩৫ ফুট গভীর একটি খাদে। এতে ওই উড়োজাহাজ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।

দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে দুইজন পাইলটও আছেন। শতাধিক যাত্রী আহত হন। ওই বিমানবন্দরে টেবিলটপ ধরনের রানওয়ে ছিল, যা খারাপ আবহাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এই দুর্ঘটনার পর ভারতের অন্যান্য এমন ধরনের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনরায় পর্যালোচনা করা হয়।

২. ম্যাঙ্গালুরু দুর্ঘটনা – ২২ মে, ২০১০

এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি উড়োজাহাজ দুবাই থেকে ম্যাঙ্গালুরু যাচ্ছিল। অবতরণের সময় সেটি রানওয়ে পার হয়ে গিয়ে একটি গভীর খাদে পড়ে যায়। পড়েই বিমানটি ভেঙে যায় এবং আগুন ধরে যায়। বিমানে মোট ১৬৬ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৫৮ জন মারা যান, বেঁচে যান মাত্র ৮ জন।  

তদন্তকারীরা জানান, অবতরণের জন্য উড়োজাহাজের অবস্থান ঠিকঠাক না থাকলেও পাইলট চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত পাইলটকে আবার উড়ে গিয়ে দ্বিতীয়বার অবতরণের চেষ্টা করতে হয় (যাকে ‘গো-অ্যারাউন্ড’ বলা হয়), কিন্তু তা না করায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

৩. পাটনা দুর্ঘটনা – ১৭ জুলাই, ২০০০

অ্যালায়েন্স এয়ারের একটি উড়োজাহাজ কলকাতা থেকে দিল্লি যাচ্ছিল, পথে একটি যাত্রাবিরতি ছিল পাটনায়। পাটনা বিমানবন্দরে অবতরণের সময়, বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় ভেঙে পড়ে। এতে কয়েকটি বাড়ি এবং বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় ৬০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান। তদন্তে দেখা যায়, মূলত পাইলটের ভুল এবং বিমান অবতরণের সময় সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

৪. চারখি দাদরি সংঘর্ষ– ১২ নভেম্বর, ১৯৯৬

এটি ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। দিল্লির কাছে আকাশে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৪৭ এবং কাজাখস্তান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়।  ভুল উচ্চতা নির্দেশনা এবং যোগাযোগ বিভ্রাটের কারণে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।  

দুইটি বিমানে থাকা ৩৪৯ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন।  এই দুর্ঘটনার পর ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ সমস্ত বাণিজ্যিক বিমানে বাধ্যতামূলকভাবে ট্রাফিক অ্যাভয়ডেন্স সিস্টেম সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

৫. আওরঙ্গবাদ দুর্ঘটনা – ২৬ এপ্রিল, ১৯৯৩

ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ আওরঙ্গবাদ থেকে উড্ডয়নের সময় রানওয়ে পার হওয়া একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এর কিছুক্ষণ পরই বিমানটি বিদ্যুতের তারে আটকে যায় এবং উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় অন্তত ৫৫ জন যাত্রী প্রাণ হারান।  দুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনার মূল কারণ ছিল এয়ারপোর্টের ভেতরে দুর্বল সমন্বয় ব্যবস্থা এবং সঠিক সময়ে উড্ডয়ন না করতে পারা।

৬. ইম্ফল দুর্ঘটনা – ১৬ আগস্ট, ১৯৯১

ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ কলকাতা থেকে ইম্ফলের উদ্দেশে যাচ্ছিল। খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে উড়োজাহাজটি ইম্ফল বিমানবন্দরের কাছে পৌঁছানোর সময় একটি পাহাড়ের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হয়।  এই দুর্ঘটনায়  ৬৯ জন যাত্রী ও ক্রুর সবাই প্রাণ হারান। দুর্ঘটনার কারণ ছিল নেভিগেশনের (দিক নির্ধারণ) ভুল এবং বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত অবতরণ সরঞ্জামের অভাব।

৭. বেঙ্গালুরু দুর্ঘটনা – ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০

ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ মুম্বাই থেকে বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে যাচ্ছিল। অবতরণের সময় সেটি রানওয়ের আগেই মাটিতে নেমে যায় এবং বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় অন্তত ৯২ জনের মৃত্যু হয়। তদন্তকারীরা জানান, পাইলটরা তখনকার নতুন মডেলের এয়ারবাস উড়োজাহাজের কিছু আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত ছিলেন না, যা দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৮. আহমেদাবাদ দুর্ঘটনা – ১৯ অক্টোবর, ১৯৮৮

ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের দিকে নামছিল। অবতরণের আগেই উড়োজাহাজটি গাছ এবং মাটিতে আঘাত করে। উড়োজাহাজে থাকা ১৩৫ আরোহীর মধ্যে ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়।  তদন্তে জানা যায়, পাইলটের ভুল এবং সঠিক অবতরণ পদ্ধতি অনুসরণ না করাই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল।

৯. বোম্বে দুর্ঘটনা – ২১ জুন, ১৯৮২

কুয়ালালামপুর থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট মুম্বাইয়ে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে অবতরণের চেষ্টা করছিল। অবতরণের সময় বিমানটি রানওয়ে অতিক্রম করে ফেলে, এবং বাইরে চলে যায়। পরে এতে আগুন ধরে যায়।  এ  দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৭ জনের প্রাণ যায়। তদন্তে দেখা যায়, অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং রানওয়ের খারাপ অবস্থা দুর্ঘটনার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিল।

১০. আরব সাগর দুর্ঘটনা – ১ জানুয়ারি, ১৯৭৮

বছরের প্রথম দিনে মুম্বাই থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট। তবে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই উড়োজাহাজটি আরব সাগরে বিধ্বস্ত হয়। এতে থাকা ২১৩ জনের সবাই নিহত হন। দুর্ঘটনার পেছনে কারণ ছিল বিমানের উড়ান নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ত্রুটি এবং ককপিটে থাকা পাইলটদের বিভ্রান্তি।

১১. দিল্লি দুর্ঘটনা – ৩১ মে, ১৯৭৩

চেন্নাই থেকে দিল্লিগামী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় উচ্চ ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক তারে ধাক্কা খায়। রানওয়েতে পৌঁছানোর আগেই উড়োজাহাজে আগুন ধরে যায়।  ৬৫ জন যাত্রীর মধ্যে কমপক্ষে ৪৮ জন মারা যান। দুর্ঘটনার কারণ ছিল খারাপ আবহাওয়া ও আধুনিক অবতরণ সরঞ্জামের অভাব।

আরএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।