ঢাকা, রবিবার, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

চা বাগানের ‘পাহাড়ি বনমুরগি’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৩
চা বাগানের ‘পাহাড়ি বনমুরগি’

মৌলভীবাজার: হেমন্তের সকাল। ধীরে ধীরে বইতে শুরু করেছে তীব্র শীতের আমেজ।

শিশির তার জলজ-সৌন্দর্য নিয়ে ঘাসে ঘাসে বেশ ভালোভাবেই প্রভাবিত। হাঁটতে গেলে অনায়াসে ভিজে যায় পা! 

পা ভেজার এমন পর্বগুলোর শেষপ্রান্তে সেই কাঙ্ক্ষিত প্রাণীর সঙ্গে চূড়ান্ত দেখা!

চা বাগান আর পাহাড়ি বন -এই দুটো একে অপরের দারুণ পরিপূরক। যেখানে চা বাগান তার পাশেই যদি পাহাড়ি বন থাকে তাহলে তা নানান প্রজাতির জীববৈচিত্র্যের জন্য উত্তমতম স্থান।  

এর ফলে বন্যপ্রাণীরা পাহাড়ি বন থেকে কিছু সময়ের জন্য অদূরবর্তী চা বাগানের সীমানার অতি নির্জন স্থানে প্রবেশ করে থাকে। যেখানে ‘মানুষ’ নামক বিচিত্র প্রাণী তাকে আর বিরক্ত করার সুযোগ পায় না।


তখন কেবল ভোরের আলো ফুটেছে! ঘন সবুজ ঘাসের ভেতর শিশিরের আবরণ ভেদ করে চা বাগান আর পাহাড়ি বনের মাথায় চলে যেতে হলো। এখানেই চা বাগানের শেষ সীমানা। আর পাহাড়ি বনের একটা অংশের শুরু।  
স্থানীয়রা চা-আড্ডায় বলেছিলেন ‘এখানেই ভোরের দিকে পাহাড়ি মোরগ নামে!’... এই বাক্যটি এতোটাই আকর্ষণীয় ছিল বাক্যটি যে, শোনার পর থেকে সেই বিরল বস্তুটির তীব্র আগ্রহ আর উত্তেজনায় রাতের ঘুম সত্যিই উবে গেয়েছিল! কখন ভোর হবে! কখন ভোরের আলো ফুটবে!

ভোর কেটে গিয়ে তখন সকাল। হেমন্তের আলোয় ঝকঝক করছে চারদিক। ছবি ধারণের প্রয়োজনীয় সকল বস্তু কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যথাস্থানে পৌঁছানো গেল। তারপর ছবিযন্ত্র তাক করে প্রতীক্ষার প্রহর গোনা! কখন আসবে সেই বিরল বস্তু?

 প্রায় ঘণ্টা দুই কেটে গেল। সেই কাঙিক্ষত প্রাণীর দেখা নেই। এদিক-ওদিক ছবিযন্ত্র ঘুরিয়ে পাখি, প্রজাপতিসহ অন্যান্য বস্তুর ছবি ধারণের অনাগ্রহী চেষ্টা! ঘড়ির কাটা চার ঘণ্টার কাছাকাছি। ধৈর্যের বাঁধে এসে আঘাত!

সেদিনের মতো ফিরে আসার সিদ্ধান্ত। তবে ছবিযন্ত্র তখনও ব্যাগে ভরা হয়নি। হাতে আর গলায় ঝুলছে। কিছুদূর এগুতেই হঠাৎ ডানা ঝাপটানো শব্দ! দ্রুত ডানা মেলে কালো রঙের কি জানি একটা দূরের গাছের ডালে গিয়ে বসলো। সে ভয় পেয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য উঁচু ডালের উপর কিছুক্ষণের স্থাপনা গড়েছে।

 এ অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্যে দ্রুত মাটিতে বসে পড়ে ধীরে ধীরে একটু একটু করে কচ্ছপ গতিতে তার দিকে যাওয়ার দুর্বার প্রচেষ্টা। মনের কোণে ভয়, শঙ্কা – যদি উড়ে যায়! তাহলে তো সকল কষ্টই বৃথা!

অবশেষে চা বাগানের ‘পাহাড়ি বনমুরগি’র আলোকচিত্র ধারণপর্ব সম্পন্ন হলো। এ প্রতিবেদনে বনমোরগের স্ত্রী প্রজাতির ছবি প্রকাশিত হয়েছে।

ভোরের দিকে চা বাগানের নির্জন স্থানে বনমোরগের ডাক শোনা যায়। তবে তাদের সহজে চোখে দেখা যায় না। এরা অতি চতুর স্বভাবের পাখি। মানুষের পায়ের শব্দ পাওয়া মাত্রই এরা দ্রুত ঝোপ বা জঙ্গলের ভেতরে গিয়ে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যায়।


‘বনমোরগ’-কে কেউ কেউ ‘বনমুরগি’ বা ‘জংলি মুরগি’ বলে থাকেন। এরা সত্যি বিরল প্রাণী। সহজে পাবেন না কিছুতেই। এর ইংরেজি নাম রেড জাঙ্গল ফাউল এবং  বৈজ্ঞানিক নাম গ্যালাস গ্যালাস মুরঘি Gallus gallus murghi। বনমুরগি লম্বায় ৪২ থেকে ৪৬ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। আর এদের ওজন প্রায় ৬০০ থেকে  ৮০০ গ্রাম।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বাংলাদেশ এর ‘রেডলিস্ট’-এ বনমোরগ কিংবা বনমোরগি ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত।  

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী এই বিশেষ পাখিটি সংরক্ষিত। একে প্রকৃতি থেকে ধরা, পাচার করা, পালন করা কিংবা এর মাংস খাওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধে হতে পারে জেল-জরিমানা।   

বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৩
বিবিবি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।