ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

'সিগারেটের মোড়কে সতর্কীকরণ ছবি না ব্যবহারে চাপ ছিল'

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬
'সিগারেটের মোড়কে সতর্কীকরণ ছবি না ব্যবহারে চাপ ছিল'

ঢাকা: সিগারেটের মোড়কের অর্ধেক জুড়ে সতর্কীকরণ ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক না করতে বিভিন্ন মহলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা চাপ সৃষ্টি করেছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়াম কক্ষে ‘যক্ষা এবং তামাক সেবন: দ্বৈত সমস্যা ও তার প্রতিকার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন কথা জানান তিনি।

এছাড়া তামাকের উৎপাদন বন্ধে লাভবান এ ফসলের বিকল্প কী হতে পারে সেটা ভাবার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে তামাক সেবনকারীদের নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান মন্ত্রী।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ও দৈনিক সমকাল যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।  
সমকালে নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. শহীদ মো. সাদিকুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস ব্র্যাকের টিবি ম্যালেরিয়া ও ওয়াশ কর্মসূচির পরিচালক ড. আকরামুল ইসলাম।

সিগারেটের মোড়কে সতর্কীকরণ ছবি সংযুক্ত করা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আমাকে অনুরোধ করেছে, নাসিম ভাই আপনি নরম হোন। তাহলে আমরা একটু কাজ করতে পারি। তবে আমি বলেছি আমি নরম হবো না। আমাকে এটা করতেই হবে এবং শেষমেষ আমি সেটা করেছি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা তামাকের ব্যবহার কমাতে জনসচেতনতার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন বন্ধ, উচ্চহারে কর আরোপ, তামাক উৎপাদন ও সরবারহ কমানো, কৃষককে তামাকের পরিবর্তে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে সহযোগিতা করা, তামাক পণ্যে কর মওকুফ না করা, তামাকের বিক্রয়কেন্দ্র কমানো এবং জনসাধারণের চলাচলরত স্থানগুলোতে শতভাগ ধুমপানমুক্ত করার সুপারিশ তুলে ধরেন।

তবে প্রকাশ্যে ধুমপান বন্ধ করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয় জানিয়ে তিনি আয়োজকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যখন এ ধরনের আয়োজন করবেন, তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রীকে আনবেন এবং আমিও থাকবো। তিনজন মিলেই এ বিষয়ে কথা বলবো। কারণ অনেকগুলি কাজ আছে, যেগুলো আমার একার পক্ষে করা সম্ভব না।

নাসিম আরও বলেন, ধুমপান নিয়ে জনগণের অভিযোগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শোনা দরকার। উনি আইন বাস্তবায়ন করবেন। বাংলাদেশে এমন অনেক আইন আছে তবে প্রয়োগ নেই।

তামাক চাষ বন্ধ করা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তামাক চাষ বন্ধ করতে পারি। তবে তাদের (চাষি) জন্য একটা বিকল্প ব্যবস্থাও ভাবতে হবে। এটা যে লাভজনক চাষ সেটা মনে রাখতে হবে। এর বিকল্প বের করতে পারলেই আমরা তামাক চাষ বন্ধ করতে পারবো।

অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধুমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে যক্ষাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই তামাকের ব্যবহার কমানো গেলে যক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।  

তারা জানান, বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪৩ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনভাবে তামাক ব্যবহার করে। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৫৭ হাজার জন তামাক ব্যবহারের কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

ব্র্যাকের ড. আকরামুল ইসলাম বলেন, দারিদ্রতা, পুষ্টিহীনতা, ঘণবসতি ও ধুমপানের কারণে দেশে প্রতিবছর যক্ষা রোগীর সংখ্যা যে হারে কমা উচিত সে হারে কমছে না।
 
তার মতে, পুষ্টিহীনতা ও দারদ্রিতা কিছুটা কমে এলেও অন্যতম সমস্যা হিসেবে রয়েছে গেছে ঘনবসতি ও ধুমপান।  

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ডা. মুজিবুর রহমান। এতে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে দেশে বর্তমান ২৩ শতাংশ জনগোষ্ঠী সরাসরি ধুমপানের সঙ্গে তামাক সেবন করে। এরমধ্যে ৪৪.৭ শতাংশ পুরুষ ও ১.৫ শতাংশ নারী। আর ২৬.৪ শতাংশ পুরুষ এবং ২৭.৯ শতাংশ নারী কোনো না কোনভাবে তামাক ব্যবহার করে থাকে।

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলে মাত্র ছয়জন জনবল নিয়ে সারাদেশের কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬
জেপি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।