ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পশ্চিমবঙ্গে বন্দুক হাতে স্কুলে ঢুকে পড়লেন যুবক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৩
পশ্চিমবঙ্গে বন্দুক হাতে স্কুলে ঢুকে পড়লেন যুবক

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় বন্দুক হাতে একটি স্কুলে ঢুকে পড়েন এক ব্যক্তি। ক্লাসরুমে ঢুকেই শিক্ষিকার টেবিলের ওপর রাখেন দুটি অ্যাসিড ভর্তি বোতল, সঙ্গে ছিল বোমাও।

 

বুধবার (২৬ এপ্রিল) পুরাতন মালদার মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। হতভম্ব হয়ে পড়ে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। শেষ পর্যন্ত আজহারউদ্দিন খান নামে এক ব্যক্তি ত্রাতার ভূমিকায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই যুবককে ধরে ফেলেন। এরপরই ঘটনাস্থলে এসে যায় পুলিশ।

মালদহের এই ঘটনার পেছনে গভীর চক্রান্ত ছিল বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই ঘটনার কিছু পরেই নবান্নে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, বাচ্চাদের পণবন্দি করতে বন্দুক হাতে স্কুলে ঢুকেছিল। কিন্তু পুলিশ, শিক্ষক ও সাংবাদিকেরা দারুণ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন।

ঘটনার দিন পুরাতন মালদার মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে আচমকা ব্যাগ কাঁধে ঢুকে পড়ে এক যুবক। তার ডান হাতে ছিল পিস্তল আর কাঁধে ছিল ব্যাগ। ক্লাস ঘরে ঢুকেই ব্যাগ থেকে দুটি মুখবন্ধ বোতল শিক্ষিকার টেবিলের ওপর রাখেন তিনি। ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখেন শিক্ষার্থীদের। বন্দুক দেখেই ভয় পেয়ে যায় শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় সূত্র জানা যায়, স্কুলে বন্দুক হাতে অতর্কিতে ঢুকে পড়া ব্যক্তির নাম রাজু বল্লভ। স্থানীয়দের অভিমত, রাজু মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে রাজুর দাবি, তার স্ত্রী ও পুত্র হারিয়ে গিয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাই এই পথ বেছে নিতে হয়েছে তাকে।

এদিকে স্কুলকর্তারা তখন স্থানীয় থানায় ফোন করে দেন। পুলিশ ঘিরে ফেলে স্কুল। কিন্তু, কেউই এগোনোর সাহস দেখাতে পারে না। উল্টোদিকে, জানালা দিয়ে পুলিশ দেখেই রেগে যান রাজু বল্লভ। বন্দুক উচিয়ে কথা বলার সময় আচমকা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্দুকবাজের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন ডিএসপি আজহারউদ্দিন।  

বন্দুক ধরা হাতটাকে উপরে করে দিলেও কম শক্তি দেখাননি বন্দুকবাজ। মাটিতে পড়ে যান রাজু। ততক্ষণে অন্য পুলিশ কর্মীরাও আজহারউদ্দিনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। রাজুকে গ্রেপ্তার করে স্কুলের বাইরে নিয়ে আসে পুলিশ। রাজুর কাছ থেকে একটি ছুরি উদ্ধার হয়। এরপরই স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

কোথা থেকে রাজু বন্দুক জোগাড় করলেন, এই ঘটনার নেপথ্যে রাজুর দাবি কতটা সত্যি, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব বলেছেন, পারিবারিক সমস্যা রয়েছে ওই ব্যক্তির। তাই বলে স্কুলে ঢুকে এমন কাণ্ড ঘটাবেন, সেটা কেউ ভাবতেই পারেনি। রাজুর কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, রাসায়নিক উপাদান উদ্ধার হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষার পরেই বিষয়টি সম্পর্কে বলা যাবে। তবে অভিযুক্ত রাজু বল্লভের মানসিক অবস্থা সম্পর্কেও এখনই কিছু পরিষ্কারভাবে বলা যাচ্ছে না। সমস্ত বিষয়টিই তদন্ত সাপেক্ষ।

মালদহের ডিএসপি আজহারউদ্দিন খান বলেন, থানাতেই ছিলাম। দুপুরে হঠাৎ খবর আসে হাইস্কুলে এক বন্দুকবাজ ঢুকে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই চলে যাই ঘটনাস্থলে। পুলিশ তখন স্কুল ঘিরে ফেলে। কিন্তু কেউই এগিয়ে যেতে পারছিলেন না। পুলিশ দেখলেই রেগে যান বন্দুকবাজ।  

তিনি জানান, আচমকা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্দুকবাজের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। হাতে অল্প চোট পেলেও বন্দুকবাজকে ধরতে পেরে খুশি তিনি।  

তাকে নিয়ে গর্ব করছেন পুলিশ কর্তারও। তবে সেই সময়ের কথা মনে করে সাহসী আজহারউদ্দিন জানান, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা ছাড়া সেই সময় মাথায় আর কিছু আসেনি। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে নিয়েছিলাম।  

আজহারউদ্দিনের বাড়ি কলকাতার পার্ক সার্কাসে। তার পরে পুলিশে চাকরি। বছর আড়াই আগে চাকরি সূত্রেই মালদহে যাওয়া। যে স্কুলে হামলা হয়েছে সেটি ডিএসপি হিসেবে তারই এলাকার মধ্যেই পড়ে।  

মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাই স্কুলের দেবাশীষ শীল নামে এক শিক্ষক বলেন, আমরা ভাবতে পারছি না যে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে। কেবলমাত্র প্রথম পিরিয়ডের ক্লাস শুরু হয়েছিল। সেই সময় স্কুলের একটি ছোট গেট খোলা ছিল। পিঠে ব্যাগ নিয়েই ওই ব্যক্তিকে ঢুকতে দেখি। এরপরই তিনি সপ্তম শ্রেণির একটি ক্লাসে ঢুকে পড়েন। সেখানে তখন একজন শিক্ষিকা ক্লাস নিচ্ছিলেন। তারপরই দেখি যে বন্দুক বের করে এবং হাতে বোমা নিয়েই তাণ্ডব শুরু করে দেয়। তখনই আমরা পুলিশকে খবর দিই। এমন ঘটনায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৩
ভিএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।