ঢাকা, রবিবার, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

থাইল্যান্ড থেকে জাহিদুর 

প্রবাসে সংস্কৃতির দূত ফারজানা

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৭
প্রবাসে সংস্কৃতির দূত ফারজানা ফারজানা রিপা

ব্যাংকক (থাইল্যান্ড থেকে): কাপড় আর ফ্রেম তার ক্যানভাস। ফ্যাশন ডিজাইনিং আর পেইন্টিং। মাধ্যম দু’টি হলেও শিল্পসত্তা দিয়ে প্রবাসে বসে তিনি আঁকেন অভিন্ন এক ছবি। যেখানে মূর্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি। 

নানা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে এভাবেই বিশ্বের কাছে মেলে ধরছেন নিজের দেশের ঐতিহ্য তার সংস্কৃতিকে। হয়ে উঠেছেন প্রবাসে সংস্কৃতির দূত।

তিনি ফারজানা রিপা। দেশবরেণ্য নারী চিত্রশিল্পীদের একজন। একই সঙ্গে আবার খ্যাতিমান পোশাক ডিজাইনার।

থাকেন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে। সেখানেই নানা আয়োজন আর প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরেন নিজ দেশকে।

কেবল একা নন। দেশের নারী চিত্রশিল্পীসহ তাদের চিত্রকর্মের সঙ্গেও পরিচিত করিয়ে দেন ভিনদেশের বাসিন্দাদের।  

শিল্প আর সংস্কৃতিতে বাংলাদেশ যে কতোটা সমৃদ্ধ সেই উচ্চতাও তুলে ধরছেন থাইল্যান্ডে স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে যৌথ প্রদর্শনীর মাধ্যমে।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে গত ২৭ মার্চ ব্যাংককে আয়োজন করা হয় দুই দিনব্যাপী চিত্রকলা প্রদর্শনীর। এতে প্রদর্শিত হয় ফারজানা রিপাসহ বাংলাদেশের চার নারী শিল্পীর চিত্রকর্ম।

থাইল্যান্ডের ডিজিটাল ইকোনমি ও সোসাইটি মন্ত্রী ড. পিচেট ডুরাংকাভেরাজ প্রদর্শনীর উদ্ধোধন করে বাংলাদেশের শিল্পকর্মের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের চিত্র ও শিল্পকলা অত্যন্ত উন্নতমানের।

এই প্রাপ্তিটাই আমাদের অহংকার। এভাবে প্রবাসে থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বাড়াতে দূতাবাস যে উদ্যোগ নিচ্ছে, আমরা তার অংশীজন হয়ে ভিনদেশে তুলে ধরছি নিজের প্রিয় মাতৃভূমিকে, বলেন ফারজানা রিপা।

কেবল রঙ-তুলির আঁচড়মাখা চিত্রকর্মেই নয়, ফ্যাশন ডিজাইনিংয়েও বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন অন্যভাবে।

এখানকার চুরালংকন ও শিল্পাংকন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চিত্রশিল্পের প্রদর্শনীর মাধ্যমে এখানকার নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন বাংলাদেশের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে।

‘ফ্যাশন ডিজাইন আর পেইন্টিং। অবশ্যই দু’টি আলাদা মাধ্যম। তবে অভিন্ন সত্ত্বায় তা দাঁড়িয়ে আছে সৃষ্টিশীলতায়, বলতে পারেন ক্রিয়েটিভ প্ল্যাটফর্মে। এখানে আমি তুলে ধরি বাংলাদেশের কাপড়। দেশের ফেব্রিক্স, তাঁত, খাদি, সিল্ক বা কটনের কাপড় তখন হয়ে ওঠে এক একটি ক্যানভাস। প্রবাসে এগুলোকে প্রমোট করি। দেশের ঐতিহ্য, প্রাসঙ্গিক চাহিদার আলোকে এমনভাবে শাড়ি বা সালোয়ার কামিজে ফিউশন করি, যার দূর্নিবার আকর্ষণ টেনে নেয় এখানকার স্থানীয় ছাড়াও স্থানীয়দের, নিজের কাজ নিয়ে বাংলানিউজকে এভাবেই বলেন ফারজানা রিপা।

ছবি আঁকার মতোই ফারজানা রিপার নকশা, রঙ আর কাপড়ের বাহারি কাটিংয়ে সৃষ্টি হয় বৈচিত্র্যময় নানান ডিজাইন।

