ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মুক্তমত

দুর্গাপূজা: আনন্দম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৮
দুর্গাপূজা: আনন্দম দেবী দুর্গা

নীল আকাশে মেঘের খেলা, শিশির ভেজা স্নিগ্ধ প্রভাত, মন মাতানো শিউলি ফুলের সুভাস আর কাশবনে শরতের শেষ বাতাসের দোলা জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গা ঘরে আসছেন। তাই সবার অন্তরে এখন মায়ের আগমনীর সুর। ঘরে ঘরে চলছে দেবী দুর্গাকে বরণ করার আয়োজন।

বাঙালি হিন্দু সমাজে বিশেষ করে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, ত্রিপুরাসহ ভারতের অন্য রাজ্য এবং বিদেশে প্রবাসী বাঙালিরা বর্ণাঢ্য আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা করেন।

দুর্গা পৌরাণিক দেবতা।

তিনি আদ্যাশক্তি, মহামায়া মা, শিবানী, দশভুজা, সিংহবাহনা ইত্যাদি নামেও অভিহিত। দুর্গ বা দুর্গম নামক দৈত্যকে বধ করেন বলে তার নাম দুর্গা। আবার জীবের দুর্গতি নাশ করেন বলেও তাকে দুর্গা বলা হয়।  

হিন্দুশাস্ত্র মতে, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। দুর্গা পূজা মানেই সার্বজনীন উৎসব, দেবী দুর্গা আমাদের মধ্যে মাতৃরূপে বিরাজ করেন। তিনি সবার মা। মা সন্তানের সুরক্ষাদায়িনী, সব অপশক্তি বিনাশিনী, মুক্তিদায়িনী, আনন্দময়ী দুর্গা।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, মধ্যযুগেও বাংলা সাহিত্যে দুর্গাপূজার অস্তিত্ব ছিলো। তবে সার্বজনীন পূজা শুরু হয় ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর। এ সময় এককভাবে পূজা করাটা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে।  

এর ফলে ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে পূজা করার চল শুরু হয়। সনাতন ধর্মের অনুসারী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের পদচারণায়, তাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালায় পূজা এখন অন্যতম আকর্ষণ।  

আধুনিক দুর্গাপূজার প্রাথমিক ধাপ শুরু হয় ১৮শ’ শতকে। এ সময় নানা বাদ্যযন্ত্র প্রয়োগে ব্যক্তিগত- বিশেষ করে জমিদার, বড় ব্যবসায়ী, রাজ দরবারের কর্মচারীরা দুর্গাপূজা করতেন। তবে দুর্গাপূজা পারিবারিক, বারোয়ারি বা সার্বজনীন। এ কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এখন দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের যেসব শহরে বাঙালি হিন্দুদের বসবাস রয়েছে, সেখানে সবাই শরতে দুর্গাপূজা উদযাপন করেন। সবার মধ্যে আনন্দ উৎসব বিরাজ করে। রবি ঠাকুরের ভাষায়- 
‘আশ্বিনের মাঝামাঝি
উঠিল বাজনা বাজি,
পূজার সময় এলো কাছে।

মধু বিধু দুই ভাই
ছুটাছুটি করে তাই,
আনন্দে দু-হাত তুলি নাচে। ’

দুর্গাপূজার আনন্দ দ্বিগুণ হয় আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে। সার্বজনীন পূজাতে সবাই যাতে আনন্দ পায়, সেটাই কাম্য। ধর্ম সম্বন্ধে বলা হয়, ধর্ম মানুষে মানুষে বিভেদ রচনা করে। কিন্তু ধর্ম বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষকে পাশাপাশিও নিয়ে আসে।  

আজকের দিনে একটি ধর্মানুষ্ঠানের যে আয়োজন, তার যে প্রস্তুতি, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে যোগান ব্যবস্থা, তাকে ঘিরে যে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে, সেখানে নিয়োজিত থাকেন বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ। এভাবেই ধর্ম বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষকে পরস্পর নির্ভরশীল করে পাশাপাশি নিয়ে এসেছে।

ক’দিন পরেই শারদীয় দুর্গাপূজা। বাংলাদেশের প্রকৃতি, মধুর সামাজিক বন্ধন, সামাজিক বৈচিত্র্যের মধ্যে ভক্তিভাবে একাত্ম, দর্শন, প্রচলিত দেবদেবীর সমাবেশ ও পূজা চালচিত্র, ঢাঁক-ঢোল, কাসর, সঙ্গীত, অতিথি আপ্যায়ন, সাহিত্য সব নিয়েই শারদীয় দুর্গোৎসব।  

একটা পথ, মেঠো পথ- মিশে গেছে মানুষের মনে, মানুষের ধ্যানে। সম্প্রীতি ও মায়া ঘেরা এ পল্লিচিত্র যেন শিল্পীর তুলি ও কবির কলমের ধারা বর্ণনা। এখানে নগর পেরিয়ে শ্যামলিমা, এখানে প্রান্তরে প্রান্তরে পাখির কলকাকলী। এটি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার জয়কালী বাড়ি।

বোয়ালখালীতে দুর্গাপূজার আলাদা ঐতিহ্য আছে। সেই ঐতিহ্য ধারা এখনও বহন করে চলেছে বোয়ালখালীর জয়কালী বাড়ির লোকজন। ৫০ বা ৬০ দশক থেকে প্রতি বছর এখানে দুর্গাপূজা হয়। পূজামণ্ডপ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভাসে। খুশির বন্যায় নেচে ওঠে বিভিন্ন বয়সের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ, থাকে প্রতিযোগিতাও।

জয়কালী বাড়ি সার্বজনীন দুর্গোৎসব উদযাপনে প্রথম থেকে যাদের অবদান ছিলো তাদের মধ্যে স্বর্গীয় যামিনী রঞ্জন সেন, স্বর্গীয় ডাক্তার হরিনারায়ণ পারিয়াল, রবীন্দ্র নারায়ণ দাশ, মনিন্দ্র লাল চৌধুরী, পঞ্চানন চৌধুরী প্রমুখের অবদান অবিস্মরণীয়।  

এছাড়াও জায়গা দান করে যারা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে স্বর্গীয় মহেন্দ্র লাল দাশ, ষাইরা দাশ, বিধুভূষণ দাশ প্রমুখের অবদান উল্লেখযোগ্য।  

আর কয়েকদিন পরেই মন্দিরে মন্দিরে পুরোহিতের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে-

‘সর্ব মঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে
শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরি নারায়নী নমস্ততে। ’

...

 

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৮
আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।