নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে আগে যেখানে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও অনিশ্চয়তা ছিল, এখন তা কাটিয়ে ওঠা গেছে। নির্বাচনের অনিশ্চয়তার সেই মেঘ কেটে গেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া দেশের সামনে কোনো বিকল্প নেই। এখন যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে নির্বাচনই একমাত্র উপায়।
সোমবার (৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক যুব ঐক্য আয়োজিত ‘আগামী নির্বাচন গুণমানসম্পন্ন ও সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার, সংস্কার কমিশন ও পরে গঠিত ঐক্যবদ্ধ কমিশনকে ধৈর্য ধরে আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যে তীব্র দ্বন্দ্ব ছিল, তা কিছুটা কমেছে। নেতাদের মধ্যে ধীরে ধীরে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। পারস্পরিক আস্থার ব্যবধানও কিছুটা কমেছে। এখন আর দলগুলোর মধ্যে একঘরে মনোভাব নেই।
গণতন্ত্র মঞ্চ ও ঐক্যজোটের উদ্দেশের বিষয়ে মান্না বলেন, “তারা শুধু ক্ষমতার লোভে নয়, বরং দেশগত গুণগত পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করছেন। ”
গণভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গণভোটের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও পিআর প্রসঙ্গটি এখন আর আলোচনার কেন্দ্রে নেই। একই দিনে গণভোট ও নির্বাচন—এতে কোনো বাধা নেই। কেবল ভোটের সংখ্যা নয়, প্রার্থীদের কর্মসূচি, দৃষ্টি ও প্রস্তাবনাই নির্বাচনের গুণমান নির্ধারণ করবে। এখন ভোটাররা শুধু ‘মার্কা’ দেখে নয়, মানুষ দেখে ভোট দেবেন। ”
পুলিশ প্রশাসন প্রসঙ্গে মান্না বলেন, “পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা ও প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারের তৎপরতা ছিল না। শুরু থেকেই পুলিশকে যত্নসহকারে উদ্বুদ্ধ করা গেলে ১৩–১৪ মাসের মধ্যেই তাদের আত্মবিশ্বাস আরও দৃঢ় হতে পারতো। ”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “রাজনৈতিক উত্তপ্ত আবহ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে উসকে দেওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে না হয়, তবে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য তা বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে।
বক্তব্যের শেষে মান্না বলেন, “রাজনীতিকে যেন রাজনীতির মতোই রাখা যায়, সে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ব্যালান্সিং ফ্যাক্টর হিসেবে সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন। ভবিষ্যতের দিকে জাতি এখন আশাবাদীভাবে তাকিয়ে আছে। ”
আলোচনা সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে নতুন করে সংশয় তৈরি হবে। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে বামদলগুলোর মধ্যে নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের বর্তমান অবস্থায় মনোবল দুর্বল তাই নির্বাচনকালীন জেন জেনারেশন বা তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিলে ভোটের পরিবেশ আরও ভালো হবে।
বক্তারা আরও বলেন, নির্বাচন ভালোভাবে হলে দেশ টেকসই ও শান্তিপূর্ণ থাকবে। একই দিনে গণভোটের আয়োজনের বিষয়ে সবাই একমত হলেও, কোনো দল আপত্তি জানালে তা গভীর ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। এখনো অনেক সংস্কার বাকি রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কার হয়নি, আরপিও আইনেও কালো টাকা রোধের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
তারা সতর্ক করে বলেন, “নিয়োগ, ঘুষ ও টেন্ডার বাণিজ্য চলমান থাকলে নির্বাচন কতটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে—তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কোনো উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না। ”
আলেচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম।
ডিএইচবি/জেএইচ