ঢাকা: এক ঠিকানায় নাগরিকদের সব সেবা দিতে ‘নাগরিক সেবা’ আউটলেট প্ল্যাটফর্মটি শিগগিরই যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। নাগরিকদের মৌলিক সেবাগুলোর বাইরে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে তাদের সেবাগুলো চেয়েছে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ডিও লেটার দিয়ে দুটি করে উদ্ভাবনী সেবার তালিকা চেয়েছেন। এর মাধ্যমে সরকারি সেবা এখন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর উদ্যোগ হিসেবে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা যা নাগরিক সেবা কেন্দ্রে এখনই নেওয়া যাবে তার তালিকা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো ডিও লেটারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আপমর জনগণের নাগরিক সেবা প্রাপ্তির প্রত্যাশা প্রতিফলেনের লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরসমূহের নাগকি সেবা প্রান্তিক জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় কমপক্ষে দুটি সেবা অনলাইনে সহজলভ্য করার বিষয়ে জরুরি নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রধান উপদেষ্টা এই সেবা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
এ বিষয়ে বিশেষ সহকারী বলেন, আমরা ‘নাগরিক সেবা’ নামে একটা প্রকল্পের কাজ করছি। এটা জিরো বাজেট থেকে শুরু করেছি। আমরা চেষ্টা করছি বিদ্যমান রিসোর্স ও ইনফ্রাকটাকচার দিয়ে কাজ শুরু করার। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই কার্যক্রম শুরু হবে।
তিনি জানান, নাগরিক সেবার জন্য ঢাকা শহরে তিনটি কেন্দ্র পেয়েছি। এ তিনটি কেন্দ্র নিয়েছি বিটিসিএল এবং পোস্ট অফিস থেকে। ঢাকা শহরে আমরা মোট ১৫টি কেন্দ্র করব। অব্যবহৃত অফিস ওয়ার্কিং স্পেসে এই সেবাটা পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করবো। এটা জন্য আলাদা করে ব্যয় হচ্ছে না। সেখানে উদ্যোক্তাদের জন্য যে ফানির্চার বা কম্পিউটার লাগবে সেটা বিদ্যমান একটি প্রজেক্ট থেকে নিচ্ছি। এটার জন্য আমরা বিদ্যমান বিভিন্ন প্রজেক্টের যে ইনোভেশন অব ডেভেলপমেন্ট ফান্ড আছে সেখান থেকে নিচ্ছি।
গত ৩০ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, এক ঠিকানায় সকল নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের উদ্যোগে আসছে নতুন সেবা আউটলেট ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ যার সংক্ষেপিত রূপ ‘নাগরিক সেবা’। চলমান ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকেও এখানে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হবে।
সেবা কেন্দ্রে নাগরিক পরিচয় পত্র, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিষয়ক আবেদন; পরিচয়পত্র সংশোধন ও পুনর্মুদ্রণ; ভূমি সংক্রান্ত তথ্য ও আবেদন, সিঙ্গেল ল্যান্ড সার্ভিস গেইটওয়ে; নতুন পাসপোর্টের আবেদন, পাসপোর্ট নবায়ন; অনলাইন জিডি; আয়কর রিটার্ন আবেদন; ভ্যাট চালান জমাদান আবেদন; ট্রেড লাইসেন্স ও ট্রেড মার্ক আবেদন; বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা ভাতা ও অনুদানের আবেদন; বিদ্যুৎ পানি গ্যাসসহ সকল ইউটিলিটি; ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন নবায়ন; শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষি সেবা নবায়নসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল সেবা পাওয়া যাবে।
