ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ব্যাংকিং

সরকারি ব্যাংকের মূলধন যোগানে রাষ্ট্রের লাভ নেই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
সরকারি ব্যাংকের মূলধন যোগানে রাষ্ট্রের লাভ নেই

ঢাকা: অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে বেড়েই চলেছে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তাদের দক্ষতা না বাড়িয়ে বছরের পর বছর জনগণের করের টাকায় মূলধন যোগান দিলেও তাতে রাষ্ট্রের কোনো উপকার হচ্ছে না।

২০১৭-১৮ অর্থবছরেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২,০০০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটেও বরাদ্দ ছিল ২,০০০ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের ১৪ জুন এই অর্থ ছাড় করেছে অর্থবিভাগ। তহবিল সহায়তা বাবদ বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।  

সুদ-ভর্তুকি বাবদ রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে ১০০ কোটি ও বাংলাদেশ কৃষিব্যাংককে ১৬৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। মূলধন ঘাটতি বাবদ সোনালী ব্যাংককে ৩০০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংককে ১০০ কোটি টাকা ও বেসিক ব্যাংককে ১০০০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।  

এছাড়াও পরিশোধিত মূলধন বাবদ গ্রামীণ ব্যাংককে ২২ লাখ টাকা এবং রাইট শেয়ারের চাঁদা বাবদ আইএফআইসি ব্যাংককে ১৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এবিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বছরের পর বছর ব্যাংকগুলোর মূলধন যোগান দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা লোকসান বা ক্ষতির রাষ্ট্রীয়করণ করছি। এতে রাষ্ট্রের কোনো উপকার হয় না। কিছু ব্যক্তিবিশেষ লাভ করেছে। এক অর্থে বলা যায়, মূলধন যোগানের মধ্য দিয়ে লাভের বিরাষ্ট্রীয়করণ আর ক্ষতির রাষ্ট্রীয়করণ করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক-সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষিব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমান ৭,২৫৩ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৭৭৯ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ ২,৯৬২ কোটি টাকা, সোনালীর ২,৫৫৮ কোটি টাকা ও রূপালী ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ ৬৩৮ কোটি। আর অগ্রণী ব্যাংকের ৪৪৩ কোটি ও জনতা ব্যাংকের ৭০ কোটি টাকা মূলধন-ঘাটতি রয়েছে।

‘ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তাদের দূর্নীতি দ‍ূর করতে না পারলে এভাবেই চলতে থাকবে মূলধন যোগ‍ান। ’ একথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ।  

তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান-বিভাগের উদারতার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারাই নিযোগ করেছেন। আর নিয়োগপ্রাপ্তরা ব্যাংকে শুধু খেলাপি ঋণই বাড়‍ান না, কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতির বীজও বপন করেছেন। এতে রাষ্ট্রের কোনোও লাভ হয় না, হবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে ব্যাংকখাতের ঋণ বেড়ে হয়েছে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৫ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রণালয়-সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতে ১১,৩১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটেও বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২,০০০ কোটি টাকা। বাজেট-বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী সংস্কারের মাধ্যমে সরকারি ব্যাংকের দক্ষতা বাড়িয়ে মূলধন ঘাটতি কমানোর কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তবে তার কথার কোনো প্রতিফলনই ঘটেনি।

অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান-বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো সরকারের দাপ্তরিক কাজকর্ম ছাড়াও অনেক সেবামূলক কাজ করছে। এসব ব্যাংকের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সরকার কিছু প্রণোদনাও দিয়ে থাকে। সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থবরাদ্দ নতুন কিছু নয়। বহু বছর ধরেই সরকারি এটি করে আসছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৮
এসই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।