ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা এখন পোশাক খাত নির্ভর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২২
কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা এখন পোশাক খাত নির্ভর বক্তব্য দেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান

চট্টগ্রাম: দেশের কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা এখন পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। আগামীদিনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ভিশন তৈরি করেছে, তা বাস্তবায়নে পোশাকখাতের গুরুত্ব অপরিসীম।

তবে এখাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়ন আর অগ্রগতির গল্পগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরতে না পারলে সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো কঠিন হয়ে যাবে।

রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামে বিজিএমইএর সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান এসব কথা বলেন।

খুলশীর বিজিএমইএ ভবনের মাহাবুব আলী হলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।  

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, জিডিপিতে কৃষির অবদানের পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রবাহে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তা হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প, এ খাতের উদ্যোক্তা আর শ্রমিক ভাই বোনদের। জিডিপিতে পোশাক শিল্পের অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। রফতানি আয়ে ৮১ শতাংশ অবদান রাখা এ শিল্পটি প্রত্যক্ষভাবে ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভর করে সহায়ক বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠেছে। ব্যাংক, বিমা, বন্দর, হোটেল, পর্যটন, প্রসাধন প্রভৃতি খাত প্রসার লাভ করেছে। এসব খাতের মাধ্যমে সরকারের বিপুল রাজস্ব আয় হচ্ছে।  

নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল অর্জন এবং বর্তমান টেকসই প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের এ শিল্পটি নীরব ভূমিকা পালন করে চলছে। আর তাই পোশাকখাত আজ আমাদের জাতীয় শিল্প। এ শিল্পের গৌরব ও সুফলের ভাগীদার সবাই, সমগ্র দেশবাসী।  

তিনি বলেন, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা ছাড়াও বাংলাদেশ সর্বোচ্চসংখ্যক গ্রিন পোশাক কারখানার আবাসস্থল। বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্রিন কারখানার আবাসস্থল বাংলাদেশ, যেখানে ইউএসজিবিসি প্রত্যয়িত লিড (লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভাইরনমেন্টাল ডিজাইন) পোশাক কারখানার সংখ্যা ১৫৭টি। এগুলোর মধ্যে ৪৭টি লিড প্লাটিনাম-রেটেড এবং ৯৬টি লিড গোল্ড-রেটেড। ৫০০টির বেশি কারখানা লিড সনদপাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কোভিড মহামারির কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এক প্রচণ্ড বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। বিজিএমইএর জরিপ অনুযায়ী ১ হাজার ১৪৫টি কারখানার প্রায় ৩১৮ কোটি ডলার মূল্যের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতারা রফতানি করা পণ্যের দাম দেয়নি। অনেকে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারপরও বিজিএমইএ’র বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ও সরকারের নীতি সহায়তায় শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। আমরা প্রতিটি ক্রেতার সঙ্গে আলাদা-আলাদাভাবে আলোচনা করেছি। তাদের আস্থার সম্পর্কে ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছি। সেই সঙ্গে বিজিএমইএ’র নেতৃত্বে যে হেলথ প্রটোকল তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে তার সুফল হিসেবে আমরা শ্রমিকদের নিরাপদ রাখতে পেরেছি। এর সুফল হিসেবে ক্রেতারা আজ আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন, আমাদের রফতানি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। করোনা মাহামারি মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজটি শিল্পকে সেই কঠিন সময়ে টিকে থাকতে সহায়তা করেছে।  

পোশাক কারখানাগুলো এখনো কোভিড মহামারির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ১ বছরে সুতার দাম ৬০ শতাংশ বেড়েছে। কনটেইনার পরিবহন খরচ ৩৫০-৫০০ শতাংশ বেড়েছে। তা ছাড়া, ডাইস, কেমিক্যালের খরচ বেড়েছে ৪০শতাংশ। গত ৫ বছরে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম যথাক্রমে ৫৯ ও ১৩ শতাংশ বেড়েছে। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে কারখানার উৎপাদন খরচ দিন দিন বেড়েছে। এ সময়টিতে পণ্যের দরপতন মোটেই কাম্য নয়।

আমরা আগামী দিনে কোথায় নজর দেব, কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করা আমাদের জন্য কৌশলগতভাবে সঠিক হবে সেই বিষয়গুলো নিয়ে বিজিএমইএ বেশকিছু গবেষণা কাজ হাতে নিয়েছে বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) ও বে টার্মিনাল আমরা পরিদর্শন করেছি।  এপ্রিলে পিসিটির কাজ শেষ হবে। এরপর সেখানে তিনটি জাহাজ ভিড়তে পারবে। বে টার্মিনালে উল্লেখযোগ্য কিছু হয়নি, সময় লাগবে। বন্দরে অনেক বছরের পুরোনো কনটেইনারের স্তূপ আছে। এগুলো নিলাম হলে বা ধ্বংস হলে অনেক জায়গা বের হবে। বন্ড ও কাস্টমস যদি অযথা হয়রানি না করে সহযোগিতা করে তাহলে আমরা রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।

তিনি বলেন, যেসব পোশাক কর্মী এখনো করোনা টিকার আওতায় আসেনি তাদের জন্য ব্যবস্থা করা আছে। কারখানা মালিকদের বলা হয়েছে- দ্রুত যোগাযোগ করার জন্য।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২২
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।