ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হারিয়ে যাচ্ছে হাওর-দ্বীপের জীববৈচিত্র্য

ড. ফোরকান আলী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৩
হারিয়ে যাচ্ছে হাওর-দ্বীপের জীববৈচিত্র্য

বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের সংখ্যা ব্যাপকহারে কমে যাওয়ায় হুমকির মুখে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য। দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা ও দেশের বিভিন্ন জলাভূমিকে জীববৈচিত্র্যও সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এগুলো হলো-মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর, টেকনাফ উপদ্বীপ সৈকত, সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ, সিলেটের টানগওয়ার হাওর এবং মাজাট হাওর।

হাকালুকি হাওর
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এলাকায় হাওর অববাহিকার বিস্তীর্ণ উর্বর সমতলভূমি বহুপ্রজাতির জলজ প্রাণীর বাসস্থান। এসব এলাকায় রয়েছে ৪৭টি হাওর এবং ৬ হাজারেরও বেশি মিঠা পানির হ্রদ-যার অর্ধেকই মৌসুমি পানি ধরে রাখে।

মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত হাকালুকি হাওর ৮০টির বেশি বিলের সঙ্গে যুক্ত। হাওরে পানি আসে জুরি, কান্টিয়ালা ও কুইয়াছড়ি নদী থেকে। পানি বের হয়ে যায় কুশিয়ারা নদী দিয়ে। বর্ষাকালে পুরো এলাকা প্লাবিত হয় এবং বিলগুলো একাকার হয়ে বিশাল হ্রদ বা হাওরে পরিণত হয়। ১৮ হাজার হেক্টর আয়তনের এই হাওরটি দেশের বৃহত্তম হাওর।

টেকনাফ উপদ্বীপ
বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় সৈকত এটি। উপদ্বীপটি চার প্রজাতির কাছিমের প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত। অতিথি পাখিরা এখান দিয়েই উড়ে যায়। শীতকালে এখানে প্রায় ১৮ প্রজাতির বিপুল সংখ্যক অতিথি পাখির সমাগম হয়।

সেন্টমার্টিনস দ্বীপ
বিশ্বের দুর্লভ কয়েকটি এলাকার একটি হচ্ছে সেন্টমার্টিনস। এখানে প্রবাল শৈবালের প্রাচীর এক মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। এটি অতিথি পাখিদেরও বিচরণভূমি।

কুতুবদিয়া দ্বীপ
কুতুবদিয়া দ্বীপ দেশের অন্য দ্বীপের চেয়ে আলাদা। সাগর ঘেঁষা এ দ্বীপটি জলজ ও উভচর প্রাণীদের বিচরণ ভূমি ছিল। বর্তমানে এখানে কিছু জলজ পাখি দেখা যায়। বাকিরা হারিয়ে গেছে।

ধলঘাটা মাতারবাড়ী উপদ্বীপ
মহেশখালী জেলার দু’টি ইউনিয়নকে নিয়ে এ দ্বীপ। বঙ্গোপসাগর ও কুহেলিয়া নদীবেষ্টিত এ দ্বীপ এখন নদী ভাঙনে ক্ষীণ হয়ে গেছে। এ দ্বীপে এক সময় নানা জীববৈচিত্র্যের লীলাভূমি ছিল। এখন সব রূপকথার গল্পের মতো। সব হারিয়ে গেছে।

সোনাদিয়া দ্বীপ
সোনাদিয়া ম্যানগ্রোভ বন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবনের চেয়ে ভিন্নকরমের। এই দ্বীপটি জলজ পাখিদের বিচরণ ভূমি।

জীববৈচিত্র্যের লীলাভূমি এই হাওর ও দ্বীপগুলো আজ নানামুখী সংকটের শিকার। এখানে ম্যানগ্রোভ বনের গাছগুলি অবাধে কাটা হচ্ছে। হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবে সামুদ্রিক শামুক ব্যাপকভাবে আহরণ করা হয় এখান থেকে। নিয়মিত সামুদ্রিক কাছিম শিকার করা হয়। অনিয়ন্ত্রিতভাবে গরু-মহিষ চরিয়ে ম্যানগ্রোভ বন ও সৈকতের গাছপালা বিনষ্ট করা হয়। কৃষির প্রয়োজনে নলখাগড়া ও জলাভূমির বন উজাড় করা হচ্ছে। এসব কারণে জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির সম্মুখীন।

আরুয়া বিলে পাখি নেই
মানিকগঞ্জ জেলার আরুয়া ইউনিয়নের উত্তরে ইছামতি, দক্ষিণে পদ্মা-যমুনা, পশ্চিমে শিবালয় হাইওয়ে আর পূর্বে হরিরামপুর থানা। এই আরুয়া বিলে আগে শীত মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখা যেত। অতিথি পাখি ছাড়াও দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য সবার দৃষ্টি কাড়তো। কালো বক, মদনটাক, কাস্তেচরা, কোদালী বক প্রভৃতির ঝাঁক দেখা যেত এখানে। কিন্তু এখন আর এগুলো দেখা যায় না।

কারণ আরুয়া বিলে আগে নিয়মিত পানি প্রবাহ ছিল। কিন্তু ক্যানেলের মুখ বন্ধ হয়ে যাওযায় শুকনো মৌসুমে আর এখানে পানি থাকে না। বর্ষার সময় আবার বিলটি কানায় কানায় ভরে যায়। এই বিলটিতে যখন পানি থাকে তখন বিপুল সংখ্যক পাখি দেখা যায়। শুকিয়ে গেলে আর দেখা যায় না। বিলটির জীববৈচিত্র্য ধরে রাখার জন্য অন্তত কিছু এলাকায় সারা বছর পানি থাকা উচিত। যে সব এলাকায় পানি থাকবে সেখানে মাছ চাষও করা যেতে পারে। আর যে জমিতে সব সময় পানি ধরে রাখা সম্ভব নয় সেখানে চাষাবাদ করা যায়। এছাড়া পরিত্যক্ত জমিতে ব্যাপকভাবে গাছ লাগানো যেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৩
এএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।