ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

গাছের পাতা থেকে বিদ্যুৎ, ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার 

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
গাছের পাতা থেকে বিদ্যুৎ, ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার  ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: মো. আবিদ আকরাম ও মো. নাজমুছ সাকিব। তারা দুই বন্ধু।

পড়েন বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণিতে। নগরের পতেঙ্গা এলাকার নৌবাহিনী নাবিক কলোনি-১ এ থাকেন আবিদ এবং নাবিক কলোনি-২ এ থাকেন সাকিব।

গত বছরের জানুয়ারিতে নবম শ্রেণির মূল্যায়ন পরীক্ষার প্রস্তুতিকালে হঠাৎ লোডশেডিং হয়। পরে দুই বন্ধু আলাপ করেন কিছু একটা করার। ভাবনা আর গবেষণাতেই অবশেষে আবিষ্কার করেন গাছের পাতা থেকে উৎপাদন করা যায় বিদ্যুৎ।

বিভিন্ন জার্নাল পড়ে তারা এ বিষয়ে ধারণা নেন। চাইনিজ একাডেমি অফ অ্যাগ্রিকালচারাল সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের বিভিন্ন গবেষণা, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বিভিন্ন গবেষণা পত্র বিশ্লেষণ করে তারা এ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।  

রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে দশটায় কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪৩তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ ২০২২ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বিজ্ঞান মেলা ও বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে ১২০টি প্রকল্প প্রদর্শিত হয়। মেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আবিদ আকরাম ও মো. নাজমুছ সাকিবের গাছের পাতা থেকে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়-এ প্রকল্পটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

তারা বলেন, আমাদের প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হলো উদ্ভিদের বৃদ্ধি-পরিচর্যা ও উদ্ভিদ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্ভিদের একটি পাতা থেকে ১৫০ ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। উদ্ভিদের একটি পাতায় খুব সহজে ১০০ ভোল্টের একটি এলইডি লাইট জ্বালানো যাবে। আমাদের দেশের আয়তনের ১৭ শতাংশ বনাঞ্চল। এ অঞ্চলের উদ্ভিদগুলোকে যদি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়, তাহলে লোডশেডিংমুক্ত হবে বাংলাদেশ।

‘এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনিস্টিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্ভিদ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাদের উচিত, বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প পথগুলো বেছে নেওয়া। আর সেক্ষেত্রে উদ্ভিজ্জ বিদ্যুৎ হতে পারে অন্যতম উৎস’, বলেন তারা।

ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের এসব আবিষ্কার ঘুরে দেখেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এসময় তাঁর নজর কাড়ে দুই বন্ধুর পাতা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পটি। তিনি বলেন, উদ্ভিদের পাতা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। উন্নত দেশগুলো এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে অনেক আগে থেকে। আর এ পদ্ধতি যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মতও। সম্প্রতি কম খরচে প্রাকৃতিক উপায়ে এ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একদল গবেষক।  

পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তৈরির জন্য বিশ্বজুড়ে চলছে নানান গবেষণা। এর মধ্যে সামুদ্রিক উদ্ভিদ থেকে জ্বালানি তৈরির চেষ্টা চলছে বেশি। জার্মানিতে এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে চলছে পরীক্ষাও। বিষয়টিকে বাড়তি গুরুত্বও দিচ্ছে দেশটি। এছাড়া নেদারল্যান্ডসের একদল বিজ্ঞানী জলমগ্ন ধানের মতো শস্যখেত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদ্ধতি বের করেছেন। এ পদ্ধতিতে ইতিমধ্যে তাঁরা গবেষণাগারে বিদ্যুৎও উৎপাদন করেছেন।  

উদ্ভিদ অনেক সময় নিজের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শক্তি উৎপাদন করে। এ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ‘প্ল্যান্ট-ই’ নামের বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২ 
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।