শুরুতে প্রায় একশ সেবা দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, ন্যাশনাল ইন্টার-অপারেবিলিটি ফ্রেইমওয়ার্ক এবং ডেটা গভর্নেন্স কাঠামো গঠন ও কার্যকরের পাশাপাশি, ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনে গতি বাড়বে এই উদ্যোগ। স্বাধীন উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ‘নাগরিক সেবা’ কেন্দ্র পৌঁছে যাবে বাংলাদেশের সব শহরে, সব গ্রামে এবং ওয়ার্ডে।
সেবা নিয়ে আইসিটি বিভাগ জানায়, ‘নাগরিক সেবা’ কেন্দ্রে আবেদনের পরে নাগরিককে আবেদনের জন্য ‘প্রিন্টেড পেপার’ নিয়ে কোনো সরকারি বা আধা বেসরকারি অফিসে যেতে হবে না। বরং সেবা কেন্দ্রের সাইট থেকে অনলাইনে জমা দেওয়া অবেদন সরাসরি ট্র্যাকিং নাম্বারসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে পৌঁছে দেওয়া হবে। এর পেছনে কাজ করবে একটি শক্তিশালী ও নিরাপদ সার্ভিস বাস। ন্যাশনাল সার্ভিস বাস মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ইন্টার-অপারেবিলিটি নিশ্চিত করবে।
‘নাগরিক সেবা ইউজার ইন্টারফেইস হিসেবে একটি সিঙ্গেল সার্ভিস পোর্টাল বা ওয়েব সাইট তৈরি করবে এবং সাথে সাথে থাকবে সুপার অ্যাপ। এই পোর্টাল ও ওয়েবে থাকবে সকল সেবার সিঙ্গেল গেইটওয়ে, বিলিং এগ্রিগেটর এবং পেমেন্ট গেইটওয়ে।
‘নাগরিক সেবা’ কেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের থাকবে সুনির্দিষ্ট ব্রান্ডিং, ইউনিফর্ম, পরিচয় শনাক্তকারী কার্ড এবং সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সনদ।
‘নাগরিক সেবা’ কেন্দ্রের জন্য সরকার ইন্টারনেট প্রদানকারী কোম্পানিগুলোকে উচ্চগতি ও উচ্চমানের ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবার নির্দেশনা জারি করবেন। থাকবে নির্দিষ্ট প্রাইস প্ল্যান। প্রাথমিকভাবে নাগরিক সেবা কেন্দ্রে উদ্বুদ্ধ এবং বিনিয়োগ সহজ করতে সরকারি জেলা উপজেলা ইউনিয়নের সরকারি আধা-সরকারি অফিস, পোস্ট অফিস, বিটিসিএল অফিস ইত্যাদিতে কো-ওয়ার্কিং স্পেস তৈরির বিবেচনায় নেওয়া হবে।
বিশেষ সহকারী বলেন, সরকার জনসেবামুখী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই নতুন যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এটি একটি নতুন প্রজন্মের সরকারি সেবা প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সব জায়গার মানুষ সহজেই সরকারি অফিসে না এসেই বিভিন্ন সরকারি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। বাংলাদেশে অসংখ্য নাগরিকের কাছে এখনো ডিজিটাল ডিভাইস নেই, যাদের পক্ষে অনলাইনে সেবা নেওয়া সম্ভব না তাদেরকে সরাসরি সরকারি অফিসে এসেই সেবা নিতে হয়। ‘নাগরিক সেবা’ এর মাধ্যমে তারাও সহজেই নিজ নিজ এলাকা থেকেই সরকারি সেবা নিতে পারবেন।
‘নাগরিক সেবা’ বাংলাদেশ এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে প্রশিক্ষিত ও নিবন্ধিত উদ্যোক্তারা তাদের নিজ নিজ এলাকায় থেকে এই সেবা সরবরাহ করতে পারবেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং আইসিটি বিভাগ নিবন্ধিত উদ্যোক্তাদের ট্রেনিং এবং সনদ প্রদান করবেন। এর মাধ্যমে জনগণ আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বা বারবার সরকারি অফিসে না গিয়ে, নিজের এলাকার সেবাদানকারী এজেন্টের মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় সরকারি সেবা নিতে পারবেন।
সেবা দিতে একটি অফিশিয়াল ওয়েবসাইট (www.nagoriksheba.gov.bd) তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ঢুকে সেবা প্রত্যাশীরা কাঙ্খিত সেবা নিতে পারবেন।
এমআইএইচ/এজে