ঢাকা, সোমবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২০ রবিউস সানি ১৪৪৭

ফুটবল

আফ্রিকায় ‘মেড ইন চায়না’ স্টেডিয়াম: কেন এই বিশাল বিনিয়োগ চীনের?

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৫, অক্টোবর ১২, ২০২৫
আফ্রিকায় ‘মেড ইন চায়না’ স্টেডিয়াম: কেন এই বিশাল বিনিয়োগ চীনের? সংগৃহীত ছবি

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বা করিম বেনজেমাদের মতো তারকাদের নিয়ে সৌদি আরব যেমন ফুটবল বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তার আগে চীনও একই লক্ষ্যে একটি সুপার লিগ তৈরির চেষ্টা করেছিল। হাভিয়ের মাচেরানো, কার্লোস তেভেজদের মতো তারকাদের উড়িয়ে আনলেও সেই প্রকল্প ব্যর্থ হয় এবং গুয়াংজু এভারগ্রান্ডের মতো ক্লাবগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়।

তবে ফুটবলকে ঘিরে চীনের সেই নীতি এখন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। এখন ফুটবলকে হাতিয়ার করেই বিশ্বজুড়ে নিজেদের প্রভাব ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে দেশটি।

মোজাম্বিক, মালি এবং তানজানিয়ার মতো আফ্রিকান দেশগুলো এখন চীনের অর্থায়নে নির্মিত আধুনিক এবং শীর্ষ স্তরের স্টেডিয়ামে নিজেদের হোম ম্যাচ খেলে। কঙ্গোর কিনশাসায় অবস্থিত ৮০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার ‘স্তাদে দেস মার্টার্স’ কিংবা আইভরি কোস্টের ৬০ হাজার ধারণক্ষমতার অলিম্পিক স্টেডিয়াম তার মধ্যে অন্যতম।

আফ্রিকা মহাদেশে ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের জন্য যে মাঠগুলো ব্যবহৃত হবে, তার মধ্যে ১৬টিই তৈরি করেছে এই এশীয় পরাশক্তি। চীন জানে, এই দেশগুলো নগদ অর্থে এসব স্টেডিয়ামের মূল্য পরিশোধ করতে অক্ষম, কিন্তু এর পেছনে রয়েছে চীনের ভিন্ন স্বার্থ।

এই ‘স্টেডিয়াম কূটনীতি’ অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর শুরু হয়েছিল ১৯৮০-এর দশকে। ১৯৭৮ সালে সোমালিয়ায় মোগাদিশু স্টেডিয়াম নির্মাণের মাধ্যমে এর সূচনা হয়, যা পরবর্তীতে বেনিন (১৯৮২) এবং গাম্বিয়াতেও (১৯৮৪) প্রসারিত হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই চর্চা কিছুটা কমে এলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সরকার এটিকে আবার নতুন করে শুরু করেছে। আইভরি কোস্টে অনুষ্ঠিত ২০২৩ আফ্রিকা কাপ অফ নেশনস-এর ছয়টি ভেন্যুর মধ্যে তিনটিই ছিল চীনের উপহার।

গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, যে ১৬টি দেশ চীনের তৈরি মাঠে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের আয়োজন করছে, তারা কেউই তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেয় না, যা বর্তমানে চীনের সবচেয়ে বড় ভূ-রাজনৈতিক সংকট। এমনকি বুরকিনা ফাসোর মতো দেশ ২০১৮ সালে তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পরই চীনের কাছ থেকে ক্রীড়া অবকাঠামো নির্মাণের সুবিধা পেয়েছে।

চীনের এই বিনিয়োগ কেবল ক্রীড়া ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। হাসপাতাল, স্কুল এবং রেলপথ নির্মাণের মতো বড় প্রকল্পেও তারা যুক্ত হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা আফ্রিকার ব্যবসায়িক জগতে নিজেদের দরজা খুলে দিয়েছে এবং কঙ্গোর খনি থেকে কোবাল্ট উত্তোলনের দৌড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করেছে। এই খনিজটি ব্যাটারি, অস্ত্র এবং মহাকাশযান তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যার জন্য চীন ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। বিশ্বের শীর্ষ পরাশক্তি হওয়ার দৌড়ে এটি চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

আফ্রিকা ছাড়াও চীন আমেরিকা মহাদেশেও তাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করেছে। কোস্টারিকার জাতীয় স্টেডিয়াম, যা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ আয়োজন করবে, সেটিও চীনের একটি অনুদান। ২০০৭ সালে কোস্টারিকা তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার এক বছর পরেই এই স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু হয়। একইভাবে, এল সালভাদর ২০১৮ সালে তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাঁচ বছর পর ২০২৩ সাল থেকে চীনের সহায়তায় তাদের জাতীয় স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে। স্পষ্টতই, ফুটবল অবকাঠামো এখন চীনের বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।