ঢাকা: সংসদ সদস্য (এমপি) কিংবা চেয়ারম্যান থাকাকালীন তাদেরকে বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে হবে এমন আইন করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
বুধবার (২১ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত 'যুবকদের সংস্কার ভাবনা: স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক এক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আমি নিজে কখনো আমার চিকিৎসা দেশের বাইরে করাইনি। আমার বাবা মার চিকিৎসাও আমি দেশের বাইরে করাইনি। সুতরাং কেউ যদি বলে থাকে বাংলাদেশে ভালো চিকিৎসা হয় না, এটা অত্যন্ত অন্যায় কথা। তারা বাংলাদেশের চিকিৎসা নেন না, নিতে চান না, সে কারণেই তারা বাংলাদেশের চিকিৎসা সম্বন্ধে খুব ভালো জানেনও না। হ্যাঁ আমাদের কিছু জায়গায় কিছু বিচ্যুতি আছে।
চিকিৎসকদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন ডাক্তারকে আপনি ২০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা তাকে দিয়ে পরিশ্রম করাবেন, তখন সেই ডাক্তারের কাছ থেকে ভালো সেবা আপনি পাবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। চিকিৎসা একটি টিম ওয়ার্ক। ডাক্তাররাই কেবল চিকিৎসা দেন না। এর সাথে নার্স এবং টেকনিশিয়ানরাও জড়িত। এর সাথে আমাদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা কি ধরনের যন্ত্রপাতি দিয়ে হচ্ছে সেগুলোও জড়িত। সার্বিকভাবে সেই জিনিসগুলোর মান যদি ভালো না থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসা অত বেশি ভালো হবে না। আমাদের ডাক্তারের সংখ্যাও অপ্রতুল, নার্সের সংখ্যাও অনেক কম। অদক্ষ এবং স্বল্প নার্স দিয়ে আপনি কিভাবে আশা করেন বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবার।
আগামী অর্থবছরের স্বাস্থ্য খাতের বাজেট কমানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৫ সালে যেই বাজেট হতে যাচ্ছে, সেখানে স্বাস্থ্য খাতে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার বাজেট কমানো হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে ৩৫টি প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর সাথে কেনাকাটা এবং অবকাঠামো জড়িত। এই প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির কিংবা অপচয়ের সুযোগ আছে। তাই এই প্রকল্পগুলো বাদ দেয়া হয়েছে। এই যে দুই হাজার দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে, এই টাকা কি চিকিৎসকদের বেতন, নার্সদের দক্ষতার উন্নয়ন, টেকনিশিয়ানদের আরও বেশি ট্রেইন্ড করতে ব্যবহার করতে পারতেন না। আপনাদের প্রকল্প ব্যয় কমাতেই হল।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক সরকার যারাই আসুক না কেন ক্ষমতায়, আমাদের স্বাস্থ্য খাতের বাজেট জিডিপিতে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বনিন্ম হয়ে থাকে। পয়েন্ট ৭৮ শতাংশ। এমনকি এক শতাংশও না। জিডিপির এক শতাংশ ও আমরা স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করি না।
নিজের সংসদীয় এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার সংসদীয় এলাকার উপজেলা এবং জেলা হাসপাতালে আমি ভিজিট করেছি, অবস্থা সত্যিই শোচনীয়। চিকিৎসক নাই, সরঞ্জাম, ঔষধ নাই, হাসপাতাল নোংরা অপরিচ্ছন্ন, সেবা দেবার মতো কোনও নার্স নাই, কিছুই নাই। এই হাসপাতালগুলোর এই হাল কেন হয়েছে জানেন, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা মনে করেন, এই দেশে আমার চিকিৎসা করবার কোন প্রয়োজন নাই।
তিনি আরও বলেন, সুতরাং আমি খুবই শক্ত একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে। যেমন দ্বৈত নাগরিক হলে আপনি নির্বাচন করতে পারবেন না, সংসদ সদস্য হতে পারবেন না, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সংসদ সদস্য হতে হলে, কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হলেও, আপনি যেই কয় বছর চেয়ারম্যান থাকবেন, আপনাকে বাংলাদেশেই চিকিৎসা নিতে হবে। এই চোরের দেশে, লুটেরার দেশে, বিবেকহীন অমানুষের দেশে আর কোন উপায় তো নাই। তাই আপনাকে আইন করে এটা করতে হবে। রাজনীতিবিদদের পরিবার দেশে প্রাইভেটে চিকিৎসা করাতে পারে। কিন্তু যে চেয়ারম্যান কিংবা এমপি হবে তাকে দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। এতে বাঁচলে বাঁচবে, না বাঁচলে ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে।
সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতি সম্মেলনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট প্রীতিলতা খন্দকার হক।
সম্মেলনে সম্মানিত আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডাক্তার তাসনিম জারা, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী।
আরকেআর/জেএইচ