ঢাকা, শুক্রবার, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৬ জুন ২০২৫, ০৯ জিলহজ ১৪৪৬

ফুটবল

অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া হালিম এখন মালয়েশিয়ার অনুপ্রেরণা

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:০৮, জুন ৩, ২০২৫
অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া হালিম এখন মালয়েশিয়ার অনুপ্রেরণা ফয়সাল হালিম/সংগৃহীত ছবি

মাত্র ১৩ মাস আগে পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত কেনাকাটায় বেরিয়ে এমন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন, যা ফয়সাল হালিমের জীবন আমূল বদলে দেয়। মালয়েশিয়ার কোটা দামানসারা এলাকার এক মলে তার গায়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি অ্যাসিড নিক্ষেপ করে।

এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং তাকে চারবার অস্ত্রোপচার ও আইসিইউতে থাকতে হয়।

ওই ঘটনা স্মরণ করে ফয়সাল বলেন, “আমি ভয় পাই না, তবে চাই না এমন কিছু আবার হোক। তাই এখন আর বাইরে যাই না। ট্রেনিং শেষে সোজা বাসায় যাই – আমার স্ত্রী, সন্তান আর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাই। ”

এই ঘটনার ঠিক তিন মাস আগে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, এশিয়ান কাপে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে গোল করে মালয়েশিয়ার ফুটবল ইতিহাসে নিজের নাম উজ্জ্বল করেন ফয়সাল। ম্যাচটি ৩-৩ গোলে ড্র হলেও, ফয়সালের গোলটি ছিল চোখ ধাঁধানো—বায়ার্ন মিউনিখের ডিফেন্ডার কিম মিন-জে ও গোলকিপার জো হেয়ন-উ-কে কাটিয়ে দারুণ ফিনিশ।

তবে ভাগ্য নির্মম। ২০২৩ সালে সেলাঙ্গর ক্লাবে যোগ দেওয়ার পর জীবন যেখানে সাফল্যের পথে, সেখানে অ্যাসিড হামলা তার মুখ, গলা, কাঁধ, হাত ও বুক ঝলসে দেয়। কথা বলা কঠিন হয়ে পড়ে, দেহের নড়াচড়া সীমিত হয়ে যায়। দুই মাস ফুটবলের বলও স্পর্শ করতে পারেননি।

ফয়সালের কাছে ওই দিনগুলো ছিল দুর্বিষহ। তার ভাষায়, “হাসপাতালে প্রতিটি মুহূর্ত ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। আমি ভেঙে পড়েছিলাম। হাসতে পারি না এখন ঠিকমতো। ”

অবসর নেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন ফয়সাল। কিন্তু ভক্তদের অফুরান ভালোবাসা ও পরিবারের সাহচর্য তাকে ফিরিয়ে আনে। তার স্ত্রী প্রতিদিন ভক্তদের পাঠানো মেসেজ পড়ে শোনাতেন হাসপাতালে।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে সেলাঙ্গরের সঙ্গে ধীরে ধীরে অনুশীলনে ফেরেন। হামলার ৯০ দিনের মাথায় মালয়েশিয়ান এফএ কাপ সেমিফাইনালে বেঞ্চে ফিরলেন।

মাঠে পুরোপুরি ফিরে আসতেও সময় লাগলো। সেলাঙ্গর বা জাতীয় দলের এক নম্বর তারকা হিসেবে আগের মতো এখনো হয়তো ফিরেননি, কিন্তু আত্মবিশ্বাসে পূর্ণ ফয়সাল জানান, “আমি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। শুধু খেলার সুযোগ চাই। ”

২০২৫ সালের মার্চে কেলানতানের বিপক্ষে দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক করেন—উদযাপনে ছিল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিখ্যাত ‘সিউ’ স্টাইল। পরে নেপালের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মালয়েশিয়ার হয়ে—অ্যাসিড হামলার পর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

মালয়েশিয়ার কোচ পিটার ক্লামোভস্কি বলেন, “ফয়সাল দুর্দান্ত উইঙ্গার। সে মাঠে ও মাঠের বাইরে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। ”

১০ জুন ভিয়েতনামের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ফয়সাল আছেন দলে। তার স্বপ্ন—মালয়েশিয়াকে আবার এশিয়ান কাপে পৌঁছে দেওয়া।

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।