ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

ফিরে দেখা-২০১৪

ব্যর্থতায় শুরু, ব্যর্থতায় শেষ বিএনপির

মান্নান মারুফ ও আসাদ জামান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪
ব্যর্থতায় শুরু, ব্যর্থতায় শেষ বিএনপির

ঢাকা: ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালটি শুরু করেছিল বিএনপি। বছরের প্রথম দিন বুধবার সারাদেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ  কর্মসূচি পালন করে দলটি।

কিন্ত শেষ পর্যন্ত নির্বাচন প্রতিহত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয় তারা।
 
এদিকে নির্বাচন প্রতিহত করার নামে আসলে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে দেশব্যাপী জামায়াতে ইসলামীর চালানো নজিরবিহীন সহিংসতা চালায়। স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটির নৈরাজ্য ও ভয়াবহ সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ এবং সহিংস কর্মসূচি থেকে বিরত থাকতে বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে বিএনপি। চাপের মুখে অবশেষে ১৩ জানুয়ারি হঠাৎই আন্দোলন কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন খালেদা জিয়া।
 
এর আগে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে তা প্রতিহত করতে এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি (২৯ ডিসেম্বর ২০১৩) কর্মসূচি ছিলো বিএনপির সর্বশেষ প্রচেষ্টা। সেটিও যখন আর সফল হলো না তখন অগত্যা আন্দোলনে হাল ছেড়ে দেয় দলটি।
 
ওই সময় বিএনপির হাইকমান্ড উপলব্ধি করেন, তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ২০১১ সাল থেকে চালিয়ে আসা আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। সহিংসতার অভিযোগে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানো নেতা-কর্মীদের ঘরে ফেরানো এবং তাদের গুটিয়ে যাওয়া ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরায় চালুর সুযোগ করে দিতে আপাতত আন্দোলনে বিরতি দিতেই হবে।
 
সে কারণে ঈদুল ফিতরের পর কঠোর আন্দোলন শুরুর ফাঁকা আওয়াজ দিলেও বাস্তবে শেষ পর্যন্ত অবস্থান বদলায় বিএনপি।
 
এ সময় ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি দিয়ে  ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণ করে বিএনপি। কিন্তু সরকারের কঠোর ও অনড় অবস্থানের কারণে ২০ জানুয়ারির পর একাধিকবার চেষ্টা করেও ঢাকায় জনসভা করতে পারেননি খালেদা জিয়া। কেবল জাতীয় প্রেসক্লাব ও ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে আয়োজিত কয়েকটি আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান তিনি।
 
তবে ঢাকায় জনসভা করতে না পারলেও ঢাকার বাইরে রাজবাড়ী, জয়পুরহাট, মন্সিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জামালপুর, নীলফামারী, নাটোর, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জে জনসভা করেন খালেদা জিয়া। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আয়োজিত ওইসব জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক সমাগম হলেও অনেক স্থানীয় নেতা কেন্দ্রকে সাফ জানিয়ে দেন, ঢাকায় আন্দোলন জমাতে না পারলে তারা আর সেভাবে আন্দোলনে নেই।
 
তৃণমূলের এমন নেতিবাচক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ জুলাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবীব উন নবী খান সোহেলকে সদস্যসচিব করে ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি করে দেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এ কমিটিও এখন পর্যন্ত লক্ষ্যযোগ্য কিছু করে দেখাতে পারেনি।
 
পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য আহ্বায়ক কমিটিকে দুই মাস সময় বেঁধে দেওয়া হলেও টানা পাঁচ মাসে কিছুই করে দেখাতে পারেনি আব্বাস-সোহেল কমিটি। বরং থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন নিয়ে প্রতিনিয়তই ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা।
 
তা ছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার যে লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা মহানগর কমিটি দেওয়া হয়েছিলো তা-ও অর্জিত হয়নি। কমিটি গঠনের পর বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে ডাকা ২২ সেপ্টেম্বরের হরতালে যথারীতি ফ্লপ ঢাকা মহানগর বিএনপি।
 
এরপর ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করতে না পেরে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে ঢাকা মহানগর বিএনপি।
 
বছরের শেষদিকে এসে সর্বশেষ ভরসা কূটনীতিতেও প্রচণ্ড রকম ধাক্কা খায় বিএনপি। ডিসেম্বরে ঢাকা সফরে এসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারপারসন জিন ল্যাম্বার্ট সাফ জানিয়ে দেন নতুন নির্বাচনের কথা বলবে না ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। বরং পরবর্তী নির্বাচন পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের তাগিদ তুলে ধরেছে।
 
বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত  ‘বিএনপির সুহৃদ’  বলে পরিচিত ড্যান ডব্লিউ মজিনা, কানাডীয় হাই কমিশনার হিদার ক্রুডেন এবং বহু দেন দরবার করে নিয়ে আসা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী  নিশা দিশাই বিসওয়াল বিএনপিকে ধৈর্য্ ধারণের পরামর্শটুকুই কেবল দিয়ে গেছেন। কাজের কাজ কিছুই হয় নি তাতে।
 
আন্দোলনে নেতা-কর্মীদের পিঠ বাঁচিয়ে চলা, কূটনৈতিক ব্যর্থতা, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারা, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ও জনগণের বিরাট অংশকে কাছে টানতে না পারাসহ নানা কারণে বিএনপি কেবলই ধুঁকেছে। আর  ঠিক সে সময়ই মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া রুচিহীন, উদ্ভট, কাণ্ডজ্ঞানহীন, নোংরা ও অমার্জনীয় বক্তব্য।
 
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর কটূক্তি করে এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় সম্পর্কে ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বিএনপিকে আরো বেশি বিপাকে ফেলে দেন তারেক রহমান।
 
এর জের ধরে ফলশ্রুতিতে বছরের একেবারে শেষ দিকে এসে গাজীপুরের জনসভা থেকে পিছু হটতে হয় বিএনপিকে।
        
সুতরাং বলা যায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর ব্যর্থতা দিয়ে শুরু হয়েছিলো বিএনপির ২০১৪। আর  শেষ হয় ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুর জনসভা থেকে পিছু হটে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।