ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অফবিট

জলবায়ু পরিবর্তনেই বিলুপ্ত হয় ম্যামথরা!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৬
জলবায়ু পরিবর্তনেই বিলুপ্ত হয় ম্যামথরা!

আজ থেকে ৩ হাজার ৭০০ বছর আগে বিলুপ্তির শিকার হয়ে পুরোপুরি হারিয়ে গেছে বৃহৎ আকারের হাতি ম্যামথ। এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকার বাসিন্দা ছিল আধুনিক হাতির পূর্বসুরী লম্বা, বাঁকানো শুঁড় ও দাঁত বিশিষ্ট লোমশ এই প্রাণীগুলো।


 
রেডিও কার্বন ডেটিং করে দেখা গেছে যে, প্লায়োসিন বা তুষার যুগ থেকে হলোসিন বা পুরাতন প্রস্তর যুগের মাঝামাঝি সময়কাল অর্থাৎ ৫০ লাখ বছর আগে থেকে ১ হাজার ৭০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল ম্যামথরা। শেষ ম্যামথ দলটিকে চড়ে বেড়াতে দেখা গেছে সুমেরু সাগরের দ্বীপ ব়্যাঙ্গেল আইল্যান্ডে, যা বর্তমানে রাশিয়ার মালিকানাধীন।

ম্যামথদের হঠাৎ বিলুপ্তির কারণ শত-শত বছর ধরে এক অমীমাংসিত রহস্য হয়েই ছিল। গত শতাব্দীজুড়ে এর অনেক কারণ নিয়ে গবেষণা হলেও বিজ্ঞানীরা দু’টির বিষয়ে মোটামুটি একমত ছিলেন।

প্রথমত, প্রায় একই সময়কালে বিশ্বজুড়ে মানুষের সম্প্রসারণ বড় প্রাণীগুলোর বিশ্বব্যাপী বিলুপ্তির কারণ ছিল। অথবা ইউরোপ ও এশিয়ার অংশবিশেষে জঙ্গল বাড়তে থাকার ফলে নাকি তৃণভোজী ম্যামথরা স্রেফ না খেতে পেয়ে মরে যায়৷
 
এ দু’টির মধ্যে মানুষের ব্যাপক শিকার ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমকেই বেশি দায়ী করা হচ্ছিলো। প্রথমটির সপক্ষে বলা হয়, প্রাগৈতিহাসিক সুবিশাল লোমশ ও দাঁতাল হস্তি ম্যামথরা প্রায় ১০ হাজার বছর আগে মানুষের অতিরিক্ত শিকারের ফলে লোপ পায়।

তবে গবেষণায় প্রমাণিত হয়, ম্যামথরা প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী হলেও মানুষের অক্ষর ও লিপি আবিষ্কারেরও অনেক পর পর্যন্ত বেঁচে ছিল তারা। শেষ তুষার যুগের আগে ইউরেশিয়া ও উত্তর আমেরিকার বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে ম্যামথদের বড়-বড় দল ঘুরে বেড়াতো। তারও অনেক পরে তাদের একটি দল বেঁচে ছিল ব়্যাঙ্গেল আইল্যান্ডে। মানব ইতিহাস তার অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে।

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে ব়্যাঙ্গেল আইল্যান্ড নিয়েও গবেষণা করেন। গবেষণায় জানা যায়, দ্বীপটি প্রায় ৯ হাজার বছর আগে পর্যন্ত একটি প্রাকৃতিক তুষার সেতুর মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ১২ হাজার বছর থেকে ৯ হাজার বছরের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সেতুটি উধাও হয়ে দ্বীপটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর ব়্যাঙ্গেল আইল্যান্ডে মানুষের পদার্পণ ঘটে ম্যামথরা বিলুপ্ত হবার প্রায় ১০০ বছর পরে।

ফলে ‘অতিরিক্ত শিকার’ বা ‘না খেতে পাওয়া’ তত্ত্ব প্রমাণিত না হওয়ায় তখন ধারণা করা হচ্ছিলো, শেষ ম্যামথরা কোনো নতুন রোগজীবাণু অথবা ভাইরাসের শিকার হয়েছে, নয়তো তারা কোনো একটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছে। নয়তো তাদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাদের জিনবৈচিত্র্যও কমে গেছে এবং তা থেকেই তাদের বিলুপ্তি ঘটেছে। কিন্তু সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ম্যামথের হাড় থেকে ডিএনএ নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, শেষ পর্যায়েও তাদের জিনবৈচিত্র্য একটুও কমেনি৷

তবে সর্বশেষ গবেষণার মাধ্যমে বেশির ভাগ জীববিজ্ঞানী এখন একমত যে, ম্যামথরা মানুষের নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়েছে৷ তাদের লোম দেখলেই বোঝা যায় যে, তারা তুষারের জীব। তুষার যুগের অবসানই তাদের বিলুপ্তির মূল কারণ।

জীববিজ্ঞানীরা এর সপক্ষে আরও বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এ প্রভাবেই এই গ্রহের এক কোটির ওপরে প্রজাতির প্রাণী এখন ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল জীবনযাপন করছে। অনেকের মতে, এ সংখ্যা সর্বমোট প্রায় পাঁচশ’ কোটি হবে। এসব প্রজাতির প্রায় ৯৯ শতাংশই বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হয়েছে। আরও নতুন-নতুন প্রজাতি প্রতি বছর বিলুপ্তির ঝুঁকির তালিকায় যোগ হচ্ছে। এমনকি পৃথিবীর অর্ধেক প্রজাতির প্রাণীরই চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, ‘বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে, কোথাও কোথাও তুষার যুগ ফিরে আসার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। তাই আমরা অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ের মধ্যে অনেক প্রজাতির বিশ্বব্যাপী বড় পতনের যুগে আছি। বিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে এ ধরনের অবস্থা পাঁচবার দেখা গেছে এবং আমরা এখন সেই পর্বের ষষ্ঠ পর্যায়ে আছি’।

‘যুগান্তকারী এ অবস্থা তুষার যুগের শেষ পর্যায়েও ঘটেছিলো বলেই হারিয়ে যায় ম্যামথদের মতো বড় শক্তিশালী প্রাণীরা’- বলছেন বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৬
এএসআর/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।