ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ৩৫ লাখ টাকা লুট, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২২
স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ৩৫ লাখ টাকা লুট, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ

কুমিল্লা: কুমিল্লার চান্দিনা বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মহাদেব চন্দ্র দেবনাথের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা লুট হওয়ার ঘটনায় পুলিশ মামলা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।  

মহাদেব চন্দ্র দেবনাথ জানান, তিনি ব্যবসার কাজে মাসে দুই-তিন বার রাজধানীর তাঁতীবাজারে গিয়ে স্বর্ণ কেনাবেচা করেন।

গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় তাঁতীবাজারে স্বর্ণ বিক্রি করে সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে সায়েদাবাদ জনপথ মোড় থেকে কুমিল্লাগামী বাসে ওঠেন তিনি। বাসটি সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানাধীন বাউশিয়া এলাকায় পৌঁছালে বাসের গতিরোধ করে একটি মাইক্রোবাস। এসময় ঢাকা মেট্রো-চ-১৯-৮৩৫৬ নম্বরের সাদা রংয়ের মাইক্রোবাসটি থেকে নেমে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশের পোশাক, হাতে ওয়াকিটকি নিয়ে বাসে ওঠেন আট-১০ জন। বাসে উঠে প্রথমেই চালক ও হেলপারকে ধমক দেন তারা। এরপর তারা টার্গেট করেন ব্যবসায়ী মহাদেব চন্দ্র দেবনাথ ও তার সঙ্গে থাকা কর্মচারী টুটুল সরকারকে। তারা বলেন, ‘আপনারা নামেন। ’ কেন নামবো, প্রশ্ন করতেই, গালাগাল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের বাস থেকে নামিয়ে মাইক্রোবাসে তোলা হয়। মাইক্রোবাসটি দাউদকান্দির গোমতী সেতু অতিক্রম করে দাউদকান্দি উপজেলাধীন শহীদ নগর এলাকার নির্জন স্থানে পৌঁছালে নামিয়ে দেওয়া হয় কর্মচারী টুটুল সরকারকে। সামনে ইউটার্ন নিয়ে আবার ঢাকার দিকে চলতে থাকে মাইক্রোবাসটি। দাউদকান্দি টোল প্লাজা অতিক্রম করে ব্যবসায়ী মহাদেব চন্দ্র দেবনাথের চোখ বেঁধে তার সঙ্গে থাকা নগদ ৩৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা লুটে নেন তারা। পরে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার বাউশিয়া এলাকায় মাইক্রোবাস থামিয়ে তাকে ফেলে দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, তিনি (মহাদেব দেবনাথ) পরে পার্শ্ববর্তী একটি ফিলিং স্টেশনে গিয়ে এক ব্যক্তির সাহায্য নিয়ে রাতেই চান্দিনায় ফেরেন। পরদিন দাউদকান্দি টোল প্লাজায় গিয়ে ওই মাইক্রোবাসের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে গজারিয়া থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন তিনি। ভিডিও ফুটেজসহ থানায় গিয়ে অভিযোগ করার পর পুলিশ তাদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে দাউদকান্দি টোল প্লাজায় গিয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে। এসময় গজারিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোক্তার হোসেন এবং উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূরুল হুদা তাদের (ভিকটিম) বলেন, ‘ঘটনার ক্লু পাওয়া গেছে, আমরা আরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। আপনারা এখন চান্দিনায় চলে যান, খবর দিলে আসবেন। ’
পরদিন ৩ নভেম্বর যাওয়ার পর ‘কাল’ আসবেন। ৪ নভেম্বর গেলে আবার একই বক্তব্য। ৫ নভেম্বর গেলে গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) ভিন্ন বক্তব্য। ক্ষুব্ধ হয়ে খোদ ব্যবসায়ীকেই দোষারোপ করে বলেন, ‘তোরা নিজেরাই আত্মসাৎ করে অভিনয় করছিস, যা এখান থেকে....!’ এমন দুব্যর্বহারে বাধ্য হয়ে থানা থেকে ফিরে যান তিনি।  

এদিকে ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরও আইনি কোনো সহায়তা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই ব্যবসায়ী।

গজারিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোক্তার হোসেন জানান, ঘটনাটি তদন্ত করেছি। মাইক্রোবাসের মালিক চিহ্নিত করেছি। ওই মাইক্রোবাসের মালিকপক্ষ ভালো মানুষ। ঘটনার সঙ্গে কর্মচারীর কোনো যোগসাজশ আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে।
এ ব্যাপারে গজারিয়া থানার ওসি মোল্লা সোহেব আলী বলেন, আমরা অভিযোগকারী ব্যক্তিকে নিয়ে দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকায় গিয়েছি। তিনি আমাদের সঠিক লোকেশন দেখাতে পারেননি। সন্ধ্যার সময় টাকা লুট ও অভিযোগকারী আমাদের সঠিক স্থান দেখাতে না পারার ঘটনাটি সন্দেহের উদ্রেক করে। আমরা একেবারে অস্বীকার করছি না যে এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে এতো টাকা নিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ওঠাও তো ঠিক না। আমরা বিষয়টি আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করব।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।