ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ফমেকের জরুরি বিভাগে তালা

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক চলছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক চলছে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফরিদপুর: রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে চারটা থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তালা দিয়ে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দিয়েছেন হাসপাতালের শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকরা।

বুধবার (১৩ জানুয়ারি) ২য় দিনেও জরুরি বিভাগের তালা খোলেননি ইর্ন্টান চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও অনড় অবস্থানে রয়েছেন তারা। তালা দেওয়ার কারণে অন্য চিকিৎসকেরাও জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না।  

এর ওপর আবার কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় গঠন, সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল পুনর্বহাল, বেতন বিলে ইউএনও’র স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত বাতিল, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সকল ক্যাডার/নন ক্যাডারে ইনসিটো পদোন্নতির ব্যবস্থার দাবিতে ১১ জানুয়ারি থেকে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ভোগান্তি চরমে নিয়ে গেছে।

তবে এ সমস্যা নিরসনে ইর্ন্টান চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন হাসপাতাল ও জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. গণপতি বিশ্বাস শুভ জানিয়েছেন, আমরা জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি। খুব শিগগিরই বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে।

দুপুর সাড়ে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কনফারেন্স রুমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডা. গণপতি বিশ্বাস, ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আব্দুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামানসহ চিকিৎসক নেতাদের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আলোচনা চলছিল বলে জানা গেছে।

৫শ’ শয্যার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় সব সময়ই ৬/৭শ’ রোগী ভর্তি থাকেন। জরুরি বিভাগেও ফরিদপুরসহ আশেপাশের জেলাগুলো থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন শত শত রোগী। বন্ধ থাকায় চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন এসব রোগীরা।

একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের এমন আচরণ মেনে নিতে পারছেন না রোগী ও তাদের স্বজনেরা। এতে কোনো কুচক্রি মহলের উস্কানি থাকতে পারে বলেও মনে করছেন হাসপাতালে আসা অনেকেই।

রোগীর স্বজন মোখলেছ জানান, পুরনো ভবনের তিনতলায় একজন রোগী রয়েছেন তার। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা অমানবিক।  

রহিম ফকির নামে অন্য একজন স্বজন বলেন, একজন রোগীর স্বজনের কারণে শত শত রোগী কষ্ট পেতে পারেন না। চিকিৎসকদের মানুষ যেভাবে শ্রদ্ধা করে তা অন্য কাউকে করে না। কিন্ত একটি ঘটনা নিয়ে যেভাবে ঝামেলা শুরু করেছেন চিকিৎসকরা, তাতে মনে হচ্ছে, হাসপাতালের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে কেউ উস্কানি দিচ্ছে।

জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে আসা চার রোগীর স্বজনদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন হাসপাতালের নারীসহ দুই শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ও একজন সেবিকা। ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তালা দিয়ে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আরিফ ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকেলে ফরিদপুর সদর উপজেলার ধুলদী এলাকায় একটি মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় পড়লে ওই মাইক্রোবাসের চারজন আহত হন। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা হয়। তাদের পুরুষ সার্জারি বিভাগে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করা হয়। ওই রোগীদের মধ্যে একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে গেলে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের ওপর হামলা করেন স্বজনেরা।

এ সময় ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসক সানজিদা ও চিকিৎসক আবুল হাসনাত এবং এক সেবিকাকে প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন রোগীর স্বজনেরা। পরে তারা রোগী নিয়ে পালিয়ে যান।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫
আরকেবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।