দীর্ঘদিনের বিতর্ক ও আইনি জটিলতার পর অবশেষে চাগোস দ্বীপপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণ মরিশাসকে ফিরিয়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
এই দ্বীপপুঞ্জ ছিল আফ্রিকায় ব্রিটেনের শেষ ঔপনিবেশিক দখলের চিহ্ন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বৃহস্পতিবার এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন এবং এটিকে ‘ঔপনিবেশিক যুগের একটি পুরনো সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান’ বলে অভিহিত করেন।
এই হস্তান্তর সংক্রান্ত একটি চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য প্রতি বছর ১০১ মিলিয়ন পাউন্ড করে ৩৪ বছর ধরে মোট ৩.৪ বিলিয়ন পাউন্ড মরিশাসকে দেবে।
তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে দুই চাগোসিয়ান নারী এক জরুরি আইনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্থানীয় আদালতে আবেদন করেন। তাদের দাবি, প্রবাসী চাগোসবাসীদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
চুক্তিটি নিয়ে বিতর্ক বাড়তে থাকে কারণ মরিশাসের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে— যা নিয়ে স্টারমারের দলের নেতারা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পপন্থী আমেরিকান রাজনীতিকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করেন, চীন এই দ্বীপগুলোকে ভবিষ্যতে সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার জন্য ব্যবহার করতে পারে, যা ডিয়েগো গার্সিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার অবশ্য এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বলেন, চীন বা অন্য কোনও শক্তিকে ওই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি গড়ে তোলার সুযোগ না দেওয়াই এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, আমরা যদি এই চুক্তিতে সম্মত না হতাম, তাহলে আইনি পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যেত যে, চীন কিংবা অন্য কোনো দেশ চাগোস দ্বীপপুঞ্জের বাইরের অংশে নিজেদের ঘাঁটি স্থাপন করতে পারত অথবা আমাদের সামরিক ঘাঁটির আশপাশে যৌথ মহড়া চালাতে পারত।
১৮১৪ সাল থেকে যুক্তরাজ্য এই অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ১৯৬৫ সালে, মরিশাসের স্বাধীনতা লাভের ঠিক আগে, চাগোস দ্বীপপুঞ্জকে মরিশাস থেকে আলাদা করে ফেলে লন্ডন। এটি নতুন নামকরণ করা হয় ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান ওশান টেরিটরি নামে।
এরপর ডিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে প্রায় ২,০০০ চাগোসিয়ান অধিবাসীকে জোরপূর্বক উৎখাত করে মরিশাস ও সিশেলসে পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত সামরিক অবস্থান, যা ভারত মহাসাগরে ওয়াশিংটনের প্রভাব বজায় রাখতে সহায়ক।
তবে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে জানিয়ে দেয়, যুক্তরাজ্যের উচিত এই দ্বীপপুঞ্জ যত দ্রুত সম্ভব মরিশাসকে ফিরিয়ে দেওয়া, যাতে স্ব-নির্ধারণ অধিকারের ভিত্তিতে উপনিবেশমুক্ত করণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। যদিও এই রায়টি পরামর্শমূলক ছিল, তবুও এটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ব্যাপক সমর্থন পায়, যার ফলে চাগোস দ্বীপপুঞ্জের ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাজ্য আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে।
সূত্র: সিএনএন
এমএম