ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

রিফাইনারির আগে স্বর্ণ রপ্তানি শুরুর আহ্বান বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৩
রিফাইনারির আগে স্বর্ণ রপ্তানি শুরুর আহ্বান বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: দেশে রিফাইনারির মাধ্যমে স্বর্ণ রপ্তানি শুরুর আগে বাজুসের কারখানার মাধ্যমে রপ্তানি শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। একইসঙ্গে জুয়েলারি শিল্প সমিতিকে আরও শক্তিশালী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সোমবার (১৭ জুলাই) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাজুসের ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধান অতির বক্তব্যে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, গার্মেন্টসের চেয়েও অনেক বেশি রপ্তানি আয় সম্ভব স্বর্ণ থেকে। আমাদের বাংলাদেশে স্বর্ণ শিল্পে যারা আছেন তাদের সংঘটিত করে আমরা যদি রপ্তানি করি, তাহলে গার্মেন্টসের চারগুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা পেতে পারি। গার্মেন্টস খাতে এক কন্টেইনার পণ্য পাঠালে ২০ থেকে ৩০ হাজার ডলার পাবো। স্বর্ণ শিল্পীরা স্বর্ণ তৈরি করে যদি এক কন্টেইনার পাঠান সেখান থেকে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আমরা পেতে পারি।

বাংলাদেশের কারিগরদের বিশ্বজুড়ে সুনাম রয়েছে। হাতের কাজে তারা পৃথিবীর সেরা। আমি যতদূর জানি বাংলাদেশ থেকে অনেক কারিগর বিদেশে গিয়ে কাজ করছেন। যখন তারা শুনতে পেরেছেন বাংলাদেশেও একটি রিফাইনারি হবে, সবাই তাকিয়ে আছেন কখন এটা শুরু হবে। কখন আমরা বাংলাদেশে গিয়ে কাজ করব।

তিনি বলেন, আমি জুয়েলারি শিল্প সমিতিকে ধীরে ধীরে আরও শক্তিশালী হতে বলব। এই শিল্পের যে সম্ভাবনা, প্রধানমন্ত্রী ক্ষণে ক্ষণে সচিবালয়ে স্বর্ণ রিফাইনারির খবর নেন। রিফাইনারিতে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আজ যারা শুধুমাত্র স্বর্ণ বিক্রি করেন, আমি নিশ্চিত তারা সবাই এক একজন শিল্পপতি হতে পারেন। আপনাদের এই স্বর্ণ সারা বিশ্বে রপ্তানি করতে পারবেন।

তিনি বলেন, আজকের এই শুভক্ষণে আমি শুধু একটি কথা বলব, বাজুসের প্রেসিডেন্টের একটি স্বপ্ন, তিনি একটি স্বর্ণের পার্ক বানাচ্ছে বসুন্ধরা সিটিতে। একটি রিফাইনারি করছেন। আমি বলবো বাজুসের ব্যবসায়ীরা একটি শিল্প কারখানা করেন- যেখানে সব স্বর্ণ শিল্পীদের সব স্বর্ণ এনে রপ্তানি করা হবে এবং সবাই এর সুফল পাবে।

এসময় তিনি ৪০ হাজার স্কয়ার ফুটের একটা ফ্লোর উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন। বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, বাজুসের ব্যবসায়ীরা যদি শিল্প কারখানা করে তাহলে আমি ৪০ হাজার স্কয়ার ফুটের একটা ফ্লোর দিতে পারি ঢাকার বেশ পাশেই। বাজুসকে আমি এটি উপহার হিসেবে দিতে চাই। সেখান থেকে আপনারা সারা বিশ্বে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করেন।

দেশের পণ্য দেশে রাখলে হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে হবে। আমাদের স্বর্ণ শিল্পের যে সম্ভাবনা সেটা আপনাদের এগিয়ে নিতে হবে। আমি নিশ্চিন্ত, প্রধানমন্ত্রী ৫০ বছর পর একটি রিফাইনারির অনুমতি দিয়েছেন। অনেকেই বলেছিল বাংলাদেশ রিফাইনারি করতে পারবে তো! আমি দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে বলব, অন্যান্য দেশ পারলে আমরাও পারব। আমাদের জন্য এটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধ ও করোনার কারণে দেশ কিছুটা পিছিয়ে গেছে; তবে আশা করি এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে রিফাইনারির কাজ পুরো দমে শুরু হবে।

তিনি বলেন, বাজুসকে আমরা যে ফ্লোর দেবো, সেখানে উৎপাদন ও রপ্তানির কাজ শুরু করুন। ইচ্ছা করলে এক হাজার কর্মচারী দিয়ে কাজ করাতে পারবেন। ১২০০ মেম্বার ১০ জন করে হলেও ১২ হাজার লোক সেখানে কাজ করতে পারবে। এই স্বর্ণ রপ্তানি হলে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, আপনাদের অনেক অনেক সুবিধা হবে।

স্বর্ণ মেলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইসিসিবিতে যে স্বর্ণের মেলা হয়েছে সেটা বেশ সাড়া ফেলেছে। আমি বলব গতবার মেলা তিন দিন ছিল, এবার সাত দিন করুন। গতবছর অনেকে যেতে পারেনি। প্রতিবছর এখানে মেলা করুন। এতে করে দেশের স্বর্ণের বাজার সারা পৃথিবীতে চলে যাবে। স্বর্ণের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা যাবে।

আমি বিশ্বাস করি আগামী দিনে এদেশে যারা প্রসিদ্ধ স্বর্ণ ব্যবসায়ী, তারা রপ্তানির দিকে আরও অনেক বেশি এগিয়ে আসবেন। আমাদের রপ্তানি না হলে আমরা ডলার কোথা থেকে পাবো। আমাদের ডলারের মূল সোর্স হচ্ছে গার্মেন্টস ও বিদেশে যারা কাজ করেন, তারা। যখন স্বর্ণ আমরা রপ্তানি করবো তখন বাংলাদেশের জিডিপি ২ শতাংশ এগিয়ে যাবে। একইসঙ্গে আমাদের লাখ লাখ শ্রমিককে কাজে লাগাতে পারব।

তিনি বলেন, বাজুস যদি কারখানা করে কেরানীগঞ্জে তাদের একটি ফ্লোর দেওয়া হবে। সুতরাং এখান থেকেই শুরু হোক রপ্তানি। আমি মনে করি রিফাইনারি শুরু হওয়ার আগে আপনারা রপ্তানি শুরু করতে পারবেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর দেশে রিফাইনারি হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি এই স্বর্ণ রিফাইনারি আপনাদের অনেক সম্মান বৃদ্ধি করবে। আপনাদের সবাইকে ছোট হলেও কারখানা তৈরি করতে হবে। সেটা ২০০ ফুটের হোক তবুও একটা কারখানা করেন। সেখানে উৎপাদন করে রপ্তানি করুন। রপ্তানির জন্য সরকার প্রচুর সুযোগ সুবিধা দেবে। আমি নিশ্চিত এদেশের স্বর্ণ শিল্পের যে সুনাম সেটা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।

এসময় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান ও বাজুসের সাবেক সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম, বাজুসের সাবেক সভাপতি ও উদযাপন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ডা. দীলিপ কুমার রায়, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বাজুসের সহ-সভাপতি গুলজার আহমেদ ও বাজুসের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিজনেস এডিটর রহুল আমিন রাসেল উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৩
জিসিজি/এইচএমএস/এমএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।