জাতীয় রিকন্সিলিয়েশন কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতির মধ্যে বিভক্তি দূর করার প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেছেন, অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ছাত্রদল আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থানের বাক বদলের দিন’ শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিএনপির এই নেতা।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগের নামে কোনো রাজনীতি হবে না। রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের বিচার করতে হবে। যারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, এমপি-মন্ত্রী এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যারা বিচারাধীন আছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, তবে আমরা যদি হাজারে হাজারে বিচার করি, তাহলে এই জাতিকে সব সময় বিচার ও প্রতিশোধের বিভক্তির মধ্যে থাকতে হবে। সেজন্য যারা সাধারণ, জাতীয় রিকন্সিলিয়েশন কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে জাতির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখানে কারা যাবে, এটি আইনের মাধ্যমে ঠিক করব। এটি দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়েছে। ইউরোপের আরও কয়েকটা দেশে হয়েছে, যাতে চূড়ান্ত বিভক্তি না হয়।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, তবে অবশ্যই যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ, গুম-খুন-হত্যাযজ্ঞে জড়িত, সে যে বাহিনীর হোক, তাকে ক্ষমা করা হবে না।
তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের ভাষ্য আমরা ৫ মাস আগে জমা দিয়েছি। গত ৯ তারিখে একটি রিফাইন্ড ভার্সন চেয়েছে, আমি নিজে গিয়ে জমা দিয়েছি। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের যথাযথ মর্যাদা আমরা দেব। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেব। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে তার বর্ণনা থাকবে। ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তার বৈধতাও সেখানে থাকবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, জুলাই সনদ প্রণয়নের কার্যক্রম চলছে। তবে অত্যন্ত ধীরগতি। আমরা সংস্কার কমিশনকে বলেছিলাম, আগস্টের ৫ তারিখের আগে এটি প্রণয়ন করতে হবে। কিন্তু যে ধীরগতি লক্ষ্য করছি, তাতে আমার কাছে মনে হয়, এই সময়ের মধ্যে কি আপনারা এই কাজ করতে পারবেন?
তিনি বলেন, একদিনে কি জুলাই এসেছে? ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ২৩ বছরের শোষণ-বৈষম্যের শিকার হয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। ৮০’র দশকে সামরিক স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন নয় বছর করতে করতে ১৯৯০ সালে অভ্যুত্থান হয়েছে। গত ১৭ বছরে আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। মাত্র ৩৬ দিনে একটি ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা ভোটাধিকারের জন্য, গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক অধিকারের জন্য ১৭ বছর লড়াই করেছি, আমরা কি সেটাকে মহিমান্বিত করব না? ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের আগে একটি মানবাধিকার সংগঠনের মতে ৭০৯ জন গুমের শিকার হয়েছেন। তার মধ্যে আমিও ছিলাম।
বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, শেখ হাসিনা এতটাই কুরুচিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন করেছে, পুরো ক্যাম্পাসে অস্ত্র নিয়ে মেয়েদের ওপর হামলে পড়েছে, সেটা ইতিহাসে লেখা থাকবে। শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনী যেভাবে ছাত্রী বোনদের ওপর নির্যাতন, হামলা করেছিল, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিল, সেখানেও হামলা করেছিল। এতটাই বর্বর নির্মম ছিল যে, সারা দেশে শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছিল। এটাই ছিল আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। সেদিন থেকে শেখ হাসিনার পতন যাত্রা শুরু হয়। ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাঁচ আগস্ট এসেছিল।
তিনি বলেন, দেশ আজকে সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এক বছরে আমরা শহীদের বিচার দেখতে পাইনি। বৈষম্যহীন সমাজ দেখতে পাইনি। আমরা দেখতে পেয়েছি, কাদা ছোড়াছুড়ি, একটি দলকে মিথ্যা প্রপাগান্ডা দিয়ে হেনস্তা করা যায়। সংস্কারের নামে আমরা আর কোনো কিছুই দীর্ঘায়িত করতে দিতে চাই না। একটি নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন চাই।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের বিচারের প্রক্রিয়া আমরা এখনও লক্ষ্য করিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যেও বিচার চাওয়ার কোনো প্রবণতা দেখিনি। আমরা প্রশাসনকে চিঠি, স্মারকলিপি দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকাওয়াস্তে লিস্ট প্রকাশ করেছে, কিন্তু ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে বিচারের পদক্ষেপ কেউ শুরু করতে পারেনি। এর দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে নিতে হবে।
ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক জাবির আহমেদ জুবেল, ইসলামী আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের শুভাশিস চাকমা, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, খেলাফত ছাত্র মজলিসের সভাপতি মাহদী হাসান শিকদার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র আন্দোলন এনডিএম-এর মাসুদ রানা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দীন মুজাহিদ মাহী প্রমুখ।
এফএইচ/এমজেএফ