যা বেশ আগ্রহ আর উচ্ছলতার সঙ্গেই নিয়েছেন এখানকার স্থানীয় ছাড়াও ভিনদেশের নাগরিকরা।

এভাবে তার ফ্যাশন করা আরামদায়ক, আধুনিক আর রুচিশীল পছন্দের পোশাকের মাধ্যমে সব‍াই চিনেছে অন্য এক বাংলাদেশকে।

ঐতিহ্যের সঙ্গে হাল ফ্যাশনের এই সৃষ্টিশীলতা রিপার নতুন নয়। দেশের অন্যতম ফ্যাশন হাউজ ব্র্যাকের আড়ংয়ে ডিজাইনার হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে কাজ করেছেন সাতটি বছর।

ঢাকার বনানীতে বেড়ে ওঠা। বাবা শাহাবুদ্দিন হাওলাদার। ছয় বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় রিপার শিল্পের প্রতি ঝোঁক সেই ছোটবেলা থেকেই।
হলিক্রস কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের চারুকলায়। ফাইন আর্টসের শিক্ষার্থী অবস্থায় ব্র্যাকের আড়ংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।

স্বামীর কর্মস্থলের সুবাদে প্রথমে শ্রীলংকার কলম্বো, সেখান থেকে চলে আসেন থাইল্যান্ডের ব্যাংককে।

অয়েল পেইটিং, অ্যাক্রেলিক রঙ বা মিক্স মিডিয়ার ক্যানভাসে তুলে ধরেন নিজের সংস্কৃতি আর একান্ত শিল্প ভাবনাকে। রঙ-তুলির আঁচড়ে ফ্রেমবন্দি  রাখেন সময়কে।

স্বামী রাকিবুল আমিন আর একমাত্র কন্যা অদৃতি আমিনকে নিয়েই সুখের সংসার। গ্রেড সেভেনে পড়ুয়া কন্যার ঝোঁকও মায়ের সৃষ্টিশীলতার প্রতি।

সংসার সামলে ফ্যাশন ডিজাইনিং, পেইন্টিং আর দেশ-বিদেশে প্রদর্শনী – কী করে সামলান?

‘সব কৃতজ্ঞতা রাকিবুল আমিনের। আমার আগ্রহ দেখে ওই আমাকে চারুকলায় পাঠিয়েছিল। এখনও সেই আগের মতোই শিল্পের প্রতি ভালোবাসায় এসব কাজে উৎসাহ আর সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কারণ, সে নিজেও অসম্ভব শিল্পানুরাগী। বলতে পারেন, আমার সব প্রেরণার উৎস’।

দিন যায়। বাড়ে ব্যস্ততা। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে সৃষ্টিশীলতার পরিধি।
শিল্পের টানে দেশে-বিদেশে ছুটে বেড়ান। ক্যানভাসে আঁকেন লাল-সবুজ পতাকার ছবি। এভাবেই নানান দেশে প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে ফারজানা রিপা বিরামহীনভাবে তুলে ধরছেন অন্য এক বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৭
এসএনএস

আরও পড়ুন
** ফুটপাত থেকে কোম্পানির এমডি জামাল ‘পিএসসি’

** সন্তানের ছবি দেখেই জামানের কষ্টের নোনা জল মেশে সাগরে
**মেরিনের হাসিমুখে ভাসে মমতার বাংলাদেশ!
** দেশে-দেশে বাংলাদেশের অর্জনের ফেরিওয়ালা রাকিবুল আমিন
** অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধের শঙ্কা
** তথ্যপ্রযুক্তিতে সুস্থ রাখার এক ফেরিওয়ালা সাজিদ রহমান
** ইন্দোনেশীয় ইউলিয়ানা আর বাংলাদেশি পলাশের প্রেমের আখ্যান!​
** ঘামে ভেজা গেঞ্জি থেকেই সাফল্য!

** ইন্দোনেশিয়ায় নেমেই কোটিপতি!​
** বাংলার পুকুরেই সাগরের ভেটকি
** প্রবাসে ভবিষ্যত বাংলাদেশ
** ইন্দোনেশিয়ায় অনন্য বাংলাদেশকেই মেলে ধরছেন হুমায়রা 
** সন্ধ্যা হতেই বাতি নেভে শাহজালালের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের
** ঢাকা-জাকার্তা অনন্য উচ্চতায়
** ইন্দোনেশিয়া হতে পারে সেরা গন্তব্য
** এবার ইন্দোনেশিয়ার পথে বাংলানিউজের জাহিদ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।