ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

রসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টিতে জোট, আওয়ামী লীগে স্নায়ুযুদ্ধ

আমিনুল ইসলাম জুয়েল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
রসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টিতে জোট, আওয়ামী লীগে স্নায়ুযুদ্ধ

রংপুর: রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনৈতিকভাবে ভোটের হিসাব নিকাশ পাল্টে যাচ্ছে। এবারে রংপুর সিটি নির্বাচনে মূলত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

এর মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শুরুতে দলীয় কোন্দল কাটিয়ে মাঠে নামলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সদ্য বহিষ্কৃত মেট্রোপলিটন কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন (হাতি প্রতীক) অংশ নিয়েছেন। তবে তার দাবি বিদ্রোহী নয়, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কিছু নেতার মৌন সমর্থন নিয়ে তিনি কাজ করছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা ভেদাভেদ ভুলে জোটবদ্ধ হয়ে ভোটের মাঠে কাজ করছেন।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন শুরুর আগে দলীয় সমর্থন পেতে অনেক প্রার্থীকে চড়াই উতরাই পাড় হতে হয়েছে। কারণ হিসেবে অনেকে মনে করছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতার চেয়ে প্রতীক মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

রংপুর জাতীয় পার্টির ঘাটি হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রার্থীর চেয়ে লাঙ্গল প্রতীকের ওপর মানুষের ভালোবাসা তুলনামূলক বেশি। দলীয় কোন্দলের কারণে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পরে বিরোধ মিটিয়ে তাকেই লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দেয় দলটি। এরপর থেকেই তিনি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার।

এদিকে জাতীয় পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তেমন একটা সুবিধা করতে পারবে না বলে মনে করছেন অনেকেই।

যদিও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করছেন। তার পরেও তাদের মাঝে একধরনের স্নায়ুযুদ্ধ লক্ষ্য করছেন ভোটাররা।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বললে তারা তাদের পূর্বের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে বলেন, দলীয় নেতাদের স্নায়ুযুদ্ধের কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অধিকাংশ ইউনিয়ন হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি জেলা পরিষদ নির্বাচনেও ভরাডুবি হয়েছে।

নেতাকর্মীদের ভেতরে স্নায়ুযুদ্ধের জন্য দলীয় হাইকমান্ডকে দায়ী করছেন অনেকে। এবারে রসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর মধ্যে অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু তাকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে অনেকে গোপনে বিরোধিতা করে আসছেন।

একাধিক ওয়ার্ডের ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাতীয় পার্টির কর্মীদের তৎপরতা দেখা গেলেও আওয়ামী লীগের কর্মীদের তেমন চোখে পড়ছে না। অনেক নেতা দায়সারা ভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

এদিকে বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তাদের ভোট নিয়েও হিসাব নিকাশ চলছে প্রার্থীদের মধ্যে। বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রার্থীর বিজয়ের ক্ষেত্রে ওই দুই দলের ভোট বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আগেও জাতীয় পার্টির মধ্যে বিরোধ ছিল না। এখনও নাই। আমরা মিলে মিশে কাজ করছি। আমরা ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। লাঙ্গল মার্কার জোয়ার কেউ ঠেকাতে পারবে না।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া একাধিক নির্বাচনী জনসভায় দাবি করেন, আওয়ামী লীগে কোনো বিরোধ নাই। আমরা সবাই মিলে নৌকার জন্য কাজ করছি। নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।  

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৭ ডিসেম্বর ২২৯টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।