ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

পশ্চিমবঙ্গে দুইদিনের বন্‌ধ মাত্র তিনদিন!

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৯
পশ্চিমবঙ্গে দুইদিনের বন্‌ধ মাত্র তিনদিন! হরতালের কারণে রাস্তা ফাঁকা, ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: ১৯৪৭ সালের পর স্বাধীন ভারতের অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও বহুবার হরতালের ডাক এসেছে। তবে সেভাবে বন্‌ধের মুখোমুখি হয়নি রাজ্য। চলতি দুইদিনের বন্‌ধ নিয়ে স্বাধীন হওয়ার পর পূর্ব ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত মাত্র তিনবার এমন হরতাল ডাকা হয়েছে। 

জানা যায়, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির ২০ ও ২১ তারিখে গোটা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও টানা দুইদিনের হরতালের ডাক দিয়েছিল শ্রমিক সংগঠনগুলো। তবে শেষ সময়ে দ্বিতীয় দিন হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

কারণ হরতালের এ দিনটি ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। নয়তো দুইদিনের হরতাল চারবার হতো রাজ্যে।

এর আগে খাদ্য আন্দোলনের সমর্থনে বামপন্থী দলগুলো ১৯৬৬ সালের ২২ এবং ২৩ সেপ্টেম্বর হরতালের ডাক দিয়েছিল। তার আগেও একবার রাজ্যে টানা দু’দিনের হরতাল হয়েছিল ১৯৫৩ সালের ২৩ ও ২৪ জুনে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কাশ্মীরে রহস্যজনক মৃত্যুর প্রতিবাদে ভারতীয় জনসঙ্ঘ এই ধর্মঘট ডেকেছিল। আর এবার গোটা দেশে চলছে ৮ ও ৯ জানুয়ারির টানা দুইদিনের শ্রমিক সংগঠনগুলোর হরতাল।

জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে হরতাল ১০০ এর চেয়ে বেশি হয়েছে। কিন্তু টানা দুইদিনের হরতালের নজির রাজ্যে অতীতে মাত্র দু’টি আছে। এবার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বার টানা দুইদিনের হরতাল পালন হচ্ছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ১১৬ বার হরতালের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো। এই হিসেবের মধ্যে অবশ্য শুধু রাজ্যের পাশাপাশি দেশব্যাপী ডাকা হরতালও আছে।

এদিকে, এখন পর্যন্ত দেশে হরতাল ডাকায় এগিয়ে আছে বামপন্থীরা। এ পন্থার শ্রমিক সংগঠন ও বামফ্রন্টের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকে হরতাল হয়েছে ৭৩টি। বামপন্থী এসইউসিআই ১০টি ও সিপিআইএমএল একটি হরতাল ডেকেছে রাজ্যে।

এছাড়া কংগ্রেস ১৪টি, তৃণমূল কংগ্রেস ১৩টি, বিজেপির ডাকা পাঁচটি হরতাল এই তালিকায় আছে। স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গে প্রথম হরতাল ডেকেছিল ১৯৫০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হিন্দু মহাসভা। আর এর ইস্যু ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মানুষদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ।

আরও পড়ুন>> ১৮ সংগঠনের হরতালে সারাদেশের মতো কলকাতায়ও দুর্ভোগ

হরতাল সংক্রান্ত নথি ঘেঁটে পশ্চিমবঙ্গে হওয়া অতীতের হরতালগুলো চিহ্নিত করেছে রাজ্য সরকারের সরকারি কর্মী সংগঠন। কোন দশকে কারা হরতালের ডাক দিয়েছিল, তা-ও চিহ্নিত হয়েছে তাদের মাধ্যমে।

এতে দেখা যাচ্ছে, ৮০’র দশকে রাজ্যে যখন বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায়, তখনও বামপন্থীদের ডাকা হরতালের সংখ্যা অনেক বেশি। মোট ১২টি হরতালের মধ্যে ১১টিই ছিল বামপন্থীদের। একটি মাত্র ছিল কংগ্রেসের। আর ৯০’র দশকে বামপন্থীরা সাতটি, কংগ্রেস ১০টি, বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস একটি হরতাল ডেকেছিল।

২০০০ সাল থেকে শুরু করে প্রথম ১০ বছর রাজ্যে বামপন্থীরা ক্ষমতায় ছিল। তখন মোট ৩৪টি হরতালের মধ্যে ১০টি ছিল বামফ্রন্টের শরিক দল ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর ডাকা। আর ওই সময়ের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ১২টি, এসইউসিআই নয়টি, বিজেপি ও কংগ্রেস একটি করে হরতালের ডাক দেয়।

বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বামপন্থী সংগঠনগুলো হরতাল ডাকলে সরকারি অফিস খুলে রেখে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালানোর একটা আনুষ্ঠানিক নির্দেশিকা জারি হতো। কিন্তু বাস্তবে অফিসের দরজা বন্ধ থাকার কারণে কর্মীরা ইচ্ছা থাকলেও ঢুকতে পারতেন না। তাছাড়া হরতালের দিন না আসার জন্য ছুটি বা বেতন কোনোটাই কাটা হতো না। কর্মীদের অনুপস্থিতির তালিকাতেও হরতালের দিনটির উল্লেখ থাকতো না।

তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে হরতাল ডাকার সংখ্যা অনেক কমে যায়। ২০১১ ও ২০১৪ সালে কোনো হরতাল ডাকা হয়নি। তবে ২০১২ সালে তিনটি হরতাল ডাকা হয়। এছাড়া ২০১৩ ও ২০১৮ সালে ডাকা হয় দু’টি করে হরতাল। ২০১৫, ১৬ এবং ১৭ সালে একটি করে ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল।

২০১৯ সালে বছরের শুরুর মাসেই প্রথম হরতাল পালন হচ্ছে বা হবে ৮ ও ৯ জানুয়ারি। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে হরতাল ডেকেছে সেই বাম শ্রমিক সংগঠনগুলো। আর এতে সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেসসহ খেটে খাওয়া মানুষের বেশ কয়েকটি সংগঠন। তবে সমর্থন করেনি তৃণমূল ও বিজেপির শ্রমিক সংগঠনগুলো।

যদিও হরতালকারীদের বিপক্ষে রাজ্য সরকারের প্রশাসন সব ব্যবস্থা রেখেছে। রাজ্যের রাজধানীর রাজপথে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরবক্ত পুলিশ। নেমেছে অতিরিক্ত সরকারি বাস। এছাড়াও চলছে ট্যাক্সি থেকে ট্রেন। খোলা আছে অফিসসহ স্কুল-কলেজ ও কিছু দোকানপাট।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৯
ভিএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।