ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

রাজনীতি

পরিস্থিতির অযথা ঘোলাটে না করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: তারেক রহমান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:২৯, মে ১৮, ২০২৫
পরিস্থিতির অযথা ঘোলাটে না করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আবারও আহ্বান জানিয়ে বলবো পরিস্থিতির অযথা ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা না করা গেলে পতিত স্বৈরাচারকে মোকাবিলা করা সহজ হবে না।

লোভ লাভের প্রলোভন থেকে মুক্ত থেকে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে, বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দায়িত্ব পালন করবে এ আশা করছি।  

শনিবার (১৭ মে) রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে এনডিএম এর অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।  

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, বিএনপিসহ দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোই অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তাদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে একটি রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে আসছে। সব কিছু বিবেচনা করলে আমরা দেখতে পাই সরকার কিন্তু সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় সরকার বরং জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে সুকৌশলে অল্প সংস্কার বেশি সংস্কার এরকম একটি অভিনব শর্তের বেড়াজালে বলা যায় আটকে দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কর্ম পরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে থাকায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা বাড়ছে। আমরা প্রতিদিন দেখছি কোনো না কোনো দাবি নিয়ে মানুষ রাস্তায় নামছে। মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কিন্তু এক ধরনের অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। সরকার জনগণের ভাষা আশা-আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে। আমরা মনে করি অস্থিরতা এভাবে বাড়তে থাকলে এ সরকারের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের সক্ষমতা সম্পর্কে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই। গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘ দেড় দশক ধরে ফ্যাসিবাদী বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে আমরা একসঙ্গে রাজপথে ছিলাম। আমাদের অবস্থান থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের শক্তি ও সামর্থ্যের প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করিনি। তবে আমরা চুপ থাকলেও জনমনে এ সরকারের প্রতি প্রশ্ন উঠছে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যের ওপর ভিত্তি করে এবং জুলাই আন্দোলনে হাজারো মানুষের প্রাণের বিনিময়ে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক বৈধতার ভিত্তি রচিত হয়েছে। অথচ জুলাই আগস্ট এর আন্দোলনে কতজন শহীদ হয়েছে কতজন আহত হয়েছেন, দশ মাসেও কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার শহীদদের তালিকা ও সংখ্যা চূড়ান্ত করতে পারেনি। অথচ যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজায় কতজন মানুষ শহীদ হয়েছেন আহত হয়েছেন, এ মুহূর্তে যদি গুগলে সার্চ করা যায় তাহলে গাজায় হতাহত মানুষের পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে। অথচ এখন যদি কেউ জুলাই আগস্টের শহীদদের হতাহতদের তথ্য কেউ জানতে চান তাহলে কি নির্দিষ্ট সেই তথ্য পাওয়া যাবে? এ ব্যাপারে কিন্তু বিরাট সন্দেহ বা প্রশ্ন রয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে গণঅভ্যুত্থানের সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে ১০ মাসেও যদি জুলাই আগস্ট এর শহীদদের তালিকা চূড়ান্ত না করতে পারে, তাহলে সেটা সরকারের সক্ষমতা বহন করে কিনা এ প্রশ্নটি রেখে যাচ্ছি। এখানে আরেকটি প্রশ্ন এসে যায়, সরকার কি হতাহতদের ব্যাপারে উদাসীন নাকি ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন? এটি দেশের বহু মানুষের বড় জিজ্ঞাসা।  

বর্তমান সরকার জবাবদিহিমূলক নয় মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, করিডোর কিংবা বন্দর দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। এ সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ বা জনগণের সরকার। বর্তমান সরকারের আইনগত ও রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে হয়তো প্রশ্ন নেই। তবে এ সরকার কোনোভাবেই জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার নয়। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রাধিকার হতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর সংস্কার প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, এনবিআর সংস্কার নিয়ে তেমন কোনো দ্বিমত নেই। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা না করে তড়িঘড়ি করে সংস্কার শুরু করায় হিতে বিপরীত হয়েছে। নিয়মিত রাজস্ব আদায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে চলতি বছরের হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, এনডিএম কোনো ড্রয়িং রুমে জন্মগ্রহণ করেনি, আন্দোলনে সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঘাম সংগ্রাম ও বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে এ দল গঠিত হয়েছে। জনসেবা করাই আমাদের লক্ষ্য। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনেও রাজপথে থেকে ভূমিকা রেখেছে এনডিএমের নেতাকর্মীরা।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এনডিএম এর মহাসচিব মমিনুল আমিন, উচ্চ পরিষদ সদস্য পারভেজ খান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের নেতা রাশেদ খানসহ বিদেশি অতিথি ও দলটির নেতাকর্মীরা।

টিএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।