২০২৫ সালের মধ্যে, বিশ্ব থাইরয়েড দিবস থাইরয়েড রোগের ব্যাপক প্রভাব মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আরও সুসংহত ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এই রোগের ক্রমবর্ধমান বিস্তার বিবেচনায়, এ দিনটি নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দেয়:
● জনসচেতনতা বৃদ্ধি:
বাংলাদেশসহ অন্যান্য নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের তুলনায় থাইরয়েড রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তুলনামূলকভাবে কম।
● প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও নির্ভুল রোগ নির্ণয়:
থাইরয়েড সমস্যার অনেক উপসর্গ সূক্ষ্ম ও ধীরে ধীরে দেখা দেয়, ফলে এগুলো সহজেই উপেক্ষিত হতে পারে। যথাযথ সচেতনতা ব্যক্তিকে দ্রুত লক্ষণ চিনতে সাহায্য করে, চিকিৎসার জন্য উদ্যোগী করে তোলে, যার ফলে জটিলতা হ্রাস পায় এবং চিকিৎসার সাফল্য বৃদ্ধি পায়।
● তথ্য ও সম্পদের প্রাপ্যতা:
বিশ্ব থাইরয়েড দিবস বাংলা ও অন্যান্য স্থানীয় ভাষায় নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রচারের একটি সুযোগ সৃষ্টি করে। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে স্বাস্থ্য-সাক্ষরতার মান বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং গ্রামীণ অঞ্চলে চিকিৎসাসেবা সীমিত।
● নীতিগত অগ্রগতি ও অ্যাডভোকেসি:
এই দিবসটি থাইরয়েড রোগ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে নীতিগত পরিবর্তনের দাবিতে কাজ করতে পারে। যেমন—স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চালু, সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ নিশ্চিতকরণ, এবং এন্ডোক্রাইনোলজিস্টসহ স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের প্রশিক্ষণ।
● রোগী ক্ষমতায়ন ও সহায়তা:
যাঁরা ইতিমধ্যেই থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত, তাঁদের জন্য এই দিনটি সহমর্মিতা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করে। এতে আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়।
বিশ্ব থাইরয়েড দিবস ২০২৫-এর সম্ভাব্য থিমসমূহ
যদিও ২০২৫ সালের জন্য নির্ধারিত বৈশ্বিক থিম এখনো প্রকাশিত হয়নি, তবুও নিচের বিষয়গুলো সম্ভাব্য থিম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে:
• ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রতি মনোযোগ: প্রজননক্ষম নারীদের মধ্যে উর্বরতা ও গর্ভধারণের জটিলতা, শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশ এবং প্রবীণদের ক্ষেত্রে ভুল রোগ নির্ণয়ের ঝুঁকি।
• মানসিক স্বাস্থ্য ও থাইরয়েড: বিষণ্নতা, উদ্বেগ ইত্যাদির সঙ্গে থাইরয়েডের সম্পর্ক তুলে ধরা ও শারীরিক-মানসিক যত্নের সমন্বয় নিশ্চিত করা।
• খাদ্য ও পরিবেশগত প্রভাব: আয়োডিনের ঘাটতি ছাড়াও পরিবেশগত বিষক্রিয়া ও খাদ্যাভ্যাসের থাইরয়েডে প্রভাব নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি।
• চিকিৎসা-অসমতা দূরীকরণ: শহর ও গ্রামে চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির ব্যবধান কমিয়ে আনার প্রয়াস ও টেলিমেডিসিন সম্প্রসারণ।
• দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব: নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ, পর্যবেক্ষণ এবং স্ব-যত্ন চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ।
ঢাকা ও বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ব্যক্তি পর্যায়ে:
• নিজে জানুন, অন্যকে জানান—নির্ভরযোগ্য তথ্য শেয়ার করুন
• উপসর্গ চিনে চিকিৎসার পরামর্শ দিন
• স্থানীয় সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নিন
• সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধিতে অংশ নিন
• উন্নত থাইরয়েড যত্নের পক্ষে সোচ্চার হোন
স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার ও সংস্থা:
• সচেতনতামূলক ক্যাম্প ও কর্মশালার আয়োজন
• বাংলা ও ইংরেজিতে তথ্য উপকরণ তৈরি ও বিতরণ
• গণমাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রকাশ
• রোগী সহায়তা গোষ্ঠী গঠন বা সহযোগিতা
• থাইরয়েড-সম্পর্কিত গবেষণায় সম্পৃক্ততা
• পেশাদারদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
সরকার ও নীতিনির্ধারক:
• থাইরয়েড সচেতনতা জাতীয় জনস্বাস্থ্য প্রচারে অন্তর্ভুক্ত করা
• পরীক্ষা ও ওষুধের সহজলভ্যতা ও সাশ্রয় নিশ্চিত করা
• এন্ডোক্রাইনোলজিস্টসহ দক্ষ জনবল তৈরি
• ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য লক্ষ্যভিত্তিক স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন
২৫ মে, ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস উপলক্ষে ইভেন্ট ও প্রচারণা অনুষ্ঠিত হবে। হাসপাতাল, চিকিৎসা সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয় ও রোগী সহায়তা সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অংশগ্রহণের ঘোষণা খুঁজে দেখতে পারেন।
বিশ্ব থাইরয়েড দিবস ২০২৫ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, যা সচেতনতা বৃদ্ধি, চিকিৎসা সুবিধার প্রসার এবং রোগীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্য উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
ডা. শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়