ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

রাত পোহালেই বিএনপির গণসমাবেশ: ফরিদপুরে উৎসবের আমেজ

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২২
রাত পোহালেই বিএনপির গণসমাবেশ: ফরিদপুরে উৎসবের আমেজ

ফরিদপুর: ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে উপলক্ষে শহরের উপকণ্ঠে কোমরপুরের আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে একদিন আগেই সমবেত নেতাকর্মীদের ভিড় উপচে পড়ছে। প্রধান অতিথি দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গণসমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেছেন।

গণসমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিশেষ অতিথি থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু, ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর।

এদিকে এ গণসমাবেশের একদিন আগে থেকেই ফরিদপুরে শুরু হয়েছে বাস ও মিনিবাস ধর্মঘট। এতে ফরিদপুরের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, গণসমাবেশের আগে তাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত জেলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার বিকেলে দেখা গেছে নেতা-কর্মীদের ভিড়ে একদিন আগেই কানায় কানায় ভরে গেছে কোমরপুরের জনসভাস্থল। বাস ও মিনিবাস ধর্মঘট উপেক্ষা করে বিভিন্ন উপায়ে সেখানে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পৌঁছাচ্ছেন। তারা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে প্রদক্ষিণ করছেন সমাবেশের মাঠ ছাড়িয়ে আশেপাশের এলাকা। এতে সেখানে এক ভিন্ন আমেজের সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) রাত থেকেই কয়েক হাজার নেতাকর্মী মাঠে অবস্থান নিয়েছেন। সারারাত তাদের অনেকেই খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করেছেন। শুক্রবারও পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। দুপুরের পর থেকেই বাড়তে থাকে আগতদের ভিড়। সন্ধ্যা নাগাদ পূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশের মাঠ। সন্ধ্যায় সমাবেশস্থলে দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করেন জাসাসের শিল্পীরা।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে সমবেত নেতাকর্মীরা কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউটশন জামে মসজিদে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেছেন। মুসল্লিদের ভিড় মসজিদ ছাড়িয়ে মাঠে গড়ায়। নামাজে ইমামতি করেন কোমরপুর জামে মসজিদের ঈমাম হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।

বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের এই গণসমাবেশে নির্ধারিত সমাবেশস্থল ছাড়িয়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় পেরিয়ে দুই কিলোমিটার দূরে শহর পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। শুক্রবারের মধ্যেই গণসমাবেশের মূল মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। এর বাইরে গণসমাবেশের মাইক লাগানো হচ্ছে প্রায় এককিলোমিটার জুড়ে।

এদিকে মহাসড়কে ‘থ্রি-হুইলার বন্ধের দাবি’ জানিয়ে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ৩৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে ফরিদপুরের মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এর পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে বিআরটিসির বাস চলাচলও।

ফরিদপুর বিআরটিসি বাস পরিবহনের সহকারী পরিচালক মামুন হাসান বলেন, শুক্র ও শনিবার ফরিদপুর থেকে সব পথে তাদের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। বাস মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি আমরা।

এদিকে বিএনপির গণসমাবেশকে সামনে রেখে ৩৮ ঘণ্টার এই বাস ও মিনিবাস ধর্মঘটের ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ঈছা জানিয়েছেন, তাদের গণসমাবেশের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশ নগরকান্দা ও বোয়ালমারীসহ বিভিন্নস্থান থেকে ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে। আওয়ামী লীগ গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে পাল্টা জমায়েত করে জনমনে ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা চালিয়েছে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগ শহরে মিছিল বের করেছে। এর বাইরে গণসমাবেশের শুরু থেকেই সমাবেশের জন্য আবেদন করা নির্ধারিত স্থানের বদলে তাদের শহরের বাইরে গণসমাবেশ ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এসব সত্ত্বেও নেতাকর্মীরা বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো ছুটে আসছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন। শনিবার (১২ নভেম্বর) এই গণসমাবেশে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে বলে বৃহত্তর ফরিদপুরের বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশের সমন্বয়কারী কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, বেসরকারি বাসের পাশাপাশি দুই দিন বিআরটিসি বাস বন্ধ করার কারণ আমাদের গণসমাবেশকে বাধা দেওয়া। কিন্তু এতে বিএনপির গণসমাবেশে কোনো সমস্যা হবে না। কেননা বাধা পেলেই মানুষ বেশি বের হয় বাঁধভাঙার জন্য। তবে সমস্যা ও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে যাত্রী সাধারণকে।

কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল জানিয়েছেন, গণসমাবেশে হলুদ ক্যাপ মাথায় সামনের সারিতে থাকবে তাদের কর্মীরা। ফরিদপুরের এই গণসমাবেশ স্মরণকালের ঐতিহাসিক সমাবেশ হিসেবে পরিগণিত হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, গোপালগঞ্জ থেকে দুই হাজার নেতা-কর্মী এসেছেন। তিনি মঞ্চের পাশের সামিয়ানাগুলো দেখিয়ে  বাংলানিউজকে বলেন, সবগুলো সামিয়ানা গোপালগঞ্জের। এরকম সব জেলা থেকেই নেতা-কর্মী আসছেন।

সমাবেশের মাঠে উপস্থিত যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভুইয়া পিংকু বলেন, ফরিদপুর কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। নেতা-কর্মীদের আটকাতে পারবে না কোনো বাধাই। বৃহস্পতিবার রাতে ৭/৮ হাজার নেতা-কর্মীর মাঝে রাতের খবার বিতরণ করা হয়েছে। জেলার নেতারা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এসব ব্যবস্থা করছেন। গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারের পক্ষ থেকে বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাবেশস্থলে আসছেন।

শৃঙ্খলা উপ-কমিটির প্রধান ও শহর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমটি আক্তার টুটুল জানান, গণসমাবেশ স্থানের সার্বিক শান্তিশৃঙ্খলার স্বার্থে কাজ করছেন তাদের কর্মীরা।

এদিকে বিএনপির এই ষষ্ঠ বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন শুক্রবার বিকেলে ফরিদপুরে গণমিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের নেতৃত্বে শহরের আলিপুরে শেখ রাসেল ক্রীড়া কমপ্লেক্স চত্বর থেকে শুরু হয়ে মুজিব সড়ক হয়ে ব্রক্ষ্মসমাজ সড়ক পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি।

অপরদিকে, ফরিদপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ)  মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।