ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হাকালুকিতে কমছে পরিযায়ী পাখি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২
হাকালুকিতে কমছে পরিযায়ী পাখি একাকী উড়ে চলেছে উত্তরে খুন্তেহাঁস। ছবি: ওমর শাহাদাত

মৌলভীবাজার: পাখি শিকারের কারণে দেশের বৃহৎ হাওর হাকালুকিতে সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মতো এবারও পরিযায়ী পাখি কম এসেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাখিশুমারিতে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২০২০ সাল ছাড়া প্রতিবছর মোট পাখির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমতে দেখা গেছে। শুমারিতে অংশ নেওয়া পাখি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাখির সংখ্যা ছিল স্পষ্টতই আগের তুলনায় কম। তারা এজন্য কিছুটা দেরিতে শুমারি শুরু হওয়া ও পাখি শিকারসহ বিভিন্ন কারণের কথা বলেছেন।

তবে হাকালুকিতে অনুষ্ঠিত পাখিশুমারির সুস্পষ্ট তথ্য জানা যায়নি। এ বছরের পাখিশুমারির যাবতীয় তথ্য পরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে বলে পাখিশুমারিতে অংশ নেওয়া পাখি পর্যবেক্ষকরা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব সূত্র জানায়, প্রথমবারের মতো সরকারি অর্থায়নে গত ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি হাকালুকি হাওরে দুদিনের পাখিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এবং স্থানীয় বেসরকারি সংগঠন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন (পিওজেএফ) যৌথ উদ্যোগে হাকালুকিতে এবারের শুমারির আয়োজন করে। সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব (বিবিসি)। প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের নেতৃত্বে তিন সংগঠনের সদস্যরা যৌথভাবে এ পাখিশুমারি চালান।
ডানা মেলেছে ধলাগলা-মাণিকজোড়।  ছবি: তারিক হাসান

ইনাম আল হক জানান, পাখিশুমারিকালে হাওরের ৪৫টি বিলে গত বছরের চেয়ে অনেক কম পাখি দেখা গেছে। গত কয়েক বছর শুমারিকালে হাওর, খাল ও বিলে কয়েকটি মৃত হাঁস পাওয়া গিয়েছিল। এবারও হাওরের নাগোয়া বিলে চখাচখি প্রজাতির একটি পাখি মৃত দেখা গেছে।

পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ তুলে ধরে ইনাম আল হক বলেন, হাওরের বেশির ভাগ বিলে এখন পানি অনেকটা কমে গেছে। তাই পাখির সংখ্যাও কমেছে। এবার শুমারি করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এবার শুধু কম পানিতে থাকা পাখির দেখা মিলেছে। সদ্য সমাপ্ত শীত মৌসুমে দুর্বৃত্তরা হাওরে বিষটোপ দিয়ে পাখি নিধন করেছে। পাখিরা কোথাও তাদের জীবন বিপন্ন মনে করলে আর সেখানে ভিড় করে না।

হাকালুকিতে পাখির সংখ্যা বাড়াতে হলে বিষটোপ ও অন্যান্যভাবে চলা শিকার বন্ধ করতে হবে। পাখির অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করে তা সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।

পাখিশুমারিতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হকের জানান, শুমারির কাজ শেষ করে পাখির তথ্য তারা আইইউসিএনকে দিয়েছেন। এটি সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত প্রথম শুমারি। তাই তথ্য প্রকাশের বিষয়টি সরকারি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাবে। পরে পাখির সংখ্যার বিষয়ে আইইউসিএন ও বন বিভাগ তথ্য দেবে।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে হাকালুকি হাওর। ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি দুদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ছয় সদস্যের দুটি দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে হাওরের ছোট-বড় ৪৫টি বিলে পাখিশুমারির কাজ পরিচালনা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২
বিবিবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।