ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

শিডিউল অনুযায়ী ট্রান্সফরমার ক্রয়ে পল্লী বিদ্যুতের অনীহা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২০
শিডিউল অনুযায়ী ট্রান্সফরমার ক্রয়ে পল্লী বিদ্যুতের অনীহা

ঢাকা: দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দুই ধরনের ট্রান্সফরমার ক্রয় করতে চাইলেও এখন তা নিয়ে গড়িমসি করছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। অভিযোগ উঠেছে, বোর্ডের চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠদের কাজ পাইয়ে দিতে এই কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও আরইবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আরইবির ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৫ লাখ গ্রাহক সংযোগ প্রকল্পের ট্র্রান্সফরমার কেনার জন্য ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। দরপত্রে ‘সিআরজিও’ এবং ‘অ্যামোরফস’ ট্রান্সফরমারই সরবরাহের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

অর্থাৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সুবিধামত ওই দুটি ব্র্যান্ডের যে কোনো এক ধরনের ট্রান্সফরমার সরবরাহের জন্য দর প্রস্তাব করতে পারবেন।
 
ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর দরপ্রস্তাব খোলা ও মূল্যায়নের পর দেখা যায়, দরপত্রের চারটি প্যাকেজের মধ্যে তিনটিতে টিএস ট্রান্সফরমারস লিমিটেড এবং একটি প্যাকেজে কনফিডেন্স ইলেকট্রিক লিমিটেড নামের আরেকটি কোম্পানি সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে। দরপত্রে এই দুটি কোম্পানিই ‘অ্যামোরফস’ ট্রান্সফরমার সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে ।
 
এই অবস্থায় আরইবি ‘অ্যামোরফস’ ট্রান্সফরমার না কেনার পাঁয়তারা শুরু করে। বলা হয়, সরকারি অর্থায়নের কোনো প্রকল্পে ‘অ্যামোরফস’ ট্রান্সফরমার কখনো ব্যবহার করা হয়নি। যদিও এই ট্রান্সফরমারের নিজস্ব লস (সিস্টম লস) অনেক কম, কিন্তু এর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জ্ঞান আরইবির জনবলের প্রায় অজানা।
 
আরইবির কর্মকর্তাদের প্রশ্ন বিতরণ ব্যবস্থায় যে প্রায় ৯০ হাজার (৮ শতাংশ) অ্যামোরফস ট্রান্সফরমার আছে সেগুলো কীভাবে চলছে? দরপত্রের শিডিউলে ‘অ্যামোরফস’ ট্রান্সফরমার সরবরাহের বিধান রাখা হয়েছিল কেন? সর্বোপরি, বিতরণ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার বিধান সম্বলিত বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় প্রণীত যে ‘ম্যানুয়াল’ রয়েছে, সেখানেও ‘অ্যামোরফস’ ট্রান্সফরমার কেনা অনুমোদিত।
 
এর আগেও “আরইই-এসডিপি অ্যান্ড আইডি’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের দরপত্রে আরইবি ‘অ্যামোরফস’ ট্রান্সফরমার সরবরাহের বিধান রাখতে আপত্তি করলে মন্ত্রণালয় সে আপত্তি নাকচ করে দেয় এবং এ ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের ম্যানুয়াল অনুসরণের নির্দেশ দেয়। অথচ আরইবি আবার সেই একই আপত্তির কথা বলছে। তাও আবার নিজেদের দরপত্রের বিধান উপেক্ষা করে।
 
সূত্রগুলো জানায়, আরইবি সর্বনিম্ন দরদাতা দুটি কোম্পানিকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা দুটি কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দুটি কোম্পানি হচ্ছে-পাশা ট্রান্সফরমারস লিমিটেড এবং ভিকার ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড। এর মধ্যে পাশা ট্রান্সফরমারের মালিক কামাল পাশা আরইবি চেয়ারম্যানের আত্মীয়। এ ছাড়া আরও একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ওই কোম্পানির উঁচু পদে কাজ করছেন। তাদেরকে কাজটি পাইয়ে দেওয়ার জন্যই আরইবির চেয়ারম্যান এই টালবাহানা করছেন।
 
আরইবি এবং পিডিবিতে কর্মরত কয়েকজন জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী বলেন, সিআরজিও এবং অ্যামোরফস ট্রান্সফরমারের মধ্যে যে পার্থক্য তাতে অ্যামোফরস ট্রান্সফরমারই বেশি সুবিধাজনক। কেননা, প্রযুক্তির দিক দিয়ে এটি এগিয়ে। এই ট্রান্সফরমারের কোর ম্যাটিরিয়াল হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল। এই ট্রান্সফরমার তৈরিতে খরচ বেশি। অথচ এর নিজস্ব লস (সিস্টেম লস) কম। ফলে এটি ব্যবসায়ীদের তুলনায় কোনো প্রতিষ্ঠান বা দেশের জন্য বেশি লাভজনক। দেশের অন্তত দুটি প্রতিষ্ঠান এই ট্রান্সফরমার তৈরি করছে এবং তা অন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন।
 
অন্যদিকে, সিআরজিও ট্রান্সফরমারে কোর ম্যাটিরিয়াল হিসেবে সিলিকন স্ট্রিপ ইস্পাত ব্যবহার করা হয়। এই ট্রান্সফরমার তৈরি করতে খরচ কম। কিন্তু এটিতে সিস্টেম লস বেশি হয়। ফলে এটি কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা দেশের তুলনায় ব্যবসায়ীদের জন্য বেশি লাভজনক। দেশে সিআরজিও ট্রান্সফরমার তৈরি করছে অন্তত ১২টি প্রতিষ্ঠান। ফলে এই ট্রান্সফরমার কেনার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি প্রভাবিত করতে চান ব্যবসায়ীরা।
  
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) মঈন উদ্দিন মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলবেন না বলে জানান। তার অফিসে গিয়ে আলাপ করার আহবান জানান।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২০
এসই/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।