ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নাটোরে আমন ধান কাটা-মাড়াই উৎসবে মেতেছেন চাষিরা

মো. মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২২
নাটোরে আমন ধান কাটা-মাড়াই উৎসবে মেতেছেন চাষিরা

নাটোর: নাটোরে রোপা আমন ধান কাটা-মাড়াই উৎসবে মেতেছেন চাষিরা। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পুরোদমে চলছে ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ।

আবার অনেক জায়গাতেই বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে এখনও দোল খেতে দেখা যাচ্ছে সোনালী ধানে।

ধান কাটা-মাড়াইয়ে কৃষকের পাশাপাশি দিনমজুরদের মাঝেও বেড়েছে চরম ব্যস্ততা। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারে জেলায় ২ লাখ ৪২ হাজার ১৯৪ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। আর ধানের উৎপাদন ও মূল্য ভালো পাওয়ায় কৃষকরাও বেশ খুশি।

সরজমিনে বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও ধান কাটা মাড়াই চলছে। কেউ কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আবার কিছু মাঠে কেবল ধানের হলুদ বর্ণ ধরেছে। কৃষকরা বলছেন, স্থান ভেদে বিভিন্ন সময়ে চারা রোপণের কারণে এ অবস্থা। আর কৃষি বিভাগের মতে, সাধারণত বছরের জুন মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত রোপা আম ধান চাষাবাদের মৌসুম ধরা হয়। এ সময়ে আগে-পিছে যারা যে সময়ে চারা রোপণ করবেন, সেই অনুযায়ী ধান পরিপক্ক হবে।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় রোপা আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৭২ হাজার ৬৫৬ হেক্টর জমিতে এবং চাষাবাদ হয়েছে ৭৩ হাজার ৪৩৩ হেক্টরে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ১৯৪ মেট্রিক টন।

গত মৌসুমে (২০২১-২২) চাষাবাদের লক্ষামাত্রা ছিল ৬৭ হাজার ৭০০ হেক্টর, সেখানে অর্জিত হয় ৭২ হাজার ৬৩০ হেক্টর। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৯০ হাজার ৩৯২ মেট্রিক টন এবং উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬৬ মেট্রিক টন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ রোপা আমন ধান উৎপাদন হয়েছিল। এবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ ধান উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।

আরও জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার সদর উপজেলায় ১০ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এবং অর্জিত হয় ১০ হাজার ৭৮০ হেক্টর। নলডাঙ্গায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৬২৯ হেক্টর এবং অর্জিত হয় ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর। সিংড়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ হাজার ৪৯০ হেক্টর, অর্জিত হয় ২৩ হাজার ৫৭০ হেক্টর। গুরুদাসপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ০২ হেক্টর, অর্জিত হয় ৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর। বড়াইগ্রামে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৮১৫ হেক্টর, অর্জিত হয় ১৫ হাজার ৯২৩ হেক্টর। লালপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৮১০ হেক্টর, অর্জিত হয় ৭ হাজার ৯৭০ হেক্টর। বাগাতিপাড়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর এবং অর্জিত হয় ৫ হাজার ৪৬০ হেক্টর। এ বছর প্রতি হেক্টর আমন ধানের গড় ফলন হচ্ছে ৩ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন। আর প্রতি বিঘায় ফলন হচ্ছে ১১ মণ।

কৃষি বিভাগ জানায়, এবার জেলার সাত উপজেলায় হাইব্রিড জাত ৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর, উফশী জাত ৬৮ হাজার ৪৭ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের আমন ধান ৭৫৬ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।

কৃষকরা জানান, এবার বন্যার পানি ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ফসল চাষাবাদে কিছুটা বিপত্তি ঘটেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন কিছুটা কম হয়েছে। আর ধান কাটা মাড়াইয়ে খরচ বেশি পড়ছে। বাজারে ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা বা বন্যার পানি সময়মত পেলে ফসল চাষাবাদ আরও লাভজনক হতো। আমন ধান ঘরে তোলার পর এসব জমিতে আলু, শীতকালীন বিভিন্ন সবজিসহ বোরো ধান করবেন তারা।

নলডাঙ্গা উপজেলার বামুনগ্রাম গ্রামের কৃষক রিপন আলী জানান, তিনি এবার ৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষাবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় তার ফলন হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ মন। ধানের বাজারও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তবে শ্রমিক সংকট ও পারিশ্রমিক মুল্য বেশি পড়ছে।

বুড়িরভাগ গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী জানান, তিন বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন তিনি। কিন্তু বর্ষাকালীন আবাদ হলেও সেচ সুবিধায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। কৃষি শ্রমিকের সংকট থাকায় এবং তাদের মজুরি বেশি হওয়ায় তিনি নিজেই গত ৪ দিন ধরে ধান কাটছেন।

এছাড়া সিংড়া ও বড়াইগ্রাম ঘুরে অনেক কৃষকই এমন করছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় কৃষি শ্রমিক আলফাজুল, রাজু ও মোফাজ্জল হোসেন জানান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বেকায়দায় পড়েছেন। তাই এবার দুই বেলা খেয়ে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫৫০ টাকা দরে পারিশ্রমিক নিচ্ছেন।

ধান মাড়াই শ্রমিক সোহেল রানা জানান, প্রতি বিঘা জমির ধান মেশিনে মাড়াই করতে স্থান ভেদে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার ফৌজিয়া ফেরদৌস বাংলানিউজকে জানান, এবার আমন মৌসুমে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৬২৯ হেক্টর এবং অর্জিত হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর। প্রতি বিঘা জমিতে কৃষকরা ১৪ থেকে ১৫ মণ করে ফলন পাচ্ছেন। চাষাবাদের অনুকুল পরিবেশ থাকায় কৃষকরা ফসলে লাভবান হচ্ছেন। বাজারে ধানের দামও সন্তষজনক পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার উপজেলায় আমন ও বোরো দুই মৌসুমেই জিরাশাইল জাতের ধান আবাদ বেশি হয়। কেননা এই ধানের যেমন খাদ্য চাহিদা রয়েছে, তেমনি বাজার মূল্য অন্যান্য ধানের তুলনায় বেশি পাওয়া যায়। বর্তমানে এই মৌসুমে প্রতি মণ জিরাশাইল ধান ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বাংলানিউজকে জানান, আগাম জাতের আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষে কৃষকরা কোথাও শীতকালীন সবজি, কোথাও বোরো ধান আবাদ করবেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং কৃষি উপকরণ সহজলভ্য হওয়ায় কৃষকরা আগাম জাতের রোপা আমন চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে প্রতি বছর চাষাবাদেও পরিধিও বাড়ছে। আমন ধান কাটার পরে সবজি আবাদ করা ছাড়াও বোরোর খরচ যোগান দিতে এই রোপা আমন সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।