ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

অফবিট

কুমামোটো দুর্গ পুনর্নির্মাণের মহাযজ্ঞ

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৮
কুমামোটো দুর্গ পুনর্নির্মাণের মহাযজ্ঞ দুর্গ পুনর্নির্মাণে ৬৩.৪ বিলিয়ন ইয়েন ব্যয়ে সুবিশাল প্রকল্পে সারা জাপান জুড়ে জনগণের সহায়তাও অব্যাহত রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

চার শতাব্দীর বোমাবর্ষণ ও আগুনও যে ক্ষতি করতে পারেনি, ২০১৬ সালের মারাত্মক ভূমিকম্প সে ক্ষতিই করেছিল জাপানের ঐতিহাসিক কুমামোটো দুর্গের। সেটি পুনর্নির্মাণে ৬৩.৪ বিলিয়ন ইয়েন ব্যয়ে সুবিশাল প্রকল্পের কাজ করছে জাপানি সরকার।

দ্বীপবেষ্টিত জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কিউশু শহরের ক‍ুমামোটো শহরতলীর পার্কে অবস্থিত দুর্গটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যুদ্ধ বিধ্বস্তের চিহ্ন বহন করেও টিকে রয়েছে। নির্মাণশৈলীর কারণেই ক্রমাগত ভূমিকম্পসহ আগ্নেয়াস্ত্র ও কামান গোলার আগুন প্রতিরোধ করে কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে।


 
জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র কুমামোটো দুর্গটি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল শহরটিতে সংঘটিত ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প। এতে দুর্গ দেয়াল বিধ্বস্ত ও ধূলিমলিন গাদায় পরিণত হয়। ছাদের টাইলস ও ফাউন্ডেশন ভেঙে যায় এবং দুর্গটির শোভা শচিহকো (বাঘের মাথার সঙ্গে যুক্ত লোক কাহিনীর প্রাণী ও একটি কচ্ছপের শরীর) ধসে পড়ে। টারেটস্‌ লোহা ও কারভিং পাথরের মুসা-গেশী প্রাচীর পড়ে যায়, স্থায়ী সিসমিক ক্ষতি হয় বৃহত্তম দুর্গ পরিখা টেনসুকাকুরও।
 
ধ্বংসস্তুপের কাছাকাছি পৌছে পুরো শহরটিও। ভূ-কম্পন ও ক্রমাগত আফটারশকে  শুধু ১ লাখ ৯০ হাজার ঘর, স্কুল ও অফিসই ধ্বংস হয়নি, ২২৫ জন নিহত ও ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হন।

প্রাচীন শহরটির প্রতীক হিসাবে ১৬০৭ সালে দুর্গটি নির্মাণ করেন দক্ষ সামরিক অভিযান চালিয়ে জাপানের পুনর্মিলনে অংশ নেওয়া সামন্ত প্রভু কিয়োমাসা কাটো। ১৯৬০ সালে কংক্রিটে পুনর্গঠন করা হয় এটি। তবে পাথরের অনেক দেয়ালই সপ্তদশ শতক থেকেই টিকে আছে।

দুর্গ দেয়াল বিধ্বস্ত ও ধূলিমলিন গাদায় পরিণত হয়েছে।  ছবি: সংগৃহীত১৮৭৭ সালে সাতসুমা বিদ্রোহীরা সামুরাই সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করে এটি অবরোধ করেছিলেন। সে সংঘাতে পুড়ে গিয়েছিল দুর্গটি।   তারপরও দৃঢ় হয়ে দাড়িয়েছিল দেয়ালগুলো।

দুর্গের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জনসাধারণের প্রদর্শনী বন্ধ  রেখেছেন।
 
কর্মকর্তারা আশা করছেন, এ মিশন শেষ পর্যন্ত শহরের সবচেয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক কাঠামোটির ফ্যাব্রিকে ফিরে আসবে। এ প্রকল্পের সমাপ্তি রক্ষণশীল নির্ভুলতার সঙ্গে পাথর প্রাচীরগুলোকে আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে আনবে ও চারপাশের মোড়ানো দেয়ালগুলোর মেরামত করে ঐতিহ্যের সম্মান দেখাবে। সব কাজ শেষ হলে জাপানের সবচেয়ে বিখ্যাত কেল্লাটিকে মৃত অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনবে।

স্থানীয় গাইড শোকো তানুগচি বলেন, ‘এই দুর্গ কুমামোটোর প্রতীক হলেও জাপানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আজ এটি যেন একটি কবরস্থান। আমি কল্পনাও করতে পারি না যে, এটিকে একসঙ্গে ফিরিয়ে আনা কতোটা জটিল হবে। হয়তো একদিন এর জাদু ফিরে আসবে’।

স্থানীয়দের অহঙ্কার ও ঐতিহ্য রক্ষায় জাপানের কঠোর পরিশ্রমের ফলে ৪৯টি টাওয়ার, ১৮টি গেটহাউস এবং ২৯টি দরজার শক্তিশালী কেল্লাটির এ বিশাল পুনর্বাসন প্রচেষ্টা এগিয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পনা অনুসারে প্রধান কাজগুলো নতুন বছর ২০১৮ সালে শুরু হবে। সারা জাপান জুড়ে জনগণের সহায়তাও অব্যাহত রয়েছে।

প্রাচীরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভয়াবহ ভূমিকম্পে।  ছবি: সংগৃহীতকুমামোটো দুর্গ রিসার্চ সেন্টারের সাংস্কৃতিক সম্পত্তি সুরক্ষা ব্যবস্থাপক আইসেই কানাদা বলেন, ‘ভূমিকম্পে একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা সুবিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই মেরামতে অনেক সময়, অর্থ, বিশেষ জ্ঞান, প্রযুক্তি ও জনশক্তি দরকার। অভ্যন্তরীণ সাংস্কৃতিক মূল্যের পাশাপাশি দর্শনীয় গন্তব্য হিসেবে এর গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা দ্রুততম, কিন্তু সবচেয়ে কার্যকর উপায়ে মেরামতের অগ্রগতির পরিকল্পনা করছি’।

‘খুব বেশি সময় লাগার আগেই দুর্গটি নতুনভাবে আবিষ্কৃত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হবে’।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৮
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।