ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠনে বিএইচপির ১৫ রূপরেখা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৩
নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠনে বিএইচপির ১৫ রূপরেখা ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু ও সব দলের অংশগ্রহণমূলক করতে নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি)। এজন্য দলটির পক্ষ থেকে ১৫টি রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৩ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হলে সংবাদ সম্মেলন করে এসব রূপরেখা দেয় দলটির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিএইচপির মহাসচিব ড. সুফি সাগর সামস্ বলেন, দীর্ঘ ২২ বছরব্যাপী নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে জনগণ আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। ১৯৮৬ থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১০ বছর এবং ২০১২ থেকে এক যুগ ধরে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপির নেতৃত্বধীন জোট। বর্তমানে এই আন্দোলন সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। বিএনপি জোট দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। পক্ষান্তরে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট।

তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাশালী বড় দুটি জোটের এই অনড় অবস্থানের ফলে দেশ একটি কঠিন রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে নিপতিত হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি পর্যবেক্ষক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের কুটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার কোনো প্রস্তাব না থাকায় তাদের চেষ্টা-প্রচেষ্টা ব্যর্থতা ও তিক্ততায় রূপ নিয়েছে। এমতাবস্থায়, সংকট উত্তরণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংবিধানের ৪৮ (১) অনুচ্ছেদের অধীনে সকল দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্য থেকে ১১ জন প্রার্থীকে জাতীয় সংসদ এর সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত করে নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠন করা একান্ত আবশ্যক।

নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠনে তাদের ১৫ রূপরেখা হলো-

১. জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জনস্বার্থে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠন করা।

২. সংবিধানের ৪৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। একই বিধানের অধীনে জাতীয় সংসদের সদস্যরা নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের সদস্য পদে ১১ জনকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় গোপন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা।

৩. এই নির্বাচন উন্মুক্ত থাকবে। সবদলের মনোনীত প্রার্থীরা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।

৪. বিদ্যমান সংসদ মেয়াদপূর্তির ১৫ কার্যদিবস পূর্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের লক্ষে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দান করবেন। রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে এবং নির্বাচন সুসম্পন্ন করবে।

৫. জাতীয় সংসদ সচিবালয় মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করার জন্য যেভাবে সহযোগিতা করে থাকে, একইভাবে এই নির্বাচনকালীন সরকারের সদস্যদের নির্বাচিত করতে সংসদ সচিবালয় নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করবে।

৬. রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত এই ১১ জন সদস্যকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। শপথ বাক্য পাঠ করার পর এই ১১ জন সদস্য নির্বাচনকালীন সরকারের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে গোপনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে নিজেদের মধ্য থেকে নিজ নাম ব্যতীত অন্য একজনের নাম নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ভোটের মাধ্যমে প্রস্তাব করবেন। এই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতিকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে। এভাবে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদায় নির্বাচিত হবেন। এখানে সমসংখ্যক ভোট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভোটে বিজয়ী নির্ধারিত হবে। অতঃপর রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদায় নির্বাচিত সদস্যকে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য নির্দেশদান করবেন।

৭. এই পদ্ধতিতে গঠিত সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ হিসেবে রাষ্ট্রপতির অধীনে তিন মাস মেয়াদে ক্ষমতায় থাকবে এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। এ সময় তারা কোনো প্রকার নির্বাচনে প্রার্থী হতে কিংবা কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পরবেন না।

৮. নির্বাচনকালীন সরকারের সদস্যরা শপথ গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে বিদ্যমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষিত হবে।

৯. প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদায় নির্বাচিত সদস্য মন্ত্রীর পদমর্যাদায় নির্বাচিত অন্য ১০ সদস্যকে প্রয়োজনীয় মন্ত্রণালয়গুলো পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করবেন।

১০. নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের মূল কাজ হবে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক সার্বিক সহযোগিতা করা।

১১. নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীরা শপথগ্রহণ করে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং যথাযথভাবে অর্পিত দায়িত্ব প্রতিপালন করবেন।

১২. নির্বাচনকালীন সরকারের সদস্যরা তাদের দ্বারা নির্বাচিত জাতীয় সংসদ বিদ্যমান থাকাকালীন সময়ে জাতীয় সংসদের কোনো উপনির্বাচনে কিংবা স্থানীয় কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এই সময়ে তারা সেই সংসদ দ্বারা গঠিত সরকারের কোনো লাভজনক পদেও অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না।

১৩. সর্বদলীয় সরকার জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কার্যসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় কার্যসম্পাদন করবেন। বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো প্রকার চুক্তি কিংবা জাতীয় মৌলিক নীতিনির্ধারণী কোনো কার্যসম্পাদন করতে পারবেন না।

১৪. অজানা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ কিংবা কোনো অসৎ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে যদি নির্বাচনকালীন সরকার নির্দিষ্ট মেয়াদে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে ব্যর্থ হয়। এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় মেয়াদ বৃদ্ধি করবেন এবং যথানিয়মে নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন করবেন।

১৫. জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই নির্বাচনকালীন সরকারের বিলুপ্ত হবে।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএইচপির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মো. ফজলুল বারী, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইব্রাহীম খলিল বাদল, যুগ্ম মহাসচিব মকবুল হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক দ্বিজেন কুমার সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।