ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৫ জুন ২০২৫, ০৮ জিলহজ ১৪৪৬

রাজনীতি

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই মেয়রের চেয়ারে বসার হুমকি ইশরাকের 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৫, জুন ৩, ২০২৫
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই মেয়রের চেয়ারে বসার হুমকি ইশরাকের 

ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সকল ঢাকাবাসী, ভোটার ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে শপথের মাধ্যমে নিজেই মেয়রের চেয়ারে বসার হুমকি দিলেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।

মঙ্গলবার (৩ জুন) টানা আন্দোলনে একাত্বতায় অংশ নিয়ে ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে এসে তিনি এ কথা বলেন।

ইশরাক হোসেন বলেন, আমি একজন রাজনীতিবিদ, আপনাদের সহযোদ্ধা হিসেবে, সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই। এ নগর ভবন বিগত দুই সপ্তাহ ধরে আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আমরাই নিয়ন্ত্রণ রেখেছি। আমরাই দখল করে রেখেছি। এ শপথটা যদি তারা নাও করায়, আমি গিয়ে আমার চেয়ারে বসতে পারি। দুই মিনিটেও লাগবে না। ঢাকা শহরের জনগণ ঠিক বারবার আমাকে আহ্বান জানিয়েছে কেন আমি শহীদ মিনারে গিয়ে ঢাকা বাসীকে সঙ্গে নিয়ে শপথ করে দায়িত্ব পালন বা দায়িত্ব গ্রহণ আমি নিজেই কেন নিয়ে নিচ্ছি না? তখন আমরা বলেছি যে, আমরা একটা নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমাদের দলের পক্ষ থেকেও আমাদের নেতা, বিশেষ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বার বার বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছেন। আমাদের আইনজীবী নেতা, যারা রয়েছেন, খোকন ভাই, শেখ হাসান কামাল, ব্যারিস্টার কাজলসহ সবাই বার বার নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, আমাদের সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান সাহেব রয়েছেন। উনারা বারবার আমাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করেছেন। কারণ আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাসী, আমরা চাই না কোনো ধরনের একটা বাজে উদাহরণ সৃষ্টি হোক। কিন্তু এ সরকারকে এখন বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, আপনারা যদি অবিলম্বে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা না করেন তাহলে ঢাকা শহরের দক্ষিণের ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে আমি নিজেই শপথ করে আমি আমার চেয়ার গ্রহণ করব। ঠিক। এবং নগর ভবন কীভাবে চলবে? সেটা ঢাকাবাসী নির্ধারণ করবে। কোনো বহিরাগত উপদেষ্টা বা বহিরাগত কোনো প্রশাসককে এ নগর ভবন পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। হবে না! হবে না! ঠিক, এইটা আমাদের শেষ কথা। এটাই আমাদের শেষ বার্তা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সাতজন বিচারপতির উপস্থিতিতে, প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে যে রায় আমরা পেয়েছিলাম, তার বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল এবং সেটিকে খারিজ করা হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে যে শুনানি হয়, এর পরে, কারো কোনো সুযোগ নেই যে এখানে আইন জড়িত করতে পারে, কারণ সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ যে রিট আবেদন ছিল, সেটিকে নিষ্পত্তি করে নির্বাচন কমিশনকেই সর্বসম্মতভাবে ক্ষমতা দিয়েছে এ বিষয়টির সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য। অতএব, এ নির্বাচন কমিশন যে গেজেটটি প্রকাশ করেছিল, ইলেকশন ট্রাইব্যুনালের রায়ের ওপর ভিত্তি করে তারা যে গেজেট প্রকাশ করে সেখানে আমাকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে ঘোষণা করেছিল, সেটি বহাল থাকছে এবং সেটিকে আইন হিসেবে মেনে দিতে হবে। আপনারা দেখেছেন যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং তার উপদেষ্টারা পক্ষপাতিত্ব যুক্ত হয়ে তারা আমাদের এ নির্বাচনের রায় নিয়ে টালবাহানা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা আমাকে শপথ না করানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানকে লঙ্ঘন করেছে, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাকে তারা অসম্মান করেছে। আপনারা দেখেছেন তারা আইন মানে না, তারা নির্বাচন কমিশন মানে না, তারা সংবিধান মানে না, তাহলে তারা মানেটা কি?

বিএনপি নেতা ইশরাক বলেন, এ সরকার তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। আমাদের এ আদালতের রায় এবং গেজেট প্রকাশ করার পরে, আমরা যখন সরকারের কাছে বারবার আবেদন জানালাম, বারবার লিখিতভাবে জানালাম, তারা কিন্তু কোনো কাজ করলো না। এর পরে ঢাকা শহর দক্ষিণের সর্বস্তরের ভোটাররা রাজপথে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ধরে আপনারা আন্দোলন করছেন। এর পরে আমরা আমাদের দাবি আদায়ে নগর থেকে বের হয়ে যমুনা ঘেরাও দিয়ে, আমরা সেখানে দুইদিন অবস্থান করে যমুনা ঘেরাও দিয়েছিলাম, তখন আমরা কি দেখতে পেলাম? জাতির সামনে একটি নতুন নাটক মঞ্চস্থ করা হলো যেখানে পদত্যাগের নাটকের মাধ্যমে জাতিকে আমরা এক কথায় বলতে পারি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে একটা নাটক মঞ্চস্থ করা হলো। এ নাটক মঞ্চস্থ করার পরে আমাদের বলা হলো যে, এখানে একটা সমাধান হবে এবং আমরা জনগণের কথা চিন্তা করে রাজপথ ছেড়ে দিয়েছিলাম। কারো নির্দেশনায় না, নিজের সিদ্ধান্তে আমরা তখন জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে, রাজপথ ছেড়ে আসি আমরা ভেবেছিলাম এ সরকার এটি সমাধান করবে।  আমরা এখান থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, রাষ্ট্র পরিচালনা কোনো আবেগের বিষয় নয়। এখানে আঠারো কোটি মানুষের জীবনযাত্রা, জীবিকা নির্বাহ করার বিষয় রয়েছে। অতএব, আবেগ দিয়ে এই রাষ্ট্র পরিচালনা, যখন মন চায়, ইরান। যখন আমি একটু বেজার হলাম, তখন আমি পদত্যাগ করে চলে গেলাম। এ ধরনের কর্মকাণ্ড কিন্তু আসলে জনগণের কল্যাণময় কিছু হবে না।

তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত আমাদের দল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের প্রতি পূর্ণাঙ্গ আস্থা রেখেছেন। গতকাল আমাদের দলের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল বৈঠক করে এসেছে এবং সেই বৈঠকে আমাদের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ সাহেব, উনি স্পষ্ট করে আমাদের বার্তাগুলো, দাবিগুলো দিয়ে এসেছেন। কিন্তু না, পরবর্তীতে আমরা দেখতে পেলাম যে তারা কীভাবে এ শপথ নিয়ে টালবাহানা করার মাধ্যমে তাদের যে রুক্ষতা সেটাকে উন্মোচন করা হয়েছে এবং দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে, সেই জিনিসটা শুধু প্রশ্নবিদ্ধ হয় নাই, সেটা জনগণের সামনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ দিয়ে সেটি অর্জন করার কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই আমাদের দলের পক্ষ থেকেও তিনজন উপদেষ্টার নাম বলে আসা হয়েছে, যাদের অবিলম্বে পদত্যাগ চাই। যারা দেশ ও জাতির জন্য হুমকি স্বরূপ ও দেশের এ গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত দেখতে পাই নাই তাদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ডিএইচবি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।