ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

উপকূল থেকে উপকূলে

ক্ষয়ক্ষতির গড়মিল, মাথাপিছু ৩৪৬ গ্রাম চাল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৩
ক্ষয়ক্ষতির গড়মিল, মাথাপিছু ৩৪৬ গ্রাম চাল

Rafiqul-islamতালা (সাতক্ষীরা) থেকে : তালা ছাড়াও সাতক্ষীরার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় প্রতি বছরই জলাবদ্ধতা থাকলেও ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকায় গড়মিল থেকেই যাচ্ছে। সরকারি হিসাবের সঙ্গে বেসরকারি হিসাবের বিস্তর ফারাক।



মাঠের পূর্ণাঙ্গ তথ্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে না থাকায় সরকারের উর্ধ্বতন মহলের কাছে পৌঁছাচ্ছে না প্রকৃত অবস্থার চিত্র। ক্ষতিগ্রস্থদের ভরসা জিআর (জেনারেল রিলিফ) চাল। এবার মাথাপিছু এ চালের বরাদ্দ মাত্র ৩৪৬ গ্রাম।

তালা উপজেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, উপজেলার ১২ ইউনিয়নে ৬০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। আর বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে এ সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজার। এদের জন্য এখন অবধি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৪৫ মেট্রিক টন চাল। এ চাল প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে সমানভাবে বন্টন করা হলে সরকারি হিসাবে মাথাপিছু ৭৫০ গ্রাম। অন্যদিকে বেসরকারি হিসাবে মাথাপিছু ৩৪৬ গ্রাম করে পড়েছে।

ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব উর্ধ্বতন মহলে পৌঁছাচ্ছে না বলেই কী ত্রাণ বরাদ্দ কম আসছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যথাযথভাবে মাঠের তথ্যকেন্দ্রে পৌঁছাতে কোনো সমস্যা নেই। সরকারি নির্দিষ্ট ফরমেই সঠিক তথ্য পাঠানো হয়। তবে ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় ত্রাণ বরাদ্দ অনেক কম।
upokul_bg
জনবলের অভাবে মাঠ থেকে তথ্য পেতে সমস্যা হয়। অনেক সময় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের কাছ থেকেও সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। যাচাই-বাছাই করে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক বিবরণ উর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হয়। তবে ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় বরাদ্দ একেবারেই কম। ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য আরও বরাদ্দ প্রয়োজন।

স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, উপজেলা প্রশাসনের কাছে জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্থদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যন নেই। বাংলানিউজ সরেজমিন তথ্যসংগ্রহে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে এমনই প্রমাণ পেয়েছে। ত্রাণ ও পূনর্বাসন দপ্তর দায়সারা বিবরণ তৈরি করে রেখেছে। যার সঙ্গে মাঠের চিত্রের কোনো মিল নেই। কৃষি, স্বাস্থ্য, মৎস্য, মাধ্যমিক শিক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে জলাবদ্ধতায় ক্ষয়ক্ষতির কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

জলাবদ্ধতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির বিবরণ জানতে চাইলে তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে মৌখিকভাবে বাংলানিউজকে বলা হয়, মাত্র ৭-৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

বাংলানিউজের কাছে থাকা মাঠের বেশ কটি প্লাবিত বিদ্যালয়ের উদাহরণ তুলে ধরা হলে ওই শিক্ষা কার্যালয় থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়। তৈরি হয় জলাবদ্ধ এলাকার ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে, বারান্দায় ও শ্রেণিকক্ষে পানি ওঠার বিবরণ।

সূত্র বলছে, জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মানুষ ত্রাণের চেয়ে পানি অপসারণের ওপর গুরুত্ব দিলেও তাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। জালালপুর, খলিলনগর, ইসলামকাঠি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থরা জানিয়েছেন তারা কোনো ধরনের ত্রাণ সহায়তা পায়নি। এমনকি জনপ্রতিনিধিরা তাদের খোঁজও নেয়নি। ফলে দু:সময়ে তাদের দিন কাটছে খেয়ে-না খেয়ে।

খলিলনগর ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর গ্রামের জরিনা বেগমের বাড়ি জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকলেও কোনো সহায়তা পাননি। ঘরে চাল নেই। স্বামী শাহজাহান মিয়া পঙ্গু বলে কাজ করতে পারেন না। একই এলাকার নজরুল গাজীর স্ত্রী সাহিদা বেগমেরও একই অবস্থা।

দিন আনা দিন খাওয়া এ মানুষগুলো জলাবদ্ধতার কারণে আরও বেশি সংকটে পড়েছে। জালালপুরের কানাইদিয়া, ইসলামকাঠির খরাইল, ভবানীপুর, কাজীডাঙ্গা এলাকায়ও কেউ ছিটেফোটা সাহায্য পেয়েছে, আবার কেউ পায়নি মোটেই।

ইসলামকাঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. গোলাম ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে এলাকায় কাজ নেই। মানুষের জীবিকা মারাত্মক সংকটে। এ সময়ের জন্য জরুরি সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে হবে। এ ছাড়াও কপোতাক্ষ নদীর উপচে পড়া পানি অপসারণের উদ্যোগ নিতে হবে।

তবে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক বেসরকারি সংস্থা ও স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক চিত্র উর্ধ্বতন মহলে যায় না। সরকারি ফরমে ‘নিয়ম মেনে’ তথ্য পাঠাতে হয় বলে সব তথ্য উল্লেখ করা সম্ভব হয় না। ফলে মাসের পর মাস ভোগান্তিতে থাকে বহু মানুষ।

স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার ওপর যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ায় বেসরকারি সহায়তার ক্ষেত্রেও দেখা দিচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতা। ফলে বেসরকারি সহায়তাও এলাকায় তেমনটা পৌঁছাচ্ছে না।

আর এ সবকিছুর ভার গিয়ে পড়ছে একেবারে সাধারণ মানুষের ওপর। জলাবদ্ধ এলাকার বহু মানুষ তিন বেলা ঠিকভাবে খেতে পারছে না। আর দিনের পর দিন গেলেও তাদের ভোগান্তির দিন যেন ফুরাচ্ছেই না।

বাংলাদেশ সময় ০৪০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৩
আরআইএম/এসএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।