চট্টগ্রাম: জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সব রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে-দলের চেয়ে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। একথা আমাদের মনে রাখতে হবে।
শুক্রবার (১৩ জুন) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সর্বস্তরের দায়িত্বশীলদের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব করে বলে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সরকার যখন এপ্রিলে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে, আমরা আশা করি জনগণের আকাঙ্ক্ষায় সমস্ত সংস্কারমূলক কাজ, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার—এসব সুষ্ঠুভাবে করার জন্য, ন্যূনতম যতটুকু সময় সরকারের প্রয়োজন হয়, সরকার তো সেসব বিবেচনা করেই সময়টা ঠিক করেছে, নাকি? খুব তাড়াহুড়ো করে করতে গেলে যদি সরকার বিচার ও সংস্কারের কাজটা পরিপূর্ণভাবে এবং দৃষ্টান্তমূলকভাবে করতে না পারে, তাহলে কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা হবে না।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কাঠামোটাকে এমনভাবে মেরামত করতে হবে যাতে যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা সেখানে ফ্যাসিবাদী আচরণের কোনো সুযোগ না পায়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধারণ করে, জনগণের আকাঙ্ক্ষার মূল্য দিয়ে তারা যেন দেশকে পরিচালনা করতে পারে—এমন প্রয়োজনীয় সংস্কার তো করা দরকার। এইটুকু সময় না দিলে, অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়ে গেলে, এসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ছাড়া যদি কোনো দল ক্ষমতায় আসে, তারা যতই ওয়াদা করুক না কেন, দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তারা এ সংস্কার করতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে নির্ধারিত রোডম্যাপে আমরা সবার সহযোগিতা করতে রাজি আছি। সেই সাথে আরেকটি কাজ গুরুত্বপূর্ণ—যারা এত লোকের জীবন নিল, যারা ১৭ বছর মানুষের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার কেড়ে নিল—তাদের বিচার হতে হবে। সেই বিচারের জন্য দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। সে বিচার শেষ হতে কিছুটা সময় প্রয়োজন।
নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে সহযোগিতার তাগিদ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচনের জন্য আমাদের সকলের সহযোগিতা করা উচিত, অংশগ্রহণ করা উচিত। আশা করি ঘোষিত সময়ের মধ্যে কমপক্ষে বিচারগুলো দৃশ্যমান হবে এবং প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
স্থানীয় নির্বাচনের দাবি তুলে ধরে জামায়াতের এই নেতা বলেন, একটা দাবি আমরা বলেছি—চাইলে সেটা এখনো সম্ভব। আমরা বলেছি, স্থানীয় নির্বাচনগুলো না হওয়ায় স্থানীয় সরকারে অনেক অনিয়ম, দুর্নীতি, অপরাধ বাসা বেঁধেছে। পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের কাজগুলো বিকৃত হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না হওয়ায়। আমরা মনে করি, সেই নির্বাচনও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হওয়া উচিত।
জামায়াতে সেক্রেটারি বলেন, আমাদের রাজনীতি, আমাদের ভোট কখন হবে আর কে যাবে—সেটি দিল্লি ঠিক করে দিয়েছে। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য—সবকিছু বিদেশ থেকে ঠিক করা হচ্ছে। তিনটা ভোট হয়ে গেল, দেশের জনগণ ভোট দিতে পারল না। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এমন একটি শক্তিশালী সরকার, এমন শক্তিশালী জন প্রতিনিধি দিয়ে পার্লামেন্ট গঠন করব, যে পার্লামেন্ট দিল্লির তাবেদারি না করে, মাথা উঁচু করে জন আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে দেশ পরিচালনা করবে। জামায়াতে ইসলামি সেই নির্বাচনে প্রতিটি আসনের জন্য প্রার্থী প্রস্তুত করেছে।
'নির্বাচন কাছে আসলে রাজনীতির অনেক মেরুকরণ হয়, বিভিন্ন দল, জোট, সমঝোতার রাজনীতি শুরু হয়। আমরা আশা করছি নতুন কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম না হোক, এদেশে আমাদের আদর্শ ও মূল্যবোধ ধ্বংস করতে না পারে। '
এমপি প্রার্থীর নাম ঘোষণায় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনের জন্য শাহজাহান চৌধুরীকে মনোনীত করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আমীর জননেতা আনোয়ারুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, মুহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জননেতা ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক জাফর সাদেক, শ্রমিক কল্যাণের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ ইসহাক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, এ আসনের বৈঠকের জন্য আমীরে জামায়াত মকবুল আহমদ সাহেবও গ্রেপ্তার হয়েছে। জাতির স্বার্থে, দ্বীনের স্বার্থে ও সমঝোতার স্বার্থে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। সেজন্য আমীরে জামায়াত নিজের আসনও জাতির স্বার্থে ছেড়ে দিতে পারেন বলে ঘোষণা করেছেন।
মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এ আসনের জন্য সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহাজাহান চৌধুরী অনেক বেশি পরিচিত। এ আসনের অতীতের সকল ত্যাগের চেয়ে আরও বেশি ত্যাগ স্বীকার করে ইতিহাস সৃষ্টি করার জন্য একটি সুন্দর বিজয়ের রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এবারে আমাদের স্বপ্ন সম্ভাবনার বাংলাদেশ। এবারে আমাদের স্বপ্ন ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত পরাজয়। তাই সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। ইনশাআল্লাহ, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।
মহানগরী আমীর ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনের মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আমি ইসলামী আন্দোলনের পূর্বসূরীদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আল্লাহ তাদের এ ত্যাগকে কবুল করুন। আমরা শহীদের এ ময়দানে সম্মিলিতভাবে কাজ করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে আল্লাহর সাহায্য কামনা করছি।
অধ্যাপক আহসান উল্লাহ বলেন, আমলে সালেহ হিসেবে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে এই আসনের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। আপনারা আগে থেকে কাজ করে আসছেন, আজকে প্রার্থী পেয়েছি তাই নতুনভাবে আবার ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতের কাছে দেশকে বন্ধক রেখে আজ দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। আওয়ামীলীগ যেভাবে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, এখন সংস্কার ছাড়া দেশে গণতন্ত্র ফিরে আনা অসম্ভব।
বিই/পিডি/টিসি